ময়মনসিংহের পাবলিক লাইব্রেরির সেকাল-একাল
প্রকাশিতঃ 12:04 pm | March 04, 2018

বিশেষ প্রতিবেদক, কালের আলো:
বাংলাদেশ পরিষদ থেকে সরকারি গণগ্রন্থাগার। ময়মনসিংহের পাবলিক লাইব্রেরির সেকাল-একাল। মাঝে পেরিয়েছে তিন দশক। শিক্ষা নগরী ময়মনসিংহেও বিবর্তন এসেছে পঠন-পাঠনে। ওই সময়ে পাঠাগার আন্দোলন ছিল প্রাথমিক পর্যায়ে। তদুপরি সমৃদ্ধ ছিল লাইব্রেরি।
ময়মনসিংহ নগরীর জিকেএমসি সাহা রোডে ছিল বাংলাদেশ পরিষদ। তখন বইপড়া সামাজিক আন্দোলন হিসেবে দাঁড়িয়েছিল। সেই সময়টাকেই ধরা হয় জ্ঞান ও মুক্ত বুদ্ধি চর্চার সোনালি অধ্যায়। সময়টাতে ছিল প্রজন্মের প্রতিভা বিকাশের নানা উৎসাহব্যঞ্জক আয়োজন ও কর্মসূচি।
সেদিনের কথা আজো ভুলেননি ময়মনসিংহ সাহিত্য সংসদের সাধারণ সম্পাদক ইয়াজদানী কোরায়শী কাজল। গত বছর সাহিত্য বিভাগে স্বাধীনতা পুরস্কার বিজয়ী সাহিত্যিক, ইতিহাসবিদ, গবেষক ও অনুবাদক গোলাম সামদানী কোরায়শী’র জ্যেষ্ঠ সন্তান তিনি।
এ কবি ও সাহিত্যিক বলেন, উচ্ছ্বল তারুণ্যে কলেজ থেকে হাঁটা পথে সোজা চলে যেতাম পাবলিক লাইব্রেরিতে। ওই সময় সেখানে অনুষ্ঠান হতো নিয়মিত। লেখক, কবি ও সাহিত্যিকদের মিলনমেলা বসতো।
আর এখন সরকারি গণগ্রন্থাগারের পরিবেশ পাঠাগার সুলভ নয়। সমসাময়িক অনুবাদ গ্রন্থও মেলে না সেখানে। নানা কারণেই সংস্কৃতি কর্মী ও বইপড়–য়াদের এ পাঠাগারের সঙ্গে যোগাযোগও অনেক কম।
প্রায় ৬ বছর আগে নগরীর ছোট বাজার মুক্তিযোদ্ধা সড়ক সংলগ্ন জিকেএমসি সাহা রোডের রূপালী ব্যাংকের দু’তলার ভাড়াটিয়া ভবন থেকে নিজ ভবনে চলে আসে ময়মনসিংহ জেলা সরকারি গণগ্রন্থাগার। কিন্তু ফেলে আসা অতীতের সেই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারেনি এ গ্রন্থাগার। ফলে দিন দিন হারাচ্ছে আকর্ষণ।
আর এর প্রধান কারণ হিসেবে ময়মনসিংহের কবি ও সাহিত্যিকরা অভিযোগ করেন, এখানে যারা দায়িত্বে আছেন তারা চাকরি করছেন মাত্র। তারা নিজেরাও বই পড়ার লোক কীনা সন্দেহ রয়েছে। এ লাইব্রেরির ভেতরের পরিবেশ যেমন পাঠক টানে না তেমনি পাঠক শ্রেণি বিকাশেও নেই কোন আবেদন।
‘স্থানীয় প্রশাসনেরও পাবলিক লাইব্রেরির দিকে কোন দৃষ্টি নেই। এটাকে কেন্দ্র করে জ্ঞান ভিত্তিক সমাজ বিকাশের ব্যাপারেও কখনো কাউকে প্রাসঙ্গিক বক্তব্য দিতে দেখা যায় না। তারাও কখনো লাইব্রেরিমুখী হন না, বলছিলেন একজন।
আগের পাবলিক লাইব্রেরির চিত্রপট তুলে ধরে ময়মনসিংহের বিশিষ্ট কবি ও সাহিত্যিক আশিক চৌধুরী বলেন, আগে জেলা সরকারি গণগ্রন্থাগারে শুধু কবিতা আবৃত্তি, রচনা প্রতিযোগিতা, বই পড়া কর্মসূচি, শিশুদের নিয়ে পাঠচক্রই হতো না। এখানে সৃজনশীলতা বিকাশে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতারও আয়োজন করা হতো।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ পরিষদকে কেন্দ্র করে সেই সময় ময়মনসিংহে প্যারিসের মতো জ্ঞান ও মুক্ত বুদ্ধি চর্চার একটি সামাজিক আন্দোলন গড়ে উঠেছিল। স্টেশন রোডের তাজমহলের কবিতা আড্ডা এবং মুক্ত বাতায়ন পাঠচক্র নামে মুক্ত বুদ্ধি চর্চা দীর্ঘদিন সক্রিয় ছিল।
সাহিত্য পদক বিজয়ী প্রয়াত গোলাম সামদানী কোরায়শী, অধ্যাপক যতীন সরকার, খগেশ কিরণ তালুকদার ও বিশিষ্ট সাংবাদিক মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল বাংলাদেশ পরিষদকেন্দ্রীক বইপড়া মানুষ ছিলেন। সেই মুক্ত বাতায়ন ভেঙে যাবার পর ময়মনসিংহ সাহিত্য সংসদ বীক্ষণ নামে একটি পাঠচক্র প্রকল্প নিয়মিত শুক্রবার পরিচালনা করে আসছে।
ময়মনসিংহ মুসলিম ইন্সটিটিউট পাঠাগারও প্রায় ৫০ বছর বয়সী। বছর দুয়েক আগে ব্রক্ষপুত্র নদছোঁয়া শিল্পাচার্য জয়নুল উদ্যানে ময়মনসিংহ পৌরসভার উদ্যোগে গড়ে তুলা হয়েছে ভাষা সৈনিক এম.এ.মতিন স্মৃতি পাঠাগার। এছাড়াও অতি সম্প্রতি শিক্ষা নগরীতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে অধ্যাপক গোলাম সামদানী কোরায়শী পাঠাগার।
কিন্তু জেলা সরকারি গণগ্রন্থাগার রয়েছে অন্ধকারে। তরুণ প্রজন্মকে পঠন পাঠনে উৎসাহিত করতে সরকারি গণগ্রন্থাগার কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব রয়েছে। এমনকি এ পাবলিক লাইব্রেরির পরিবেশও সুবিধের নয়, বলছিলেন কবি স্বাধীন চৌধুরী।
কবি নিহার রঞ্জনের বক্তব্য হচ্ছে- ময়মনসিংহ পাবলিক লাইব্রেরিতে বই অপ্রতুল। নিরিবিলি পড়ার পরিবেশ নেই। গবেষণা, লোক সংস্কৃতির ওপর তথ্য সংক্রান্ত বই দরকার। একই সঙ্গে এ অঞ্চলের গবেষণা গ্রন্থগুলো যেন সহজলভ্য হয়ে উঠে সেই ব্যবস্থাও করতে হবে।
কালের আলো/এসএকে/ওএইচ