প্রধানমন্ত্রী কীভাবে পুলিশ বাহিনীকে বদলে দিয়েছেন, জানালেন আইজিপি

প্রকাশিতঃ 10:51 am | September 18, 2018

বিশেষ প্রতিবেদক, কালের আলো :
বঙ্গবন্ধু কন্যা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুলিশের বিভাগীয় ও পেশাগত স্পন্দন অনুভব করেন বলেই বিশ্বাস করেন পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড.মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বিপিএম (বার)। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের টানা দুই মেয়াদে পুলিশ বাহিনীতে রেকর্ড পরিমাণ যে উন্নয়ন হয়েছে তা স্বাধীনতার পর রীতিমতো বিরল।

উন্নয়নের ছোঁয়ায় পুলিশ বাহিনীকে কীভাবে বদলে দিয়েছেন সরকার প্রধান শেখ হাসিনা, সেই গল্পই উচ্চারণ করলেন পুলিশ প্রধান। প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আপনার প্রাজ্ঞ, দূরদর্শী ও গতিশীল নেতৃত্বে পরিচালিত বর্তমান সরকার সব সময় বাংলাদেশ পুলিশের প্রতি সবিশেষ সংবেদনশীলতা প্রদর্শন করে আসছে।

আমরা বিশ্বাস করি আপনি আমাদের বিভাগীয় ও পেশাগত স্পন্দন অনুভব করতে পেরেছেন বলেই বাংলাদেশ পুলিশকে গতানুগতিকতার উর্ধ্বে ওঠে একটি আধুনিক, প্রযুক্তি নির্ভর, দক্ষ ও জনবান্ধব প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষে প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন।’

রোববার (১৬ সেপ্টেম্বর) গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রংপুর ও গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ ইউনিটের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতেই পুলিশ বাহিনীর উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রার এসব চিত্র তুলে ধরেন আইজিপি।

দেশের শান্তি, নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলার প্রতীক বিবেচনা করা হয় পুলিশকে। গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা রক্ষা এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠায় পুলিশের আন্তরিকতা, কর্মদক্ষতা ও পেশাদারিত্বের জন্য সব সময়ই প্রধানমন্ত্রী ও দেশবাসীর প্রশংসা পেয়েছে পুলিশ। পুলিশের ক্রমাগত উন্নয়নের সেই তথ্য তুলে ধরে আইজিপি ড.মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বলেন, ‘আইজিপি র‌্যাঙ্ক ব্যাচ উন্নীত করেছেন। বাংলাদেশ পুলিশের জনবল বৃদ্ধিসহ আপনার দূরদর্শী নির্দেশনায় গঠিত হয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন, টুরিস্ট পুলিশ, নৌ পুলিশ, এন্টি টেরোরিজম ইউনিট, ইন্ডাষ্ট্রিয়াল পুলিশসহ বেশ কয়েকটি বিশেষায়িত পুলিশ ইউনিট।

বাংলাদেশ পুলিশকে স্বাধীনতা পদকে ভূষিত করেছেন। সাব ইন্সপেক্টর সার্জেন্টদের তৃতীয় শ্রেণি থেকে দ্বিতীয় শ্রেণি এবং ইন্সপেক্টর দ্বিতীয় শ্রেণি থেকে প্রথম শ্রেণিতে উন্নীত করা হয়েছে। এছাড়াও বাংলাদেশ পুলিশের বাজেট বৃদ্ধি, উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় গাড়ি ক্রয়, আবাসন বৃদ্ধি ও বেতন দ্বিগুণসহ নানাবিধ সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করেছেন। এসকল সম্ভব হয়েছে আপনার ব্যক্তিগত উদ্যোগ, মমত্ব ও আন্তরিকতার জন্য। আপনার নিকট আমরা গভীরভাবে কৃতজ্ঞ, বলেন বাহিনীর প্রধান।

বিশ্বায়নের এই যুগে পুলিশের কর্মক্ষেত্র ক্রমাগত বিস্তৃত হচ্ছে, এই কথাটি স্মরণ করিয়ে দিয়ে আইজিপি বলেন, ‘সনাতন অপরাধ দমনের পাশাপাশি সাইবার ক্রাইম, মানি লন্ডারিং, মাদক পাচার রোধ, এমনকি বনজ ও জলজ সম্পদ রক্ষা এবং পরিবেশ সংরক্ষণেও আমরা কাজ করে যাচ্ছি। এসব বহুমুখী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় জনসম্পৃক্ততার কোন বিকল্প নেই।

তাই আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিডি পুলিশ হেল্প লাইন অ্যাপস চালু করা হয়েছে। ক্রাইম ডেটা ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম, সিটিজেন ইনরফরমেশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (সিআইমেস), অনলাইন পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সেবা, জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ ইত্যাদি চালুর মাধ্যমে জনগণের দৌরগোড়ায় পুলিশী সেবা পৌছে দিচ্ছি।

এর মাধ্যমে তথ্য বিনিময় ও অপরাধ নিয়ন্ত্রণে জনগণের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগের পথ যেমন সুগম হয়েছে তেমনি পুলিশের জবাবদিহিতাও বহুলাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে।’

প্রতিটি পুলিশ সদস্য অসহায় ও বিপন্ন মানুষের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবেন এবং নিষ্ঠার সঙ্গে নিজেদের দায়িত্ব পালন করবেন এমন আকাঙ্খার কথাও উচ্চারিত হয় আইজিপি’র কন্ঠে। বলতে থাকেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি অসহায় ও বিপদগ্রস্ত মানুষকে সহায়তা করা যেমন আমাদের পেশাগত দায়িত্ব। তেমনি মানুষ হিসেবে আমাদের নৈতিক দায়িত্ব বটে। বাংলাদেশ পুলিশের প্রত্যেকটি সদস্য মানুষের প্রতি মানবিক আচরণ ও সহানুভূতি নিয়ে কাজ করে জনগণের আস্থা অর্জন করবে। সমৃদ্ধ ও নিরাপদ বাংলাদেশ বিনির্মাণে কাজ করবে এই আমাদের অঙ্গীকার।’

শুধু পুলিশ বাহিনীকে বদলে দেওয়ার ক্ষেত্রেই নন, দেশের শান্তি ও স্থিতিশীলতা ধরে রাখতেও প্রধানমন্ত্রী অতুলনীয় এমন বিষয়াদিও ওঠে আসে আইজিপি’র বক্তব্যে। দৃঢ়তার সঙ্গে তিনি বলেন, ‘দেশের মাটিতে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে সফলতা, সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, ভোটাধিকার রক্ষায় সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন নিশ্চিত ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় আপনার ভূমিকা অগ্রগণ্য। দেশবাসীর প্রত্যাশা অনুযায়ী আপনার সরকার মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবীত একটি সুখী সমৃদ্ধ ও নিরাপদ বাংলাদেশ বিনির্মাণে বিগত বছরগুলোতে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে।

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণের মাধ্যমে মহাকাশেও আমাদের যাত্রা শুরু হয়েছে। উন্নয়নের সব মাপকাঠিতে বিশ্বে আমাদের অবস্থান ক্রমাগত দৃঢ়তর হচ্ছে। বাংলাদেশ আজ এলডিসি থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার গৌরব লাভ করেছে। জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে এ এক অনন্য অর্জন। বাংলাদেশ পুলিশের প্রতিটি সদস্য এতে গর্বিত ও আনন্দিত।’

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং তার পরে ‘ধ্বংসাত্মক রাজনৈতিক কর্মকান্ড’ দমনে পুলিশের ভূমিকার কথাও উপস্থাপন করেন ড.মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী। বলেন, ‘দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ও মানবাধিকার রক্ষায় নিরিবচ্ছিন্নভাবে দায়িত্ব পালন করছে পুলিশের প্রত্যেক সদস্য। বিগত সময় মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী, জনবিচ্ছিন্ন, সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী ও তাদের সহচর জঙ্গিবাদের পৃষ্ঠপোষণকারী নিরীহ মানুষ ও বিদেশীদের হত্যা করে দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টায় লিপ্ত হয়েছিল।

কিন্তু বাংলাদেশ পুলিশের দক্ষতা, পেশাদারিত্ব ও সাহসিকতা দেশ, জাতি ও রাষ্ট্র বিরোধী সকল অপতৎপরতা নসাৎ করে দিয়েছে। আমাদের নির্ভীক পুলিশ সদস্যগণ নিজের প্রাণের বিনিময়ে হাজারো নিরীহ মানুষের জীবন রক্ষা করেছে। জঙ্গি ও সন্ত্রাস দমনে বৈশ্বিক এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বাংলাদেশ পুলিশের ভূমিকা যেমন জনমানুষের প্রশংসা ও ভালোবাসায় সিক্ত হয়েছে তেমনি আন্তর্জাতিক অঙ্গণেও ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছে। জঙ্গি ও সন্ত্রাস দমনে বাংলাদেশ পুলিশ এখন বিশ্বের রোল মডেল।

কালের আলো/এএ

Print Friendly, PDF & Email