প্রতিটি উপজেলায় ফায়ার স্টেশন স্থাপিত হবে: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

প্রকাশিতঃ 3:42 pm | November 19, 2020

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

২০২১ সাল নাগাদ আরও ১২৯টি নতুন ফায়ার স্টেশন স্থাপন করা হবে। এর মধ্য দিয়ে ফায়ার স্টেশনের সংখ্যা দাঁড়াবে ৫৬৫টি। এছাড়া আরও ১১টি আধুনিক মডেল ফায়ার স্টেশন স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।

তিনি বলেন, ফায়ার সার্ভিসের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য সরকার প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে। এর অংশ হিসেবে পর্যায়ক্রমে প্রত্যেক উপজেলায় ফায়ার স্টেশন স্থাপনের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার (১৯ নভেম্বর) ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ‘ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সপ্তাহ-২০২০’ উদ্বোধনকালে তিনি এসব কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা বিভাগের সচিব শহিদুজ্জামান, ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক(ডিজি) মো: সাজ্জাদ হোসাইন উপস্থিত ছিলেন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘ফায়ার সার্ভিসের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য সরকার প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে। এর অংশ হিসেবে প্রতি উপজেলায় ফায়ার স্টেশন স্থাপনের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতি উপজেলায় ফায়ার স্টেশন স্থাপনের নির্দেশনা দিয়েছেন। যা পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।’

নতুন ফায়ার স্টেশন স্থাপন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত দেশজুড়ে স্থাপিত ৪৩৬টির পাশাপাশি আরও ১২৯টি নতুন ফায়ার স্টেশন স্থাপন করা হবে। এর ফলে ফায়ার স্টেশনের সংখ্যা দাঁড়াবে ৫৬৫টি। আরও ১১টি আধুনিক মডেল ফায়ার স্টেশন স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের। ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের উন্নত প্রশিক্ষণের জন্য বঙ্গবন্ধু ফায়ার একাডেমি স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এটি চালু হলে আমাদের কর্মীদের দেশেই উন্নত প্রশিক্ষণ দেওয়া সম্ভব। শুধু তাই নয়, বিদেশ থেকেও লোকজন এসে এখানে প্রশিক্ষণ নিতে পারবেন, এখানে সেই ক্যাপাসিটি থাকবে।’

ফায়ার সার্ভিসের জনবল বৃদ্ধিতে সরকার কাজ করে যাচ্ছে উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার আগে ফায়ার সার্ভিসের জনবল ছিল ছয় হাজার ১৭৫ জন। বর্তমানে জনবলের সংখ্যা ১৩ হাজার ১০০ জন। এই জনবল ২৫ হাজারের অধিক করার জন্য অর্গানোগ্রামের কাজ চলছে। তাছাড়া একসময় ফায়ার সার্ভিসের নয় তলা পর্যন্ত অগ্নি নির্বাপণের সক্ষমতা ছিল। বর্তমানে সেই সক্ষমতা ২০ তলা পর্যন্ত।’ আগামী বছর ২২ তলা পর্যন্ত সক্ষমতা অর্জন হবে বলেও জানান তিনি।

ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক(ডিজি) মো: সাজ্জাদ হোসাইন বলেন, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স মানবসৃষ্ট কিংবা প্রাকৃতিক যেকোনো দুর্যোগ দুর্ঘটনায় প্রথম সাড়াদানকারী হিসেবে রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃত একটি প্রতিষ্ঠান। প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও অধিদপ্তরের সেবাকাজের সঙ্গে জনসাধারণের সম্পৃক্ততা নিশ্চিতকরণ এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে দেশব্যাপী ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সপ্তাহ পালনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সবার আন্তরিক প্রচেষ্টায় এ উপলক্ষ্যে গৃহীত সকল কর্মসূচি বাস্তবায়নের মাধ্যমে সপ্তাহ পালনের মূল লক্ষ্য পূরণ হবে বলে আমি আশা করি।

তিনি বলেন, এ বছর হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ। বাঙালি জাতি এ বছরকে তাই সগৌরবে মুজিববর্ষ হিসেবে উদযাপন করছে। ফায়ার সার্ভিস অধিদপ্তর থেকে আমরাও “মুজিব বর্ষের প্রতিশ্রুতি; সেবা, ত্যাগ ও অগ্রগতি” প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে নানা কর্মসুচি পালন করছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সুযোগ্য নেতৃতে এবং সকলের দায়িতৃশীল ভূমিকা পালনের মাধ্যমে বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা বাস্তবায়িত হবে বলে আমি দৃঢ়ভাবে আশা প্রকাশ করছি।

ফায়ার সার্ভিস ডিজি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের সেবার মান আধুনিক ও গণমুখী করার লক্ষ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত প্রতিটি উপজেলায় একটি করে ফায়ার স্টেশন নির্মাণের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। আধুনিক ও উন্নত প্রযুক্তিসমৃদ্ধ উদ্ধার এবং অগ্নিনির্বাপণী সরঞ্জাম সংগ্রহ করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, বিশ্বমানের প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে একটি সর্বাধুনিক ফায়ার একাডেমি প্রতিষ্ঠার জন্য মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ায় প্রায় ১০০ একর জায়গা অধিগ্রহণ করা হচ্ছে, যা “বঙ্গবন্ধু ফায়ার একাডেমি হিসেবে বিশ্বে পরিচিত হবে এবং দেশীয় ও আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদেরকে আধুনিক ও সময়োপযোগী প্রশিক্ষণে প্রশিক্ষিত করে চৌকস অগ্নিযোদ্ধা হিসেবে গড়ে তুলবে । অগ্নি প্রতিরোধ ব্যবস্থা জোরদার করতে শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে অগ্নিনিরাপত্তা বিষয়ক প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। দুর্যোগ-দুর্ঘটনায় ফায়ার সার্ভিসের নিরবচ্ছিন্ন সেবা নিশ্চিত করতে ‘ক্রাউড কনট্রোল টিম’ গঠন করা হয়েছে।

এদিকে ‘প্রশিক্ষণ পরিকল্পনা প্রস্তুতি; দুর্যোগ মোকাবিলায় আনবে গতি’ প্রতিপাদ্য নিয়ে দেশব্যাপী সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বৃহস্পতিবার থেকে সারা দেশে শুরু হয়েছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সপ্তাহ-২০২০। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে ২১ নভেম্বর পর্যন্ত এই সপ্তাহ উদযাপিত হবে।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতর বলছে, এবারের সপ্তাহ পালনের মূল লক্ষ্য জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করা এবং ফায়ার সার্ভিসের কার্যক্রমে তাদের সম্পৃক্ত করা। এ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের লক্ষ্যে তিন দিনব্যাপী সারা দেশে নানা ধরনের কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হবে।

কালের আলো/এসবি/এমএম

Print Friendly, PDF & Email