নতুন ইতিহাস সৃষ্টির দ্বারপ্রান্তে আ’লীগ : গুরুত্বপূর্ণ ম্যাসেজ দেবেন প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিতঃ 4:21 am | March 07, 2018

বিশেষ প্রতিবেদক, কালের আলো :
১৯৭১ সালের ৭ মার্চের মতোই জনসমুদ্র ঘটাতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐহিত্যের স্বীকৃতি পাওয়ায় আজ বুধবার (০৭ মার্চ) রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিশাল জনসভা করছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। এ জনসভার মাধ্যমে লোকসমাগমের দিক থেকে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙ্গে নতুন ইতিহাস সৃষ্টির দ্বারপ্রান্তে রয়েছে দলটি।

নির্বাচনী বছরে রাজধানীতে ক্ষমতাসীনদের প্রথম এ জনসভায় বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলীয় নেতা-কর্মী ও দেশবাসীকে গুরুত্বপূর্ণ দিক নির্দেশনা প্রদান করবেন। মুক্তিযুদ্ধের সব পক্ষের শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ রাখার পাশাপাশি দলকে শক্তিশালী করতে নির্দেশনা যেমনি আসবে তেমনি সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদবিরোধী কার্যক্রম জোরদার করতে পাড়া-মহল্লায় কমিটি গঠন এবং উন্নয়নের ধারাবাহিকতার প্রয়োজনে নিজ দলকে পুনরায় সুযোগ দেওয়ারও আহ্বান জানাবেন সরকার প্রধান। দলীয় একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র কালের আলোকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে।

জানা গেছে, স্মরণকালের সর্ববৃহৎ এ জনসভা সফল করতে ইতোমধ্যেই আওয়ামী লীগ দলের সকল অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, শ্রমিক লীগ, কৃষক লীগ, রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন আসনের সংসদ সদস্য, বিভিন্ন থানার নেতাসহ অন্যান্য ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সঙ্গে মতবিনিময় ও প্রস্তুতি সভা শেষ করেছে।

প্রায় দু’সপ্তাহ যাবত জনসভায় যোগ দিতে রাজধানীর প্রতিটি এলাকাসহ আশাপাশের বিভিন্ন জেলায় মাইকযোগে ব্যাপক প্রচারণা চালানো হচ্ছে। আজ বুধবার (০৭ মার্চ) দুপুর ২টায় ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের স্থান সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত হচ্ছে এ জনসভা।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এ জনসভায় রাজধানী ঢাকা ছাড়াও আশপাশের জেলা টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী জেলার বিপুল সংখ্যক নেতাকমী যোগ দেবে। বিপুল সংখ্যক বাস, ট্রাক ও রেলযোগে নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আসবে।

এছাড়াও জাতীয় নির্বাচনের বছরের এ জনসভায় রাজধানীর বিভিন্ন সংসদীয় আসনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী নেতারা নিজেদের কর্মী-সমর্থক নিয়ে ব্যাপক শো-ডাউনের প্রস্তুতিও নিয়ে রেখেছেন।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ ‘বিশপ্রামাণ্য দলিল’ হিসেবে ইউনেস্কোর স্বীকৃতি পাওয়ার পর এবার প্রথমবারের মতো দিবসটি উদযাপন করতে যাচ্ছে ক্ষমতাসীন দলটি।

এই দিবস পালনের অংশ হিসেবে জনসভা আয়োজিত হলেও ইউনেস্কোর স্বীকৃতি বিশেষমাত্রা লাভ করেছে। এ কারণেই এই জনসভাকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। আর জনসভাকে বর্ণাঢ্য করতে গোটা রাজধানীজুড়ে বর্ণাঢ্য সাজসজ্জা করা হয়েছে। জনসভাস্থলসহ রাজধানীজুড়ে বিশাল আকারের ডিজিটাল বিলবোর্ড, ব্যানার-ফেস্টুনে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ঘটনা প্রবাহ তুলে ধরা হয়েছে।

এ জনসভাকে জনসমুদ্রে পরিণত করতে যুবলীগ ও ছাত্রলীগ ব্যাপক শোডাউন করার উদ্যোগ নিয়েছে। যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির চেয়ারম্যান ও যুব জাগরণের মহানায়ক মোহাম্মদ ওমর ফারুক চৌধুরী দফায় দফায় যুবলীগের উত্তর ও দক্ষিণের নেতা-কর্মীদের নিয়ে প্রস্তুতি সভা করেছেন। প্রায় দু’লক্ষাধিক দলীয় নেতা-কর্মীদের সমাগমের পাশাপাশি শোডাউনেও চমক দেখাতে চায় দলটির এ প্রধান ‘ভ্যানগার্ড’।

এ জনসভায় যুবলীগের ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন ইউনিটের নেতা-কর্মীরা যোগ দেবেন। ময়মনসিংহ মহানগর যুবলীগের আহবায়ক মোহাম্মদ শাহীনুর রহমান ও সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক রাসেল পাঠানের নেতৃত্বে হাজার হাজার নেতা-কর্মী সকালেই স্পেশাল ট্রেনে রাজধানীতে গিয়ে পৌঁছবেন। ইতোমধ্যে রেলমন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী যুবলীগের এ ইউনিটের জন্য স্পেশাল ট্রেন বরাদ্দ দিয়েছে।

যুবলীগের কেন্দ্রীয় সূত্র নিশ্চিত করেছে, এ জনসভায় যুবলীগ চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীর নেতৃত্বে লাল-সবুজের জমিনে হাজার হাজার নৌকা নিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সকাল ১০ টার মধ্যে উপস্থিত হবে যুবলীগের নেতাকর্মীরা। নেতা-কর্মীদের গায়ে থাকবে সবুজ টি-শার্ট আর মাথায় সবুজ ক্যাপ। ব্যতিক্রমী এক শোডাউনে প্রকম্পিত হবে ঢাকার রাজপথ।

যুবলীগ চেয়ারম্যান আলহাজ্ব ওমর ফারুক চৌধুরী জানিয়েছেন, ঐতিহাসিক এ দিনকে বিশেষ মর্যাদায় পালন ও জনসভাকে দৃষ্টিনন্দন করতে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এ জনসভার মাধ্যমে আমরা প্রমাণ করবো দেশের আপামর যুব সমাজ রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা’র সঙ্গে আছে।

নির্বাচনী বছরে ঢাকায় প্রথম এ জনসভায় শোডাউনে চমক দেখাতে চায় বাংলাদেশ ছাত্রলীগও। ইতোমধ্যে এ ছাত্র সংগঠনটি ব্যাপক প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। জনসভায় বিপুল লোকসমাগমের নেতৃত্বে থাকবে মূলত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মহানগর উত্তর, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এবং ইডেন কলেজ ছাত্রলীগ।

দলীয় সূত্র জানায়, এ জনসভাকে স্বার্থক ও সাফল্যমন্ডিত করে তুলতে শুধু মাইকিং আর লিফলেট বিতরণ কর্মসূচির মাধ্যমেই নিজেদের সীমাবদ্ধ রাখেনি ছাত্রলীগ। গত কয়েকদিন সকাল-রাত রাজধানীর বিভিন্ন ইউনিটে প্রস্তুতি সভা করেছে ছাত্রলীগ। এসব প্রস্তুতি সভায় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক এস.এম.জাকির হোসাইনসহ দলটির শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

এ জনসভাকে সফল করতে ছাত্রলীগের ২০টি টিম প্রায় এক সপ্তাহ যাবত পূর্ণোদ্যমে প্রচারণায় অংশগ্রহণ করে। এদিন ছাত্রলীগের কমপক্ষে ৮০ হাজার নেতা-কর্মী জনসভায় যোগ দেবে বলে নিশ্চিত করেছে দলীয় দায়িত্বশীল সূত্র।

সূত্র মতে, ছাত্রলীগের লোগো সম্বলিত ক্যাপ মাথায় দিয়ে আর হাতে সংগঠনের পতাকা নিয়ে কমপক্ষে ১৫ হাজার নেতা-কর্মীর বিশাল শোডাউনের প্রস্তুতি নিয়েছে ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগ। বাদ্যযন্ত্রের তালে তালে সুশৃঙ্খলভাবে নেতা-কর্মীরা ছুটবে রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের দিকে। ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সভাপতি সৈয়দ মিজানুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন আহমেদ এ দীর্ঘ শোডাউনের নেতৃত্ব দেবেন।

সংগঠন সূত্র জানায়, মূলত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দলীয় নেতা-কর্মীদের উজ্জীবিত করার পাশাপাশি নিজেদের সাংগঠনিক শক্তিরও জানান দিতে চায় সাইফুর রহমান সোহাগ ও এস.এম.জাকির হোসাইনের গুডবুকে থাকা এ গুরুত্বপূর্ণ ইউনিটটি।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সভাপতি সৈয়দ মিজানুর রহমান কালের আলোকে বলেন, ‘সব ইউনিয়ন এবং ওয়ার্ড থেকে দলীয় নেতা-কর্মীরা সুশৃঙ্খলভাবে আসবেন। সকাল ১০ টার মধ্যে আমরা সমাবেশস্থলে প্রবেশ করবো।

নেত্রীর বক্তব্য থেকে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে আমরা একটি সুস্পষ্ট গাইডলাইন পাবো। এ জনসভা থেকেই আমরা একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের চ্যালেঞ্জে জয়ী হতে প্রস্তুতি গ্রহণ করবে।’

এছাড়া স্মরণকালের বিশাল এ জনসভায় মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ, শ্রমিক লীগের পক্ষ থেকেও আলাদাভাবে লোক সমাগম করা হবে। এ জনসভায় অনুষ্ঠানের মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে লেকের পূর্বপাশে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীক নৌকার আদলেই। মঞ্চের কাজও ইতোমধ্যেই শেষ হয়েছে।

মঞ্চের দক্ষিণ অংশে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) উদ্যোগে প্রস্তুত করা হয়েছে ‘হেলথ ক্যাম্প’, এমন তথ্য জানিয়েছেন সংগঠনের মহাসচিব অধ্যাপক ডা: এম.এ.আজিজ।

মঙ্গলবার (০৬ মার্চ) বিকেলে জনসভাস্থল পরিদর্শন করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, একাত্তরের চেতনাকে তৃণমূলে পৌঁছে দেয়ার আহ্বান থাকবে বুধবারের সমাবেশে। সাম্প্রদায়িক বিষবৃক্ষ উৎপাটনে জনগণের সহযোগিতা চাইবেন নেত্রী।

কালের আলো/এসএস/এমআর

Print Friendly, PDF & Email