বৃষ্টিতে নেচে ভাইরাল হওয়া সেই যুবকের সংগ্রামের গল্প
প্রকাশিতঃ 9:48 am | September 14, 2019

কালের আলো ডেস্ক:
গত সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে বৃষ্টির সময় রাজধানীর পল্টনে অনেকের চোখে পড়ল একটি দৃশ্য। হঠাৎই একটি বিআরটিসি বাসের সামনে দাঁড়িয়ে বৃষ্টিতে ভিজে কোনোরকম সংকোচ ছাড়াই নাচতে শুরু করলেন এক যুবক।
জ্যামে দাঁড়িয়ে থাকা যানবাহনগুলোর বহু যাত্রী তার নাচ উপভোগ করছিল। কেউ কেউ আবার বিষয়টিকে এড়িয়ে পাশ কেটে চলেও যাচ্ছিলেন।
তবে এসবে ভ্রুক্ষেপ নেই সেই যুবকের। বৃষ্টির রোমান্টিকতা যেন তাকে ছেয়ে গেছে। আর নাচের প্রতিটি মুদ্রায় সে ছন্দ, আবেগ উপচে পড়ছে ওই যুবকের।
সোমবারই সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে অজ্ঞাত যুবকের সেই নাচের দৃশ্য নেটিজেনদের সামনে চলে আসে।
নেতিবাচক ও ইতিবাচক সব মন্তব্যের মাঝে যুবকের সেই নাচ ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে যায়।
জানা গেছে, ওই যুবকের অজান্তের মিলন হাসান নামে এক যুবক এই নাচের দৃশ্যটি ভিডিও করে ফেসবুকে প্রথম আপলোড করে। আর মুহূর্তেই ছড়িয়ে পরে সেই ভিডিও। শুধুমাত্র মিলন হাসানের ভিডিওটিই ইতিমধ্যে চার লাখের বেশি ভিউ হয়েছে। শেয়ার করেছে সাড়ে ৫ হাজারেরও বেশি মানুষ।
সেই ৫ হাজার শেয়ার থেকে আরও কতবার দেখা হয়েছে ভিডিওটি তা জানা নেই কারও।
এক কথায় বলতে গেলে ওই যুবকের নাচ নেটিজেনদের দৃষ্টি কেড়ে নিয়েছে। যদিও অনেকে তাকে মানসিকভারসাম্যহীন বলে নেতিবাচক মন্তব্য করেছেন।
তবে ভিডিওটি ভাইরালের পর অনেকেই সেই যুবকের প্রশংসা করে তার পরিচয় জানতে চেয়েছেন।
এবার জানা গেলো সেই যুবকের পরিচয়। জানা গেল, নাচে পারদর্শী সেই যুবক মানসিক ভারসাম্যহীন তো নয়ই বরং আর সব যুবকের চাইতে অনেক পরিশ্রমী, উদ্যোমী ও সাবলম্বী। রীতিমত জীবন যুদ্ধে সংগ্রাম করে যাওয়া এক যোদ্ধা।
সেই যুবকের নাম কাজল। বাবা-মা বেচে নেই তার। মাথায় নেই অভিভাবকের ছায়া।
জীবন সংগ্রামে একটু একটু করে লড়াই করে পুঁজি যোগাড় করে নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়েছেন। রাজধানীর পল্টন এলাকাতেই ছোট দুটি দোকানের মালিক তিনি।
এভাবেই কাজলের বিষয়ে বিস্তারিত জানান তারই প্রিয় বন্ধু ফাহাদ আহমেদ শিকদার।
ভাইরাল সেই ভিডিও প্রসঙ্গে গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, ওই ভিডিওতে যাকে নাচতে দেখেছেন তিনি আমার বন্ধু কাজল। কাকরাইল ও পল্টন এলাকাবাসীদের অনেকেই তাকে চেনে। এলাকার সবার সঙ্গেই কাজলের সখ্যতা রয়েছে। সবার সঙ্গেই বন্ধুত্ব গড়ে তোলার এক চমৎকার ক্ষমতা রয়েছে তার। তাই এলাকায় তিনি বেশ জনপ্রিয়।
ফাহাদ বলেন, একবার কাজল অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলে পল্টনের বিভিন্ন মসজিদে দোয়াসহ তার চিকিৎসার্থে টাকাও উত্তোলন করে এলাকাবাসী। তার অপারেশন হবে শুনে হাসপাতালে ভিড় জমে যায়।
কাজল প্রাণ-প্রাচুর্যে ভরা এক যুবক এবং যখন তখন হাসি আমোদে মেতে ওঠেন বলে জানান ফাহাদ।
ভিডিওর বিষয়ে ফরহাদ বলেন, এটা আফসোসের ব্যাপার অনেকে ফেসবুকে তাকে পাগল বলেছেন। কিন্তু আমি বলছি কাজল যুব সমাজের জন্য এক অনুপ্রেরণা। যারা তাকে পাগল, ভারসাম্যহীন বলছেন তারা জেনে রাখুন বিজয়নগর বটতলা মসজিদের গ্রাউন্ড ফ্লোরে এই কাজলেরই একটি ফাস্ট ফুডের দোকান আছে। একটি লন্ড্রিও আছে তার।’
আর এসব সম্পদ কাজল কারও কোনো সাহায্য ছাড়াই গড়েছেন বলে জানান ফরহাদ।
কালের আলো/বিআর/এফএম