কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং যুবশক্তির সদ্ব্যবহার
প্রকাশিতঃ 10:01 am | August 13, 2020

ড. মিল্টন বিশ্বাস :
১২ আগস্ট আন্তর্জাতিক যুব দিবস। তারুণ্যের বিকাশ ও উন্নয়নে ১৯৯৮ সালে পর্তুগালের রাজধানী লিসবনে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের ‘ওয়ার্ল্ড কনফারেন্স অব মিনিস্টার রেসপন্সিবল ফর ইয়ুথ’ ১২ আগস্টকে ‘আন্তর্জাতিক যুব দিবস’ হিসেবে পালনের প্রস্তাব করে। পরের বছর ১৯৯৯ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে দিনটিকে আন্তর্জাতিক যুব দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সেই থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দিনটি পালন করা হচ্ছে। জাতিসংঘ তরুণদের গুরুত্ব উপলব্ধি করেই যুব উন্নয়নের বিষয়ে এখন অধিকতর মনোযোগী।
ইন্টারনেট থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুসারে জাতিসংঘের হিসাবে, পৃথিবীতে ১০-২৪ বছর বয়সী ২০০ কোটি মানুষ রয়েছে যারা তরুণ এবং মোট জনসংখ্যার চারভাগের এক ভাগ। বাংলাদেশের জাতীয় যুবনীতি অনুসারে ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সীদের ‘যুব’বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। এ হিসেবে মোট জনসংখ্যার এক তৃতীয়াংশই যুব জনতা। আন্তর্জাতিক যুব দিবস ২০২০ সালের প্রতিপাদ্য হলো- ‘বৈশ্বিক কর্মে যুবশক্তি’। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও উদযাপিত হচ্ছে দিবসটি।
করোনা মহামারির মধ্যে যুব সমাজের জন্য নিরাপদ জায়গার খুব বেশি প্রয়োজন আজ। একক কিংবা যৌথ প্রচেষ্টায় সে যখন কাজ করছে অর্থাৎ লেখাপড়া করছে কিংবা খেলাধুলায় অংশ নিচ্ছে তখন তাকে সুরক্ষা দিতে হবে। তার যা কিছু সামাজিক-সাংস্কৃতিক অধিকার তা পূরণ করতে হবে। মর্যাদাকে সমুন্নত রাখার জন্য তার কাজের যথাযথ মূল্যায়ন করা প্রয়োজন। তারা যেন নিজের মতামত ব্যক্ত করতে পারে, তারা যদি প্রত্যন্ত অঞ্চল কিংবা পাহাড়ে বাস করে তাহলেও তাদের মানবাধিকার যেন বজায় থাকে সেদিকে নজর দিতে হবে। অবশ্য এই একবিংশ শতাব্দীতে যুবসমাজ অনেক পাল্টে গেছে।
বর্তমান যুবসমাজকে বলা হয় ডিজিটাল তরুণসমাজ। ফেসবুক ও ইউটিউব নির্ভরশীল এই জনগোষ্ঠী লেখাপড়া কিংবা চাকরির বাইরে চব্বিশ ঘণ্টার বেশিরভাগ সময়ই ব্যয় করে থাকে মোবাইল কিংবা ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে। ফলে আমরা যে ধর্মীয় উগ্রবাদিতা কিংবা মাদকাসক্তি থেকে তাদের রক্ষার জন্য প্রচেষ্টা চালাচ্ছি সেখানে সাংস্কৃতিক জাগরণের গুরুত্ব এখনো প্রতিষ্ঠিত হয়নি। অথচ অতীতে এদেশের তরুণরাই জাতীয় জীবনে সবচেয়ে বেশি প্রভাব রেখে গেছেন। সূর্যসেন-প্রীতিলতার ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে বঙ্গবন্ধু’র নেতৃত্বের জয়গান কিংবা বায়ান্ন’র ভাষা আন্দোলন, বাষট্টি’র শিক্ষা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ, নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে এদেশের যুব সমাজের। অবশ্য একথা ঠিক ১৯৭১ সালে তরুণরা যুদ্ধ করেছিলেন দেশের বাইরের শক্তি পাকিস্তানের সঙ্গে। কিন্তু বর্তমানের যুবসমাজ দেশের ভেতরে অর্থাৎ ঘরের ভেতরের শত্রুর সঙ্গে যুদ্ধ করছে। বাংলাদেশের ভেতর এমন কতকগুলো সংগঠন রয়েছে যারা বাঙালি এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে না এবং যারা ধারণ করে তাদেরকে দমন বা হত্যা করার চেষ্টা করে।
২০১৬ সালের ১ জুলাইয়ের হলি আর্টিজানে সংঘটিত ধর্মীয় উগ্রবাদিতার নিষ্ঠুরতার পরও যুবসমাজকে নিয়ে আমাদের স্বপ্ন রয়েছে বিশাল। কারণ ওই ঘটনার আগে গণজাগরণ মঞ্চ থেকে অসাম্প্রদায়িক চেতনা নিয়ে যুদ্ধাপরাধীর বিচারের দাবিতে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন তরুণরাই। আবার আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিশেষত আরব-বসন্তের নেতৃত্ব ছিল তরুণ সমাজের হাতে। মিশর, লিবিয়া, ইয়েমেন, তিউনিসিয়া, বাহরাইনে বেকারত্ব, অর্থনৈতিক মন্দা আর স্বৈরশাসকের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলনে তরুণরাই মূল ভূমিকা রেখেছে। এজন্য আন্তর্জাতিক যুব দিবসের তাৎপর্য অনেক বিশদ। মহামারি মোকাবেলায় তাদের সাহসী কাজের অবদান গুরুত্ব পাচ্ছে।
বিংশ শতাব্দী ছিল বিশ্বব্যাপী যুবসমাজের অঢেল অর্জন আর অধিকার আদায়ের স্মরণীয় যুগ। একারণে এই একবিংশ শতাব্দীর বিশ্বায়নের যুগে দাঁড়িয়ে ওই শতাব্দীর তরুণদের নিজ নিজ যোগ্যতা ও মেধার মাধ্যমে জাতীয় রাজনীতিতে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করার বিষয়টি আমরা উপলব্ধি করতে পারছি। কেবল রাজনীতি নয় পরিবেশ, অর্থনীতি এবং সমাজ পরিবর্তনের নানা ক্ষেত্রে তারা পাঠ্যসূচির বাইরে অবদান রেখেছেন। শিক্ষা পরিকল্পনা থেকে শুরু করে যুদ্ধবিরোধী আন্দোলনে ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন তারা। জলবায়ু পরিবর্তন, উষ্ণায়ন বা গ্লোবাল ওয়ার্মিং, শান্তির পক্ষে উচ্চকণ্ঠ হতে দেখা গেছে তরুণদের। আফ্রিকা জুড়ে জাতিগত দাঙ্গার প্রসঙ্গে তারা মানবতার পক্ষে কথা বলেছেন। যুদ্ধ বিরোধী নেটওয়ার্ক অনেক আগে থেকেই অনেক দেশে সচেতন জনগোষ্ঠীর চর্চিত বিষয়। বিশ্বব্যাপী নিজেদের অধিকারের কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে মাদক দ্রব্যের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে বর্তমান প্রজন্ম, বর্ণবাদ বিরোধী হয়ে উঠেছে, অসাম্প্রদায়িক শক্তির জয়গান গাইছেন, পরিবেশ রক্ষায় ও দূষণ মুক্তে নিবেদিত হয়েছেন। মেক্সিকোর যুবসমাজ নিজের দেশের দুর্নীতির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন। শিক্ষা সকলের অধিকার বলেই তারা স্বল্প ব্যয়ের পক্ষে স্লোগান তুলেছেন।
তবে সময়োপযোগী ও বাস্তবমুখী পরিকল্পনা গ্রহণ করে তরুণদের সমাজের দায়িত্ববান নাগরিক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা রাষ্ট্রেরই দায়িত্ব। বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের চিন্তা-চেতনা হল কীভাবে বাংলাদেশকে সমৃদ্ধশালী এবং বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠা করা যায়। আওয়ামী লীগ সরকারের চিন্তা-চেতনা ও কর্মসূচির সঙ্গে তরুণ সমাজের চিন্তা-চেতনার একটা গভীর মিল রয়েছে। মহামারি সত্ত্বেও বর্তমান সরকার ২০২১ সালের মধ্যে ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে উন্নয়ন, অগ্রগতির শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ও পথ রচনা করেছে। রূপকল্প-২০২১ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে তৃতীয় মেয়াদের সুনির্দিষ্ট কর্মসূচি উপস্থাপন করা হয় ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের নির্বাচনের আগে।
নির্বাচনের ফলাফলে উন্নয়ন ও অগ্রগতির ধারাবাহিকতা রক্ষা এবং দেশকে শান্তি, গণতন্ত্র, উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আরেকবার দেশ সেবার সুযোগ পায়। তার আগেই এই সরকারের আগের আমলে শিক্ষিত ও দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে ওঠে; অন্যদিকে বেকারত্বের অবসান ও কোটি কোটি যুবসমাজের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়। সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত হচ্ছে, ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটচ্ছে; যোগাযোগ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন হচ্ছে, পরিকল্পিত নগর-জনপদ গড়ে উঠছে এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ সমৃদ্ধির সোপানে পা রেখেছে এখন। রাজনীতি থেকে হিংসা, হানাহানি, সংঘাতের অবসান হচ্ছে, দুর্নীতি, দুর্বৃত্তায়নের ধারা থেকে বাংলাদেশ বেরিয়ে এসেছে; গড়ে উঠেছে একটি সহিষ্ণু গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা।
বর্তমান সরকারের এক যুগ পূর্তির আগেই উন্নয়নমূলক অনেক কাজে যুবসমাজ অবদান রাখতে সক্ষম হয়েছেন। বাকি সময়ের মধ্যে জাতিকে উপহার দেওয়া হবে নতুন ভিশনÑ নতুন প্রেক্ষিত পরিকল্পনা রূপকল্প-২০৪১। ২০৪১ সালের বাংলাদেশ হবে মধ্যম আয়ের পর্যায় পেরিয়ে এক শান্তিপূর্ণ, সমৃদ্ধ, সুখী এবং উন্নত জনপদ। সুশাসন, জনগণের সক্ষমতা ও ক্ষমতায়ন হবে এই অগ্রযাত্রার মূলমন্ত্র। দেশমাতৃকার ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে নতুন প্রজন্মÑ প্রাণ-প্রাচুর্যভরা সৃষ্টি সুখের উল্লাসে টগবগে বাংলাদেশের যুবসমাজ। এজন্য তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে শান্তি, গণতন্ত্র, উন্নয়ন ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশের পথে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ শীর্ষক পরিকল্পনা। ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়নের অভীষ্ট (এসডিজি) লক্ষ অর্জনে যুবসমাজের অবদানও অনস্বীকার্য হয়ে উঠেছে।
২০২০ সালের করোনা ভাইরাসের মধ্যে দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলন ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় তরুণদের সক্রিয় অংশগ্রহণ জরুরি। বর্তমান তরুণ সমাজকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলতে হবে, সুশাসন প্রতিষ্ঠায় নিবেদিত থাকতে হবে আর এসডিজি অর্জনে তারুণ্যের উদ্দীপনাকে কাজ লাগাতে হবে। একথা সত্য সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও দুর্নীতি দমন ব্যতিরেকে এসডিজি লক্ষ অর্জন সম্ভব নয়। আর দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ করতে হলে আইনের চোখে সকলেই সমান- এই বিবেচনার পাশাপাশি রাজনৈতিক সদিচ্ছা এবং এই সদিচ্ছার বাস্তবায়ন করতে হবে। রাজনৈতিক সদিচ্ছা ছাড়া দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী অঙ্গীকার, জাতিসংঘের দুর্নীতিবিরোধী সনদে অনুস্বাক্ষর, পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা, জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল প্রভৃতি এই উদ্দেশে পরিচালিত হওয়া দরকার।
সরকার ও সরকারের উচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তিগণ দুর্নীতি দমন ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় অঙ্গীকারগুলো পালন করলে তরুণসমাজকে সহজেই ইতিবাচক কাজে সম্পৃক্ত করা যাবে। সরকারি, বেসরকারি সকল ক্ষেত্রে চাকরিতে নিয়োগ প্রক্রিয়া দুর্নীতিমুক্ত করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী প্রকৃত মেধা ও যোগ্যতা সম্পন্নকে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে নিয়োগ দিলে কোটা না থাকলেও অসন্তোষ থাকবে না।যুবসমাজের মধ্যে মানবিক ও নৈতিক মূল্যবোধের বিকাশ ও চর্চার সম্প্রসারণ করতে হবে যেন অশিক্ষা, অপশিক্ষা, কুসংস্কার ও ধর্মীয় ভ্রান্ত-ধারণায় বিপথগামী হওয়া থেকে তারা রক্ষা পায়।
এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার শ্রেষ্ঠ সময়- তার। এই যুদ্ধ এখন জঙ্গিবাদী চেতনার বিরুদ্ধে, এই যুদ্ধ এখন মাদকাসক্তির বিরুদ্ধে, সকল অকল্যাণের বিরুদ্ধে, ন্যায়ের পক্ষে আর নিজেকে সুস্থ-স্বাভাবিক রাখার জন্য সংগ্রাম করে যাওয়া। এদেশের শ্রমশক্তি প্রধানত নির্ভরশীল যুব জনগোষ্ঠীর ওপর। প্রবাসী শ্রমিক এবং তৈরি পোশাক শিল্পে তরুণ সমাজের অংশগ্রহণই বেশি। অর্থাৎ দেশের অর্থনীতির চালিকা শক্তি যুবসমাজ। দেশের অর্থনীতিকে গতিশীল করার জন্য যুবসমাজকে গুরুত্ব দিয়ে প্রণীত হওয়া দরকার সকল কর্ম-পরিকল্পনা। তাদের সৃজনশীলতাকে সুরক্ষা দিতে হবে। উৎসাহী করতে হবে জ্ঞান চর্চায়। ব্যবসা-বাণিজ্য কিংবা বিনিয়োগে এগিয়ে এলে সরকারি তদারকি রেখে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
বিত্তশীল গৃহের সন্তান অপরাধী হলে তাদের মা-বাবাকে দায়িত্ব দিয়ে সৎপথে আনতে হবে। মাদক ব্যবসা, চোরাচালান চক্রের সঙ্গে যুক্ত হলে কিংবা খুনের মতো ঘটনা ঘটালে পরিবার যেন সমাজের কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য হয় সেই আইনিকাঠামো তৈরি করতে হবে। বেকারত্ব, চাকরিতে তদবির বাণিজ্য আর শিক্ষা জীবনের শেষে সুন্দর ভবিষ্যতের অভাব আর বিনোদনের শূন্যতা- এখনকার তরুণসমাজকে ফেসবুক কেন্দ্রিক মোবাইল বৃত্তের মধ্যে আবদ্ধ করেছে। এসব নেতিবাচক অনুষঙ্গ থেকে মুক্ত করে তরুণসমাজকে আলোর পথে পরিচালিত করাই হোক আন্তর্জাতিক যুব দিবসের মূলমন্ত্র।
লেখক : কলামিস্ট, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রগতিশীল কলামিস্ট ফোরাম, নির্বাহী কমিটির সদস্য, সম্প্রীতি বাংলাদেশ এবং অধ্যাপক, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।