সেনাপ্রধানের সঙ্গে চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সাক্ষাৎ, ভবিষ্যত সহযোগিতার অগ্রযাত্রায় নতুন মাত্রা

প্রকাশিতঃ 11:50 pm | April 27, 2021

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো :

প্রায় ১৫ মাস আগে দু’জনের মধ্যকার সাক্ষাত পর্বে বাংলাদেশ ও চীনের সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যকার সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে একমত হয়েছিলেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ড.আজিজ আহমেদ ও চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেনারেল ওয়েই ফেঙ্গহি। 

দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের অংশ হিসেবেই সেনাপ্রধানের ওইবারের চীন সফরের ধারাবাহিকতায় এবার একদিনের রাষ্ট্রীয় সফরে ঢাকায় এসেছেন জেনারেল ওয়েই ফেঙ্গহি। বৈঠক করেছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ড.আজিজ আহমেদের সঈে। 

মঙ্গলবার (২৭ এপ্রিল) ঢাকায় সেনাবাহিনী সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত সাক্ষাতে তাঁরা পারস্পরিক কুশলাদি বিনিময় ছাড়াও দু’দেশের সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে বিদ্যমান সুসম্পর্ক বজায় ও ভবিষ্যৎ অগ্রযাত্রায় পারস্পরিক সহযোগিতার বিভিন্ন বিষয়েও আলোচনা করেন। একাধিক সূত্র কালের আলোকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। 

জেনারেল ফেঙ্গহি বাংলাদেশের সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদকে চলমান করোনা মহামারি নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর সঙ্গে চীনের অভিজ্ঞতা বিনিময় ও সহায়তার প্রস্তাব দেন। 

একই সঙ্গে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানেও বাংলাদেশকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতির কথা তুলে ধরেন তিনি। বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা সহযোগিতার গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর বাংলাদেশ সফর এসব কারণেই বেশ গুরুত্বপূর্ণ হিসেবেই বিবেচনা করছেন পর্যবেক্ষক মহল। 

তাদের ভাষ্য হচ্ছে, করোনার কঠিন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের জীবনের সুরক্ষায় টিকা পাওয়ার আলোচনা শুরুর পরপরই দেশটির পক্ষ থেকে উচ্চপর্যায়ের বাংলাদেশ সফর অনেক তাৎপর্যপূর্ণ। বাংলাদেশের সেনাপ্রধানও নিজেদের মধ্যকার আলোচনায় কোভিড-১৯ মহামারি মোকাবেলা চীনের সহযোগিতার বিষয়ে দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়েছেন।

যেসব বিষয়ে সেনাপ্রধানের সঙ্গে চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর আলোচনা 
২০১৮ সালের ১৯ মার্চ চীনের কংগ্রেসে জেনারেল ওয়েই ফেঙ্গহি জাতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার পর এটিই তাঁর প্রথম বাংলাদেশ সফর। চীনের এই স্টেট কাউন্সিলর ২০ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

সূত্র জানায়, বাংলাদেশের সেনাপ্রধান জেনারেল ড.আজিজ আহমেদ তাঁর সঙ্গে মঙ্গলবারের (২৭ এপ্রিল) দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় গুরুত্ব দিয়েছেন দু’দেশের পারস্পরিক সম্পর্কোন্নয়নের বিষয়টিকে। পাশাপাশি সামরিক প্রশিক্ষণ বিনিময়, সশস্ত্র বাহিনী পর্যায়ে নিয়মিত মতবিনিময় অব্যাহত রাখারও প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি।

চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তি উপলক্ষে শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করেন। তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীতে তাঁর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। জেনারেল ওয়েই ফেঙ্গহি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে অর্জিত বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রার ভূয়সী প্রশংসা করেন।

একই সূত্র মতে, দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী বাংলাদেশ-চীনের সুসম্পর্কের গভীরতা ও ব্যাপ্তিতে সন্তোষ প্রকাশ করে ভবিষ্যতে এই সম্পর্ককে আরো উচ্চতর পর্যায়ে নিয়ে যেতে দৃঢ় প্রত্যয়ের কথা জানান। তিনি বাংলাদেশের ভিশন-২০৪১ অর্জনে চীনের সহযোগিতার নিশ্চয়তা প্রদান করেন। এছাড়া প্রতিরক্ষা সহযোগিতা, যৌথ প্রশিক্ষণ কার্যক্রম প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বৃদ্ধি ইত্যাদি ক্ষেত্রে বাংলাদেশ-চীন সহযোগিতা বৃদ্ধির গুরুত্বারোপ করেন।

সবার সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে বদ্ধপরিকর বাংলাদেশ
চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেনারেল ওয়েই ফেঙ্গহির সঙ্গে আলোচনায় বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতির কথাই গুরুত্বের সঙ্গে উচ্চারণ করেছেন সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ। 

এই তথ্য নিশ্চিত করে সূত্রটি বলছে, সেনাপ্রধান বলেছেন, ‘বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতিই হচ্ছে ‘সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারও সাথে বৈরিতা নয়’। বাংলাদেশ সকলের সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে সদা বদ্ধপরিকর।

রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে চীন
সূত্র জানায়, প্রায় দেড় বছর আগে চীন সফরকালে দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেনারেল ওয়েই ফেঙ্গহির সঙ্গে বৈঠকে বাংলাদেশের সেনাপ্রধান জেনারেল ড.আজিজ রোহিঙ্গা সমস্যা নিরসনে চীনকে তাদের বন্ধুপ্রতীম মায়ানমার সেনা নায়কদের প্রতি রোহিঙ্গা সমস্যার আশু সমাধানে কার্যকর ভুমিকা রাখতে ওয়েই ফেঙ্গহির প্রতি অনুরোধ জানিয়েছিলেন। 

তাঁরই ধারাবহিকতায় মঙ্গলবারের (২৭ এপ্রিল) বৈঠকেও চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশের আকাঙ্খার প্রতি গভীর শ্রদ্ধার কথা জানিয়েছেন। এই বিষয়ে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা অব্যাহত রাখার কথাও বলেছেন বাংলাদেশের সেনাপ্রধানকে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের। 

জেনারেল ওয়েই ফেঙ্গহি পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে যথাসম্ভব দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রত্যাবর্তন কার্যক্রম শুরুর ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করেছেন। এক্ষেত্রে চীনের সহযোগিতারও নিশ্চয়তা প্রদান করেন।

এ সময় সেনাবাহিনীর কোয়ার্টার মাস্টার জেনারেল (কিউএমজি) লেফটেন্যান্ট জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ, চিফ অব জেনারেল স্টাফ (সিজিএস) লেফটেন্যান্ট জেনারেল আতাউল হাকিম সারওয়ার হাসান, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও-এএফডি) লেফটেন্যান্ট জেনারেল ওয়াকার উজ জামানসহ  সেনাবাহিনীর মাস্টার জেনারেল অফ অর্ডন্যান্সসহ অন্যান্য জেনারেলরাও উপস্থিত ছিলেন।

শিখা অনির্বাণে পুস্পস্তবক অর্পণ, বীর শহীদের স্মরণ 
মঙ্গলবার (২৭ এপ্রিল) সকালে ঢাকায় এসে পৌঁছান চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওয়েই ফেঙ্গহি। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বিমানবন্দরে তাকে অভ্যর্থনা জানান। বিমানবন্দর থেকে সরাসরি চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে এসে বঙ্গবন্ধু জাদুঘর পরিদর্শন এবং ভিজিটরস বুকে স্বাক্ষর করেন।

পরে তাঁর নেতৃত্বে নেতৃত্বে চীনা সশস্ত্র বাহিনীর প্রতিনিধি দলটি সেনাবাহিনী প্রধানের সঙ্গে সাক্ষাতের আগে ঢাকা সেনানিবাসস্থ শিখা অনির্বাণে পুস্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে শাহাদৎ বরণকারী বীর শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

কালের আলো/এমএএএমকে