ময়মনসিংহে সুরের ইন্দ্রজাল ছড়ালেন জেমস : বিমোহিত লাখো দর্শক

প্রকাশিতঃ 3:27 pm | April 20, 2018

শোবিজ এডিটর, কালের আলো:

কোটি কোটি তারুণ্য স্বপ্ন দেখেন একদিন হবেন নগর বাউল। সেই নব্বইয়ের দশক থেকে আজ অবধি সেই একই সুর, একই ছন্দ, একই ভাষা জেমস গেয়ে চলেছেন নিজের স্বকীয়তা বজায় রেখে নিজস্ব স্টাইলে। কোঁকড়ানো চুল, কাঁধে গিটার, কালো টি শার্টের সঙ্গে পছন্দের জিন্স প্যান্ট। কল্পনা নয়, লাখো দর্শকের চোখের সামনে ভেসে আসলো সময়ের সেরা রকস্টার মাহফুজ আনাম জেমস।

নিজের ঠোঁটের কাছে হাত নিয়ে শুন্যে ভাসিয়ে দিলেন। মুখায়বে কাঠিন্য ভাব নিয়ে মাইকে উচ্চারণ করলেন ‘এলো এলো, আই লাভ ইউ।’ গিটারে ‘টুংটাং’ শব্দে সুর তুলেই গাইতে শুরু করলেন ‘কবিতা তুমি স্বপ্নচারিণী হয়ে খবর নিও না’। মায়াবী সুরের এমন মুর্ছনা যেন ছড়িয়ে পড়লো রফিক উদ্দিন ভূইয়া স্টেডিয়ামের প্রতিটি কোনায়।

আলো-আঁধারির আকর্ষণীয় মঞ্চে নি:শব্দে এভাবেই আগমন ঘটলো কন্ঠ জাদুকর জেমসের। বৃহস্পতিবার (১৯ এপ্রিল) সন্ধ্যার পর মঞ্চে এসেই উন্মাতাল করে ছাড়লেন স্টেডিয়ামের গোটা গ্যালারি। কন্ঠের জাদুকরী স্পর্শে প্রায় লাখো দর্শকের মন মাতিয়ে উচ্ছ্বল তারুণ্যের হৃদয় হরণ করতে বিরতিহীনভাবে গাইতে থাকলেন ‘লেইস ফিতা লেইস, গুরু ঘর বানাইলা কী দিয়া, দুষ্ট ছেলের দল, ওহ বিজলী চলে যেও না, সুলতানা বিবিয়ানা’।

যে গানের জন্য বাবার সঙ্গে অভিমান করে শৈশবেই বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন, সেই জেমস গিটারের ছন্দে ভাসিয়ে গেয়ে চললেন, ‘কোথায় আছে কেমন আছে মা, আসবার কাইলে আসলাম একা, আমি তারায় তারায় রটিয়ে দিবো, মীরাবাঈ, পাগলা হাওয়ার তরে’র মতো জনপ্রিয় গানগুলো।

এতো বছর পরেও আজো কী অদ্ভুত মাদকতা গানগুলোতে! হারায়নি একটুকুও আবেদন। কানায় কানায় ভরা স্টেডিয়ামের শ্রোতারা মগ্ন হয়েই যেন রকস্টারের সঙ্গে ঠোঁট মিলাচ্ছেন, মাথাও দুলাচ্ছেন। এ এক অভাবনীয় দৃশ্য।

সুরের সাগরে হাবুডুবু দর্শকরা খেই হারিয়ে হঠাৎ ভেঙে ফেললেন ব্যারিকেড’র প্রাচীর ‘বাঁশ’। পুলিশের কোন বাঁধাই যেন তাঁরা মানছিলো না। উপস্থাপিকা তানিয়া হোসাইন বার বার সতর্ক করছিলেন। নগর বাউলও অনুরোধের সুরেই বলছিলেন, ‘প্রাণখুলে আনন্দ করুন। তবে এ আনন্দ যেন পাশের মানুষের বেদনার কারণ না হয়ে দাঁড়ায়।’ কিন্তু কে শোনে কার কথা!

বাংলা গানে নিজেকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া নগর বাউল যখন ভারতীয় উপমহাদেশে নিজের জাত চেনাতে ‘ভিগি ভিগি’ গান গেয়ে হৈচৈ ফেলে দিয়েছিলেন ঠিক তেমনই বিদায়ের করুণ সুর ছড়ালেন এ গানেই। বৃহস্পতিবার (১৯ এপ্রিল) রাত সাড়ে ৭ টা থেকে ১০ টা পর্যন্ত সুরের নানা রঙ ছড়িয়ে মঞ্চে নিজের ইতি টানলেন তারুণ্যের এ ‘আইকন’।

জীবনের সেরা এসব গানের মায়ায় মোহাবিষ্ট স্টেডিয়ামটি’র অন্ধকার গ্যালারিতে তখন শুধুই মোবাইলের আলো’র বিচ্ছুরণ। বিদায় লগ্নে নগর বাউল ভরাট কন্ঠে শুনিয়ে গেলেন নিজের সেই বিখ্যাত সংলাপ ‘তোমরা আমার জান, তোমরা আমার গান। আবারো দেখা হবে যদি থাকি এক পথে।’

সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড জনগণের সামনে তুলে ধরতে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে ‘অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ’ শীর্ষক এ কনসার্টটিতে যোগ দিতে বৃহস্পতিবার (১৯ এপ্রিল) বিকেলেই প্রায় এক যুগ পর ময়মনসিংহে আসেন নগর বাউল ব্যান্ডের প্রধান গিটারিস্ট ও ভোকালিস্ট মাহফুজ আনাম জেমস।

এর আগে ২০০৬ সালে নগরীর সার্কিট হাউজ মাঠে দর্শকদের মাতিয়েছিলেন নগর বাউল। এরপর দীর্ঘ বিরতি। নরগীর রফিক উদ্দিন ভূইয়া স্টেডিয়ামে মুগ্ধতার রেশ ছড়ানো এ কনসার্ট শুরু হয় বিকেলে।

প্রথমে ময়মনসিংহের স্থানীয় শিল্পীরা সঙ্গীত ও নৃত্য পরিবেশন করেন। এরই ফাঁকে ফাঁকে চলে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকান্ডের প্রামাণ্যচিত্র। সন্ধ্যার পরপরই স্টেডিয়ামটিতে যেন তিল ধারণের জায়গা ছিল না।

মাগরিবের নামাজের পরই লালন ব্যান্ড গানে গানে কথা শুরু করে কনসার্টটিতে। ‘এ শহর এলোমেলো’ দিয়ে শুরু করে ‘সময় গেলে সাধন হবে না, আমি অপার হয়ে বসে আছি, আর কী হবে মানব জনম, এক চোখেতে হাছন, কেউ বলে ভগবান, পাগল ছাড়া দুনিয়া চলে না’ গান উপহার দিয়ে কন্ঠ ও সুরের মুগ্ধতা ছড়ান দর্শকদের মাঝে।

মঞ্চে লালনের প্রস্থানের পর পরই উপস্থাপিকা ও অভিনেত্রী তানিয়া হোসাইন দর্শকদের আগ্রহ ও উন্মাদনার মাত্রা বাড়িয়ে দিতেই বললেন, ভিআইপি গেট থেকে বর্ণীল আতশবাজি শুরু হবে। উপস্থাপিকার ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই সবার চোখ সেদিকটায়।

লাখো মানুষের উপস্থিতিতে বর্ণীল আশতবাজির এ স্মৃতি যেন বহাল থাকবে চিরকাল। স্মৃতির সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতে উচ্ছ্বসিত দর্শকরা মোবাইল ফোনে ভিডিও ও ছবি তুলে রাখার প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হলেন। শেষতক চিরকুট ব্যান্ড সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্যে দিয়েই শেষ হলো উপভোগ্যকর এ কনসার্ট।

এ সময় ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনার জিএম সালেহ উদ্দিন, ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসক (ডিসি) ড. সুভাষ চন্দ্র বিশ্বাস, র‌্যাব-১৪’র অধিনায়ক লে: কর্ণেল শরীফুল ইসলাম, জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মোমতাজ উদ্দিন মন্তা, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহবায়ক মোফাখখার হোসেন খোকন, মহানগর যুবলীগের আহবায়ক মোহাম্মদ শাহীনুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

 

কালের আলো/ওএইচ/এএ

Print Friendly, PDF & Email