শেখ হাসিনার মামলায় চলছে শেষ সাক্ষীর জেরা
প্রকাশিতঃ 1:26 pm | October 07, 2025

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:
জুলাই-আগস্টে গণহত্যার দায়ে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাক্ষ্য দেওয়া মূল তদন্ত কর্মকর্তা মো. আলমগীরকে দ্বিতীয় দিনের মতো আজও জেরা করছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন।
মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) দুপুর পৌনে ১২টায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেলে এ জেরা শুরু হয়।
ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশনের পক্ষে রয়েছেন প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম। সঙ্গে রয়েছেন প্রসিকিউটর আবদুস সাত্তার পালোয়ানসহ অন্যরা।
সোমবার (৬ অক্টোবর) তদন্ত কর্মকর্তা আলমগীরকে দিনভর জেরা করেন আমির হোসেন। তবে শেষ না হওয়ায় আজ পর্যন্ত মুলতবি করেন ট্রাইব্যুনাল। এরই ধারাবাহিকতায় ফের জেরা চলছে।
এর আগে গত ৩০ সেপ্টেম্বর শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে তৃতীয় দিনের মতো সাক্ষ্য দেন আলমগীর। তিনি এ মামলার ৫৪তম বা সর্বশেষ সাক্ষী। জবানবন্দিতে বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরেন তিনি। এর মধ্যে গত বছরের জুলাই আন্দোলন চলাকালীন ৪১টি জেলার ৪৩৮টি স্থানে হত্যাকাণ্ডের ও ৫০টিরও বেশি জেলায় মারণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন।
২৯ সেপ্টেম্বর দ্বিতীয় দিনের মতো জবানবন্দি দেন এ তদন্ত কর্মকর্তা। সেদিনও বিভিন্ন তথ্যের পাশাপাশি নিজের জব্দ করা জুলাই আন্দোলনের নৃশংসতা নিয়ে যমুনা টেলিভিশনের একটি প্রতিবেদন প্রদর্শন করা হয় ট্রাইব্যুনালে। এ ছাড়া গত বছরের ৫ আগস্ট যাত্রাবাড়ীতে পুলিশের হত্যাযজ্ঞের ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরা হয়। এমনকি জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার ওপর তিন লাখ পাঁচ হাজার গুলি ছোড়া হয়েছিল বলে জবানবন্দিতে জানিয়েছেন তিনি। তদন্ত কর্মকর্তার জবানবন্দি সরাসরি সম্প্রচার করা হয় বাংলাদেশ টেলিভিশনে। এ ছাড়া বিবিসি, আল-জাজিরা, আমার দেশে প্রচারিত প্রামাণ্য চিত্র দেখানো হয়।
২৮ সেপ্টেম্বর তদন্ত কর্মকর্তা আলমগীরের জবানবন্দি শুরু হয়। ওইদিন তার জব্দ করা ১৭টি ভিডিও ট্রাইব্যুনালে প্রদর্শিত হয়। এসব ভিডিওতে জুলাই-আগস্টের নির্মমতা ফুটে ওঠে। সবমিলিয়ে ২৫ কার্যদিবসে শেখ হাসিনার মামলায় মোট সাক্ষ্য দিয়েছেন ৫৪ জন। শেষ সাক্ষীর জেরা শেষ হলেই যুক্তিতর্ক ও রায়ের দিকে এগোবে শেখ হাসিনার এ মামলা।
২৪ সেপ্টেম্বর এ মামলার ২২তম দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা শেষ হয়। ওইদিন সাক্ষ্য দেন বিশেষ তদন্ত কর্মকর্তা ও প্রসিকিউটর তানভীর হাসান জোহা। পরে তাকে জেরা করেন আমির হোসেন।
মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনও ৩৬ নম্বর সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দিয়েছেন। নিজের দায় স্বীকার করে আগেই হয়েছেন রাজসাক্ষী। এ ছাড়া সাক্ষীদের জবানবন্দিতে গত বছরের জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে দেশজুড়ে হত্যাযজ্ঞ চালানোর বীভৎস বর্ণনা উঠে এসেছে। আর এসবের জন্য দায়ী করে শেখ হাসিনা, কামালসহ জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চেয়েছেন শহীদ পরিবার ও প্রত্যক্ষদর্শীরা।
গত ১০ জুলাই শেখ হাসিনা, কামাল ও মামুনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। এ মামলায় তাদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ আনে প্রসিকিউশন। আনুষ্ঠানিক অভিযোগ মোট আট হাজার ৭৪৭ পৃষ্ঠার। এর মধ্যে তথ্যসূত্র দুই হাজার ১৮ পৃষ্ঠার, জব্দতালিকা ও দালিলিক প্রমাণাদি চার হাজার পাঁচ পৃষ্ঠার ও শহীদদের তালিকার বিবরণ দুই হাজার ৭২৪ পৃষ্ঠার। সাক্ষী করা হয়েছে ৮১ জনকে। গত ১২ মে চিফ প্রসিকিউটরের কাছে এ মামলার প্রতিবেদন জমা দেন ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার কর্মকর্তারা।
কালের আলো/এসএকে