‘ভোটারদের কাছে লাঙ্গল প্রতীকের আবেদন কমেনি, বেড়েছে’

প্রকাশিতঃ 11:23 am | March 17, 2018

পলিটিক্যাল এডিটর, কালের আলো:

দেশের রাজনীতিতে প্রতীকের গুরুত্ব কম নয়। ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ বড়-এমন কথা অনেক দিন আগে থেকে রাজনৈতিক অঙ্গণে প্রচলিত থাকলেও নির্বাচনে ভোটাররা বরাবরই আকৃষ্ট হন দলীয় প্রতীকে। কোন কোন ক্ষেত্রে আবার প্রতীকের চেয়ে প্রার্থীর ব্যক্তিগত ইমেজও ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়ায়।

সাধারণত ভোট রাজনীতিতে নৌকা ও ধানের শীষ প্রতীক নিয়েই মাতামাতি থাকে ভোটারদের। তবে সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচ.এম.এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টির প্রতীক লাঙ্গলের আবেদন এখনো ভোটারদের কাছে কমেনি বলেই মনে করেন দলটির প্রভাবশালী কো চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী জিএম কাদের।

তিনি বলেন, ভোটারদের কাছে এখনো লাঙ্গলের আবেদন রয়েছে। সম্প্রতি রংপুর ও গাইবান্ধায় লাঙ্গল প্রতীক জিতেছে। নতুন প্রজন্মও এ প্রতীকে আকৃষ্ট হচ্ছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও লাঙ্গল প্রতীকে ভোট দিয়েই পুনরায় জাতীয় পার্টিকে ক্ষমতায় আনবে দেশের সাধারণ মানুষ।

বৃহস্পতিবার (১৫ মার্চ) রাতে দৈনিক কালের আলো’র সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন দলটির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের এ ছোট ভাই।

সংসদের বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করা দলটির অন্যতম এ নীতি নির্ধারক নেতা বলেন, দেশের মানুষের মাঝে এখনো জাতীয় পার্টির তুমুল জনপ্রিয়তা রয়েছে। জাতীয় পার্টিকে নিয়ে মানুষ আলোর পথ দেখছে। দুই দলের বাইরে মানুষ এখন জাতীয় পার্টিকে নিয়েই ভাবছে।’

দলটির আগামী ২৪ মার্চের ঢাকায় মহাসমাবেশ প্রসঙ্গে সাবেক বিমানমন্ত্রী গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেন, এদিন জাতীয় পার্টি নিজেদের সাংগঠনিক শক্তি, জনপ্রিয়তা ও সামর্থ্যরে প্রমাণ দেবে। ঢাকা জনসমুদ্রে পরিণত হবে।’

নেতৃত্বের সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে শক্তি, এমনটি ভাবেন জিএম কাদের। তিনি বলেন, জনগণের মতামতের ভিত্তিতে একজন নেতাকে কাজ করতে হয়। দেশের মানুষের কল্যাণে আমি রাজনীতিতে এসেছি এবং নেতৃত্ব দিচ্ছি। পার্টির চেয়ারম্যান আমাকে যখন যে দায়িত্ব দিয়েছেন সেই দায়িত্ব আমি জনগণের কল্যাণে কাজে লাগাতে চেষ্টা করেছি।’

আলাপকালে জাতীয় পার্টির শাসনামলকে উন্নয়নের স্বর্ণযুগ বলেও অভিহিত করেন দলটির সাবেক এ প্রেসিডিয়াম সদস্য। জাতীয় পার্টির বর্তমান এ কো-চেয়ারম্যান বলেন, পল্লীবন্ধু এইচ.এম.এরশাদ দীর্ঘ ৯ বছর দেশ শাসন করেছেন। জাতীয় পার্টির ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে যোগাযোগ ব্যবস্থায় বিপ্লব ঘটিয়েছে। উপজেলা ব্যবস্থার প্রবর্তন, পথকলি ট্রাস্ট, ভূমি সংস্কার বোর্ড গঠনসহ সারা দেশে ব্যাপক উন্নয়ন করেছে।

জোর দিয়ে তিনি বলেন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, টেলিযোগাযোগ, ব্যাংক-বীমা, পোশাক শিল্প, ওষুধ শিল্প- সব সেক্টরেই পরিবর্তনের সূচনা করেছেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।’

ক্ষমতার রাজনীতিতে জাতীয় পার্টি বরাবরই ফ্যাক্টর। বলা হয়, এরশাদ যে দিকে চান, ক্ষমতায় যায় সেই দল, এ বচনের প্রতিফলন ঘটেছে অতীতের সংসদ নির্বাচনগুলোতে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের এমন মন্তব্যের সঙ্গে একমত জিএম কাদের। তিনি বলেন, এরশাদের ৯ বছরের শাসনামল কেমন ছিল, দেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় তাঁর ভূমিকা কেমন ছিল এসব বিষয় নিয়ে ভোটাররা এবারো অবশ্যই চূলচেরা বিশ্লেষণ করবেন। নতুন প্রজন্মের কাছে এসব চিত্র তুলে ধরা হবে।’

রংপুরকে ধরা হয় জাতীয় পার্টির রাজনীতির আঁতুড়ঘর হিসেবে। তবে দিনে দিনে এখানকার মাঠ চলে যায় অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর দখলে। যদিও উত্তরাঞ্চলে আবারো দলটির প্রতি স্থানীয় বাসিন্দাদের আস্থা ফিরছে বলে মনে করেন দলটির নেতা-কর্মীরা। রংপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীকে জিতিয়ে এইচ.এম.এরশাদ সেই কথার প্রমাণ দিয়েছেন।

জাতীয় পার্টি (এরশাদ) আগামী একাদশ সংসদ নির্বাচনে যে জোটেই যাক না কেন, তারা রংপুর বিভাগের ২২টি আসন চাইবে। জোটবদ্ধ নির্বাচনের ক্ষেত্রে ১৯৯৬ সালের নির্বাচনী ফলাফলের পরিপ্রেক্ষিতেই এ আসন চায় দলটি।

গত বছরের ২১ নভেম্বর লালমনিরহাটের এক মতবিনিময় সভায় এমন কথা জানিয়েছিলেন দলটির কো-চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী গোলাম মোহাম্মদ কাদের (জিএম কাদের)। তবে দৈনিক কালের আলো’র এক প্রশ্নের জবাবে এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করেননি তিনি।

জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৯৯১ সালে ৩৫টি, ’৯৬ সালে ৩২ টি, ২০০১ সালে ১৪ টি আসন পায় জাতীয় পার্টি। এর মধ্যে বেশির ভাগই উত্তরাঞ্চলের ৩৫টি থেকে। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের মহাজোটভুক্ত হয়ে ২৭টি আসনে জয়লাভ করে দলটি। ১৯৯১ থেকে ২০০১ তিনটি নির্বাচনেই পাঁচটি আসনেই জয়ী হন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩’শ আসনেই প্রার্থী দিতে জাতীয় পার্টি প্রস্তুত রয়েছে জানিয়ে জিএম কাদের বলেন, প্রতিটি আসনে আমাদের আসনভিত্তিক জরিপ কাজ চলছে। বেশ কিছু আসনে দলীয় চেয়ারম্যান সম্ভাব্য প্রার্থীদের সবুজ সংকেত দিয়েছেন। একই সঙ্গে চলছে নির্বাচনী ইশতেহার প্রণয়নের কাজও।’

জোট না এককভাবে পরবর্তী নির্বাচনে জাতীয় পার্টি অংশ নেবে এমন প্রশ্নের উত্তরে দলটির এ কো-চেয়ারম্যান বলেন, জোট না এককভাবে আমরা একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবো এমন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে মূলত নির্বাচনের শিডিউল ঘোষণার পর। আর এ সিদ্ধান্ত গ্রহণে গুরুত্ব দেয়া হবে দলীয় নেতা-কর্র্মী ও জনগণের প্রত্যাশাকে।’

নির্বাচন ও ভোট রাজনীতিতে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে গাঁটছড়া অটুট থাকলে জাতীয় পার্টি কতটি আসন দাবি করবে এমন প্রশ্নে জিএম কাদের বলেন, আসন নিয়ে দরকষাকষি হবে অবস্থা বুঝে।’

 

কালের আলো/এসআর/টিএম

Print Friendly, PDF & Email