১০ হাজারের বেশি ম্যুরাল নির্মাণ, ৬৪ জেলার তথ্য চাইলো দুদক
প্রকাশিতঃ 12:22 pm | July 21, 2025

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:
মুজিববর্ষ উপলক্ষে সারাদেশে নির্মিত শেখ মুজিবুর রহমানের দশ হাজারের বেশি ম্যুরাল ও ভাস্কর্যের আর্থিক হিসাব চেয়ে দেশের ৬৪টি জেলা পরিষদে চিঠি পাঠিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এই উদ্যোগের পেছনে রয়েছে রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে হাজার হাজার কোটি টাকার অপচয়ের অভিযোগ।
সোমবার (২১ জুলাই) দুদকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
জানা গেছে, এসব অভিযোগের প্রাথমিক অনুসন্ধানে এক উপ-পরিচালকের নেতৃত্বে সাত সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে কমিশন।
দুদকের পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনা, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও তার বোন শেখ রেহানাসহ অন্যান্যদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে প্রায় চার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে মুজিববর্ষ পালন এবং শেখ মুজিবুর রহমানের দশ হাজারেরও বেশি ম্যুরাল ও ভাস্কর্য নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে। ওই অর্থের অপচয় ও রাষ্ট্রীয় সম্পদের ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি অনুসন্ধানের জন্য নির্ভরযোগ্য রেকর্ডপত্র পর্যালোচনা একান্ত জরুরি।
চিঠিতে জেলা পরিষদগুলোকে অনুরোধ করা হয়েছে, মুজিববর্ষ উপলক্ষে ব্যয়িত অর্থের পরিমাণ, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের নাম, প্রকল্পে জড়িত কর্মকর্তাদের নাম-পরিচয়, জেলার কোথায়, কতগুলো ম্যুরাল বা ভাস্কর্য নির্মিত হয়েছে, এসব নির্মাণে মোট কত টাকা খরচ হয়েছে।
এসব তথ্যের প্রমাণসহ সত্যায়িত কাগজপত্র জরুরি ভিত্তিতে পাঠাতে বলা হয়েছে। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, বিষয়টি অতি জরুরি। অনুসন্ধানের জন্য সময়ের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, জেলা পরিষদের পাশাপাশি এর আগে একই ধরনের চিঠি পাঠানো হয়েছে বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলকেও।
উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের আগস্টে ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর রাষ্ট্রীয় অর্থের অপব্যবহার নিয়ে নানা অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। মুজিববর্ষ উদযাপন নিয়েও ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ উঠে আসতে থাকে। চলতি বছরের এপ্রিল মাসে দুদক জানায়, মুজিববর্ষ উপলক্ষে নেওয়া প্রকল্পগুলোতে প্রায় চার হাজার কোটি টাকার ব্যয় হয়েছে, যার অধিকাংশের প্রক্রিয়া ও কার্যকারিতা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন রয়েছে। এই অনুসন্ধানের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহেনা।
সূত্র বলছে, আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে ২০১৯-২০ অর্থবছর থেকে শুরু করে ছয় অর্থবছরে মোট ১ হাজার ২৬১ কোটি ৫ লাখ টাকা সরকারি কোষাগার থেকে ব্যয় করা হয়েছে। তবে দুদক সূত্র বলছে, প্রকৃত ব্যয় আরও অনেক বেশি। প্রায় চার হাজার কোটি টাকা। যার সিংহভাগই ম্যুরাল, ভাস্কর্য, আলোকসজ্জা ও অনুষ্ঠান ব্যবস্থাপনার পেছনে ব্যয় করা হয়।
এই প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়নে বিভিন্ন জেলা পরিষদ, মন্ত্রণালয়, দপ্তর, সরকারি গণমাধ্যম ও উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ যুক্ত ছিল। ফলে সুনির্দিষ্ট তথ্য সংগ্রহের জন্য ৬৪টি জেলার পৃথক হিসাব চেয়ে অনুসন্ধান জোরদার করা হয়েছে।
দুদক জানিয়েছে, একই অভিযোগে কয়েকজন কর্মকর্তা ও প্রকল্প সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলবও করা হয়েছে। প্রয়োজনে সাবেক শীর্ষ পর্যায়ের রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।
সরকারি অর্থ ব্যয়ের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতেই এই অনুসন্ধান চালানো হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন দুদকের এক কর্মকর্তা।
কালের আলো/এমডিএইচ