শহরের জন্য কাজ করা ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানকে নাগরিক পদক দেবে ডিএনসিসি

প্রকাশিতঃ 4:05 pm | July 17, 2025

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক, কালের আলো:

ঢাকা শহরকে বাসযোগ্য শহর হিসেবে গড়ে তুলতে যেসব নাগরিক এবং প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখছেন তাদের স্বীকৃতি দিতে ‘নাগরিক পদক ২০২৫’ প্রদানের উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি)।

প্রথমবারের মতো ডিএনসিসি এই নাগরিক পদক দিতে যাচ্ছে। নগর উন্নয়ন, পরিবেশ সংরক্ষণ, সামাজিক সেবা ও জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে অবদান রাখা নাগরিক, প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনকে এ পদক প্রদান করা হবে। ‘আমার শহর, আমার দায়িত্ব’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে একটি দায়িত্বশীল নাগরিক সমাজ গড়ে তুলতে ডিএনসিসি এ আয়োজন করেছে।

মঙ্গলবার (১৭ জুলাই) গুলশানে ডিএনসিসির নগরভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি জানিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ।

তিনি বলেন, এই পদকের অন্যতম লক্ষ্য হলো নাগরিকদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি ও অংশগ্রহণমূলক মনোভাব তৈরি করা। নাগরিক উদ্যোগ, পরিবেশবান্ধব চিন্তা ও সামাজিক দায়িত্ববোধকে স্বীকৃতি ও উৎসাহ দেওয়ার মাধ্যমে একটি টেকসই নগর ভবিষ্যৎ গড়ে তোলা সম্ভব। এই উদ্যোগ তরুণ প্রজন্মকেও সামাজিক নেতৃত্ব ও উদ্ভাবনী চর্চায় যুক্ত করতে সহায়তা করবে। শিক্ষা, প্রযুক্তি, সংস্কৃতি সব ক্ষেত্রেই যারা ইতিবাচক পরিবর্তনের চালক, তারাই নাগরিক পদকের প্রকৃত দাবিদার।

প্রশাসক আরও বলেন, আমরা এমন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে সম্মান জানাতে চাই, যারা শহরের উন্নয়নে অর্থবহ অবদান রাখছেন। শুধু সম্মান জানানোই নয়, পর্যায়ক্রমে তাদের সিটি কর্পোরেশনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায়ও অন্তর্ভুক্ত করা হবে।

নাগরিক পদক ২০২৫-এ ছয়টি বিভাগে মোট ৩০ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানকে সম্মাননা প্রদান করা হবে। ব্যক্তি উদ্যোগ থেকে শুরু করে সামাজিক সংগঠন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ক্ষুদ্র ব্যবসা, মিডিয়া বা কনটেন্ট নির্মাতা এবং উদ্ভাবক বা স্টার্ট-আপ—সব ক্ষেত্রেই যারা শহরের উন্নয়নে সৃজনশীল ও ইতিবাচক ভূমিকা রাখছেন, তারা মনোনীত হওয়ার সুযোগ পাবেন।

পুরস্কারের জন্য চলতি মাস থেকেই মনোনয়ন গ্রহণ করা হবে ডিএনসিসির অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে। আগ্রহী ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনগুলো নির্ধারিত ফরমে প্রকল্পের বিবরণ, ছবি ও ভিডিওসহ আবেদন জমা দিতে পারবেন।

যাচাই-বাছাইয়ের জন্য গঠিত স্ক্রুটিনি কমিটি প্রাথমিকভাবে আবেদনগুলো পর্যালোচনা করবে এবং পরে জুরি বোর্ডের মাধ্যমে চূড়ান্ত বিজয়ীদের নির্বাচন করা হবে। এই জুরি বোর্ডে থাকবেন নগর পরিকল্পনাবিদ, সমাজসেবক, শিক্ষাবিদ, মিডিয়া প্রতিনিধি ও ডিএনসিসির একজন সাবেক কর্মকর্তা—যারা অভিজ্ঞতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন।

পুরস্কার হিসেবে বিজয়ীদের দেওয়া হবে সিটি কর্পোরেশন স্বীকৃত সনদপত্র, একটি সম্মানসূচক ক্রেস্ট ও মেডেল এবং প্রতীকী আর্থিক সম্মাননা। ডিএনসিসি বিজয়ীদের কর্মকাণ্ড ও অবদান গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করবে, যাতে তাদের উদ্যোগ সমাজে আরও অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে ওঠে। এটি কেবল একটি পুরস্কার প্রদান নয়, বরং একটি দীর্ঘমেয়াদি উৎসাহ ও স্বীকৃতির যাত্রা।

যে কোনো বয়স, পেশা বা লিঙ্গের বাংলাদেশি নাগরিক কিংবা প্রতিষ্ঠান নাগরিক পদকের জন্য আবেদন করতে পারবেন। তবে সক্রিয় রাজনীতিক, দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান এ পদকের জন্য মনোনীত হতে পারবেন না।

পুরস্কার প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা বজায় রাখতে ডিএনসিসি মনোনয়ন ও বাছাই প্রক্রিয়ার সব তথ্য ওয়েবসাইটে প্রকাশ করবে এবং সংশ্লিষ্ট কমিটির সদস্যদের পরিচয়ও উন্মুক্ত রাখা হবে।

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে নগরবাসীকে আহ্বান জানিয়ে বলা হয়, আপনার দায়িত্বপূর্ণ কর্মকাণ্ডকে প্রকাশ্যে আনুন, সমাজের জন্য আপনার অবদানকে সম্মান জানান। নাগরিক পদক ২০২৫ সেই সম্মান যেখানে দায়িত্ব থেকেই গড়ে ওঠে গৌরব।

কালের আলো/এসএকে