‘নাটাই’ তারানা হালিমের হাতেই!
প্রকাশিতঃ 7:50 pm | February 14, 2020

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো :
তাকে ছাড়াও বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের ব্যানারে কেউ কেউ দু’একটি কর্মসূচি পালন করেন। কোন কোন গণমাধ্যমে নিজেদের কর্মসূচির ছবি প্রকাশ করে আলোচনাতেও আসেন। কিন্তু দলের পক্ষে যেখানে নিবেদিতপ্রাণ হওয়া দরকার সেখানে সংগঠনের ‘সাইনবোর্ড’ ব্যবহারকারীদের আর খোঁজ মেলে না।
আর এই জায়গাটিতেই বারবার নিজের সাংগঠনিক নেতৃত্ব প্রদানে বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি অ্যাডভোকেট তারানা হালিম। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন বঞ্চনা এবং মন্ত্রীত্ব না পাওয়ার পর সক্রিয় রাজনীতি থেকে নিজেকে সাময়িক গুটিয়ে নিলেও ঠিক সময়েই সক্রিয় হয়ে আলোচনার মূল উপজীব্য হয়ে উঠেছেন তিনি।
সদ্য সমাপ্ত ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী আতিকুল ইসলামকে বিজয়ী করতে বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের ব্যানারে দেশের নামি সব তারকাদের একীভূত করেছেন।
কখনও তাদেরকে নিয়ে পায়ে হেঁটে এলাকায় এলাকায় জনসংযোগ চালিয়েছেন। আবার কোন কোন সময় আতিকুল ইসলামের স্ত্রী ডা. শায়লা শগুফতা ইসলামকে সঙ্গে নিয়ে চালিয়েছেন বিরামহীন প্রচারণা।
নির্বাচনী প্রচারণার শেষ দিনে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) বর্তমান নির্বাচিত মেয়র আতিকুল ইসলাম তারানা হালিমের উপস্থাপনায় নিজের নির্বাচনী কেন্দ্রে ফেসবুক লাইভ করেছেন। ঢাকাবাসীকে নিয়ে নিজের স্বপ্ন-আকাঙ্খার কথা জানিয়েছেন।

একই মঞ্চে তাদের পাশে ছিলেন এক সময়কার লাস্যময়ী অভিনেত্রী শমী কায়সার ও হালের জনপ্রিয় তারকা ফেরদৌস।
অনেকেই বলছেন, ‘বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট তুমি কার?’ এ প্রশ্ন যখন বারবার সামনে এসেছে ঠিক তখনই কড়া জবাবও মিলেছে। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে আতিকুল ইসলামের পক্ষে নানামুখী কৌশল নিয়ে সফলতার সঙ্গে বাস্তবায়ন করে বিজয় ছিনিয়ে আনতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিমের নেতৃত্বে তারকারা।
জানা যায়, ঢাকাই চলচ্চিত্রের এক সময়কার তুমুল জনপ্রিয় অভিনেত্রী তারানা হালিমের হাতেই গোড়াপত্তন ঘটে বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের শাসনামলে বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের ব্যানারে আন্দোলন-সংগ্রামে ঢাকার রাজপথের মিছিলে পরিচিত মুখ ছিলেন তিনি।

ওয়ান ইলেভেনে শেখ হাসিনা মুক্তি আন্দোলনেও কার্যকর ভূমিকা রেখেছেন। এরপর দল ক্ষমতায় এলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে দুইবার সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য করেন। প্রথমে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের প্রতিমন্ত্রী ও পরবর্তীতে তথ্য প্রতিমন্ত্রীও হন তারানা। দক্ষতার সঙ্গেই দুই মন্ত্রণালয় সামলেছেন।
ওই সময় মোবাইল সিমের বায়োমেট্রিক নিবন্ধন সম্পন্ন করা ছাড়াও একাধিক ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করে প্রশংসাও পেয়েছিলেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে টাঙ্গাইল-৬ (দেলদুয়ার-নাগরপুর) থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। কিন্তু হাইকমান্ড তাকে মনোনয় দেয়নি।
এমনকি সংরক্ষিত আসনে পুনরায় তারান হালিমকে নিয়ে আলোচনা থাকলেও নিজে থেকেই মনোনয়ন ফরমই কিনেননি। অজ্ঞাত কারণে মান-অভিমানে রাজনীতি থেকে নিজেকে নিষ্ক্রিয় করে রাখেন। কিন্তু সেই নিষ্ক্রিয়তা স্থায়ী হয়নি বেশিদিন।

গত বছরের বৃহস্পতিবার (০৮ আগস্ট) বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় আয়োজিত বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের ৮৯তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন তিনি। এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড.শিরিন শারমিন চৌধুরী এমপি।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও সামাজিক নানা অসঙ্গতির বিরুদ্ধেও সোচ্চার যুবলীগের এক সময়কার মহিলা বিষয়ক এই সম্পাদক। গুজব প্রতিরোধে নিজের অতীত অভিজ্ঞতা থেকেই মাস কয়েক আগে গুজবের বিরুদ্ধে বিভিন্ন কর্মসূচিতে ভূমিকা রাখেন তথ্য মন্ত্রণালয়ের ‘গুজব প্রতিরোধ ও অবহিতকরণ’ সেলের এই রূপকার।
সূত্র জানায়, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ রয়েছে। তারানা হালিমের স্বাক্ষর জালের মামলাও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের মধ্যকার তিক্ততাকে ঘিরে এই সংগঠনের পরিচয় ব্যবহার করে দু’একটি কর্মসূচিতে কাউকে কাউকে লম্ফঝম্ফ করতে দেখা গেছে।

কিন্তু কখনও এসব নিয়ে মুখ খুলেননি তারানা। প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য কারও সমালোচনাও করেননি।
একই সূত্র মতে, দলের দু:সময়ের কর্মী তারানা হালিম অপেক্ষায় ছিলেন মোক্ষম এক সময়ের। আর সেই সময়টিই তার জন্য সমকালীন রাজনীতিতে প্লাস পয়েন্ট হয়েছে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটকে মেয়র আতিকুল ইসলামের পক্ষে প্রচার-প্রচারণায় রীতিমতো ব্যস্ত রাখেন তিনি।
বাঁধন, রিয়াজ ও ফেরদৌসসহ নামি তারকাদের এক কাতারে নিয়ে এসে নৌকার বিজয় কেতন ওড়াতে প্রভাবকের ভূমিকা পালন করেন। বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের ব্যানারে তুবড়ি ছুটানো মহল বিশেষটি এতে করে ফুটো বেলুনের মতো চুপসে যায়। প্রমাণিত হয় এই জোটের ‘নাটাই’ তারান হালিমের হাতেই।

কালের আলো/এসএইচএ/এমএ