জয়-লেখকের নেতৃত্বে ভাবমূর্তির খরা কাটিয়ে উঠছে ছাত্রলীগ
প্রকাশিতঃ 9:56 am | November 29, 2019

পলিটিক্যাল এডিটর, কালের আলো :
বেপরোয়া চাঁদাবাজি ও অনিয়মের জেরে শোভন-রাব্বানী নেতৃত্ব থেকে ‘কিক আউট’ হওয়ার পর চরম ভাবমূর্তি সংকটে পড়ে ছাত্রলীগ। এরপর সব মহলে গ্রহণযোগ্যতার পাশাপাশি ভাবমূর্তি খরা কাটিয়ে তুলতে আল নাহিয়ান খান জয়কে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও লেখক ভট্টাচার্যকে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
নেতৃত্ব পাওয়ার পরপরই ঝিমিয়ে পড়া সংগঠনকে কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত পুনরুজ্জীবিত করে তোলতে নানা রকম উদ্যোগ গ্রহণ করেন নতুন দুই ভারপ্রাপ্ত সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক। ‘কম কথার’ এ দু’ ‘স্মার্ট’ ও নির্ভীক নেতৃত্ব সংগঠনের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারের চ্যালেঞ্জ নিয়েই ‘সমন্বয়’ করে কাজ করছেন।
তাদের নেতৃত্বে এখন পর্যন্ত ‘রাইট ট্র্যাকে’ রয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের রাজপথের ‘ভ্যানগার্ড’ হিসেবে পরিচিত এ সংগঠনটি। নতুন সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক প্রটোকলের রাজনীতি যেমন বর্জন করেছেন তেমনি সংগঠনের কেউ অপকর্মে জড়ালেই ‘অ্যাকশনে’ যাচ্ছেন।
করা হচ্ছে বহিস্কার। সংগঠনও আপাতত কোন্দলমুক্ত হয়েছে। টেন্ডারবাজি বা কোন রকম সহিংসতায় আর উচ্চারিত হচ্ছে না ছাত্রলীগের নাম।
কমিটির দুই শীর্ষ নেতা আগের দুই নেতার মতো উচ্চভিলাসী না হয়ে সহজ-সরল কায়দায় জীবন যাপনকে বেছে নেওয়ায় এবং বাণিজ্যের পথে পা না বাড়ানোর ফলে নেতিবাচক ইমেজ থেকে ক্রমশ বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে ছাত্রলীগ। সারা দেশে আওয়ামী লীগের সম্মেলন চলায় আপাতত কোন জেলা বা মহানগর কমিটি গঠন থেকে সরে এসেছে ছাত্রলীগ।
তবে জেলা-উপজেলায় আওয়ামী লীগের সম্মেলনের পর পরই বিভিন্ন ইউনিটে কমিটি গঠনে কার্যক্রম শুরু করা হবে এমনটি নিশ্চিত করেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের দায়িত্বশীল একটি সূত্র।
জানা যায়, প্রটোকল ছাড়া নতুন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক জয়-লেখককে চলার নির্দেশনা দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর সেই নির্দেশনা অক্ষরে অক্ষরে পালন করছেন তাঁরা। সাধারণত আগে কোন সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক রাজধানীর কোন স্থানে মুভমেন্ট করলে কয়েক কিলোমিটার থাকতো মোটর সাইকেলের বহর।
কিন্তু নতুন সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক এ পথে আর পা মাড়াননি। তাঁরা অতীত নেতাদের তেড়েফুঁড়ে ছুটে চলার এমন স্টাইলের বিপরীতে ধীরস্থির মানসিকতা নিয়ে পথ চলছেন। প্রতিদিন নিয়ম করে মধুর ক্যান্টিনে নেতা-কর্মীদের সঙ্গে বসছেন। আলাপ-আলোচনা করছেন। সংগঠনের রাজনৈতিক পরিচয়ে দুর্বৃত্তায়নের রাজনৈতিক যে ধারাপাতের সূচনা হয়েছিল সেটিরও রাশ টেনে ধরা হয়েছে। চাঁদাবাজ, ছিনতাই, মাদকসহ কয়েকটি অনাকাঙ্খিত ঘটনায় জড়িতদের সংগঠন থেকে বহিষ্কার, সংগঠনবহির্ভূত কর্মকান্ডে কিছু কিছু কমিটি বিলুপ্তি করেছেন এ কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক জয়-লেখক। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করেই দলীয় গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে।
দলটির তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের অভিযোগ, মেয়াদোত্তীর্ণ ইউনিটগুলোর কমিটি করতে শোভন-রাব্বানী বিভিন্ন ইউনিট থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। মুখচেনা গুটিকয়েক নেতা ছাড়া অন্য কারও ফোন ধরতো না শোভন-রাব্বানী।
কমিটির নাম করে দু’জন ভাগাভাগি করে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। কিন্তু নতুন সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক নিজেদের কোন রকম বাণিজ্যে না জড়িয়ে তৃণমূলের প্রতিটি নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলেছেন।
সংগঠনটির কয়েকটি জেলা শাখার একাধিক নেতা অভিন্ন সুরে কালের আলোকে বলেন, ‘তৃণমূলের একজন নেতা কেন্দ্রের কাছ থেকে কেবল মূল্যায়নই চান। সেন্ট্রাল সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে যদি মনখুলে কথা বলতে পারেন, নিজেদের প্রত্যাশার কথা জানাতে পারেন তাতেই তাঁরা খুশি।
আগে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক যারা টাকা দিতে পারতেন কেবল তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতেন। সাধারণ কোন নেতা বা কর্মী কয়েকশ’বার ফোন করলেও তাঁরা সাড়া দিতেন না। কিন্তু বর্তমান সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের অন্যতম বড় গুণ সহজেই তাদের ফোনে পাওয়া যায়।’
সংগঠনটির মহানগর শাখার বেশ কয়েকজন নেতা কালের আলোকে বলেন, ‘অব্যাহতি পাওয়া সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের মাঝে ‘আমিত্ব’ একটি ভাব ছিল। তাঁরা মনে করতেন তাদের সমপর্যায়ের কেউ নেই। তাঁরা তৃণমূলকে চরমভাবে অবমূল্যায়ন করতেন। কিন্তু জয়-লেখকের কর্মীবান্ধব মানসিকতা সংগঠনকে গতিশীল করছে।’
অবশ্য সংগঠনটির এক শ্রেণির নেতাদের অভিযোগ, জয় ও লেখক প্রেস রিলিজ নির্ভর সংগঠন চালাচ্ছেন। তাঁরা কোন চমক দেখাতে পারেননি। এমনকি আজো সংগঠনের বিতর্কিতদের বাদ দেওয়া হয়নি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) হল কমিটিগুলোকে ঢেলে সাজানো হয়নি। প্রথম দিকে এসব নিয়ে তাদের মাঝে স্পিড থাকলেও এখন অজ্ঞাত কারণে তাঁরা আগ্রহ হারাচ্ছেন।
তবে আওয়ামী লীগের সম্পাদক মন্ডলীর এক সদস্য মনে করেন, ‘বারবার ছাত্রলীগ নেতিবাচক শিরোনাম হচ্ছিল এবং সরকারকে বেকায়দায় ফেলে দিচ্ছিল। এমন অবস্থা থেকে ছাত্রলীগ ঘুরে দাঁড়িয়েছে। অন্তত এ সংগঠনের কারণে আর সরকারের ইমেজ সংকটের মুখে পড়তে হচ্ছে না। এদিক থেকে জয় ও লেখক সফলভাবেই নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
এসব বিষয়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য কালের আলোকে বলেন, ‘আমাদের সাংগঠনিক নেত্রী, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলেই আমরা ছাত্রলীগ পরিচালনা করছি। এখন সংগঠনের কারও বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ উঠলেই তদন্তপূর্বক কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। আমরা কোন অনিয়মের সঙ্গে আপোস করছি না।
তিনি জানান, এ পর্যন্ত তাঁরা নড়াইল ও কুড়িগ্রাম জেলা ছাত্রলীগের কমিটি দিয়েছেন। যশোর বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি ভেঙে নতুন কমিটি দেওয়া হয়েছে। সারাদেশে প্রতিটি জেলা উপজেলায় আওয়ামী লীগের কাউন্সিল হচ্ছে। আ.লীগের কাউন্সিল শেষ হলে পর্যায়ক্রমে ছাত্রলীগের প্রতিটি ইউনিটে নতুন কমিটি করা হবে।
কালের আলো/আরআইএ/এমএএএমকে