পাকিস্তানের আইএমএফ ঋণ কেন আটকাতে পারলো না ভারত

প্রকাশিতঃ 2:11 pm | May 15, 2025

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, কালের আলো:

গত সপ্তাহে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) পাকিস্তানের জন্য এক বিলিয়ন ডলারের ঋণ অনুমোদন করেছে। ভারতের তীব্র আপত্তি সত্ত্বেও শেষ পর্যন্ত অনুমোদিত হয় এই ঋণ। এই সিদ্ধান্ত এমন সময়ে এলো, যখন ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছিল এবং পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে একটি অপ্রত্যাশিত যুদ্ধবিরতি ঘোষিত হয়।

আইএমএফ জানায়, পাকিস্তান তাদের সংস্কার কর্মসূচি যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করছে এবং দেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধার হচ্ছে। এ কারণে ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি অনুমোদন করা হয়েছে। একইসঙ্গে তারা জলবায়ু পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় পাকিস্তানকে সহায়তা করার কথাও জানিয়েছে, যা ভবিষ্যতে আরও ১ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলারের তহবিল সরবরাহের পথ খুলে দিতে পারে।

ভারত এই ঋণ নিয়ে আপত্তি তোলে দুটি কারণে। প্রথমত, পাকিস্তানের সংস্কার বাস্তবায়নের অতীত রেকর্ড খারাপ হওয়ায় তারা এ ধরনের ঋণের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। দ্বিতীয়ত, ভারত আশঙ্কা প্রকাশ করে যে, এই অর্থ ‘রাষ্ট্রসমর্থিত আন্তঃদেশীয় সন্ত্রাসবাদে’ ব্যবহৃত হতে পারে। যদিও পাকিস্তান বরাবরই এই অভিযোগ অস্বীকার করে এসেছে।

ভারতে আপত্তি পাত্তা পেলো না কেন
আন্তর্জাতিক কাঠামোর বাস্তবতায় ভারত চাইলেও আইএমএফের এই সিদ্ধান্তে প্রভাব ফেলতে পারেনি। আইএমএফ বোর্ডে ভারতের ভোটাধিকার মাত্র ২ দশমিক ৬ শতাংশ, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের রয়েছে ১৬ দশমিক ৪৯ শতাংশ। উপরন্তু, আইএমএফে কোনো প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ভোট দেওয়ার সুযোগ নেই—সদস্যরা কেবল সমর্থন জানাতে বা ভোটদানে বিরত থাকতে পারেন। সিদ্ধান্তগুলো হয় বোর্ডের ঐকমত্যের ভিত্তিতে।

বিশ্লেষকদের মতে, ভারতের আপত্তি মূলত প্রতীকী ছিল। আইএমএফের কাঠামোগত ও প্রক্রিয়াগত বাধার কারণে দিল্লি জানত যে বাস্তবে এই ঋণ আটকে দেওয়া সম্ভব নয়। তার ওপর, পাকিস্তান ২০২২ সালেই সন্ত্রাস অর্থায়ন রোধে কাজ করা ফিন্যান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্স (এফএটিএফ)-এর ধূসর তালিকা থেকে বেরিয়ে আসে—যা আইএমএফ বা বিশ্বব্যাংকের মতো সংস্থার থেকে তহবিল পাওয়ার ক্ষেত্রে আর কোনো বাধা তৈরি করে না।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ভারতের অভিযোগ উপস্থাপনের সঠিক মঞ্চ আইএমএফ নয়, বরং এফএটিএফ, যেখানে সন্ত্রাস অর্থায়নের বিষয়টি সরাসরি বিবেচনায় আসে। এফএটিএফ কোনো দেশকে কালো বা ধূসর তালিকাভুক্ত করলে সেটি আন্তর্জাতিক ঋণ পাওয়ার পথে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে।

সূত্র: বিবিসি

কালের আলো/এএএন