১৩ বছর পর কারামুক্ত জামায়াত নেতা এটিএম আজহার
প্রকাশিতঃ 9:51 am | May 28, 2025

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়াত নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলাম মৃত্যুদণ্ডাদেশ থেকে খালাস পেয়ে কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন। বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি মুক্তি পেয়েছেন। এর আগ পর্যন্ত তিনি কেরানীগঞ্জ কারাগারের তত্ত্বাবধানে এ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন।
আজহারুল ইসলামের মুক্তির আগে তাকে খালাস দিয়ে আপিল বিভাগের রায়ের কপি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে (কেরানীগঞ্জ) এসে পৌঁছায়। সেখানে কাগজপত্র যাচাই-বাছাই শেষে কারা কর্তৃপক্ষ আজহারুল ইসলামের মুক্তির প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে।
বুধবার (২৮ মে) ঢাকা বিভাগের কারা উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি প্রিজন্স) মো. জাহাঙ্গীর কবির তার মুক্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেন। এ দিন সকাল ৯টা ৫ মিনিটে হাসপাতাল থেকে মুক্তি দেওয়া হয় আজহারুল ইসলামকে।
এর আগে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন সাত বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ আপিল বেঞ্চ এ টি এম আজহারুল ইসলামের আপিল মঞ্জুর করে খালাসের রায় দেন।
রায়ে সর্বোচ্চ আদালত ২০১৪ সালে এ টি এম আজহারের বিষয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেওয়া রায় ও মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে আপিল বিভাগের দেওয়া আগের রায় বাতিল ঘোষণা করেছেন। এ ছাড়া অন্য কোনো মামলা না থাকলে তাকে অবিলম্বে মুক্তি দিতেও বলা হয়েছে।
আদালতে আবেদনের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এহসান এ সিদ্দিক ও আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের পক্ষে ছিলেন প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামীম। এর আগে ৬ মে প্রথম দিনের মতো শুনানি হয়।
রায় ঘোষণার সময় উপস্থিত ছিলেন—জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের, ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম মাছুম, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান, এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, মোয়াজ্জেম হোসেন হেলাল, নির্বাহী পরিষদ সদস্য আবদুল হালিম, মোবারক হোসাইন, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ছেলে মাসুদ সাঈদী ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি দেলোয়ার হোসেন সাঈদীসহ আরও অনেকে।
একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে রংপুর অঞ্চলে গণহত্যা-হত্যা, অপহরণ, ধর্ষণ, আটক, নির্যাতন ও গুরুতর জখম এবং বাড়িঘরে লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগের মতো নয় ধরনের ছয়টি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছিল এ টি এম আজহারের বিরুদ্ধে।
২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেওয়া রায়ে দুই নম্বর, তিন নম্বর এবং চার নম্বর অভিযোগে ফাঁসির দণ্ডাদেশ পান জামায়াতে ইসলামীর তৎকালীন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আজহারুল ইসলাম। এ ছাড়া পাঁচ নম্বর অভিযোগে অপহরণ, নির্যাতন, ধর্ষণসহ বিভিন্ন অমানবিক অপরাধের দায়ে ২৫ বছর ও ৬ নম্বর অভিযোগে নির্যাতনের দায়ে পাঁচ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়।
ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে আপিলে শুনানির পর ২০১৯ সালের ৩১ অক্টোবর মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে রায় ঘোষণা করেন তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন চার বিচারপতির আপিল বেঞ্চ। আপিল বিভাগের রায়ে দুই, তিন, চার (সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে) ও ছয় নম্বর অভিযোগের দণ্ড বহাল রাখা হয়। আর পাঁচ নম্বর অভিযোগ থেকে তাকে খালাস দেওয়া হয়।
ওই দিন আদালতে আসামিপক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী (প্রয়াত) খন্দকার মাহবুব হোসেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন (প্রয়াত) অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। ২০২০ সালের ১৫ মার্চ আপিল বিভাগের রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশিত হয়। ওই রায়ের রিভিউ চেয়ে ২০২০ সালের ১৯ জুলাই আপিল বিভাগে আবেদন করেন এ টি এম আজহারুল ইসলাম। ২৩ পৃষ্ঠার পুনর্বিবেচনার আবেদনে মোট ১৪টি যুক্তি উপস্থাপন করা হয়।
ওই পুনর্বিবেচনার আবেদনের শুনানি শেষে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় মৃত্যুদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে এ টি এম আজহারুল ইসলামকে আপিলের অনুমতি দেন। এরপর তিনি আপিল করেন।
কালের আলো/এমডিএইচ