অনন্য তেজগাঁও জোনের ডিসি বিপ্লব সরকার

প্রকাশিতঃ 10:43 pm | April 18, 2019

আশিকুল পাঠান সেতু, ফিচার এডিটর, কালের আলো :

সেই শৈশব থেকেই হৃদয়ে লালন করেন, ধারণ করেন জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানকে। বঙ্গবন্ধুর এ ‘স্বপ্নসারথি’র নাম বিপ্লব কুমার সরকার।

নতুন প্রজন্মের মাঝে তিনি ছড়িয়ে দিতে চান বাঙালী জাতির মুক্তির সংগ্রামে অকাতরে নিজেকে বিলিয়ে দিয়ে ইতিহাসের মহানায়ক হয়ে ওঠা মহান স্বাধীনতার স্থপতিকে।

ফলে নিজের পেশাগত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি ‘বঙ্গবন্ধু পাগল’ অসাধারণ এবং বিশেষ বৈশিষ্ট্যের অধিকারী মানুষটি নিয়েছেন বিশেষ এক উদ্যোগ। দেশ ও দেশের মানুষের জন্য

বঙ্গবন্ধুর ভাবনা-দর্শন এবং ওই সময়ে বঙ্গবন্ধুর কারা জীবনের দিনলিপি নিয়ে বাংলা একাডেমি’র প্রকাশিত ‘কারাগারের রোজনামচা’ বইটিতে বিশেষ নজর দিয়েছেন এ পুলিশ কর্মকর্তা।

তাঁর নিজের ভাবনা আর স্বপ্ন থেকেই ‘কারাগারের রোজনামচা’ বইটি নিয়ে অনন্য এক উদ্যোগ নিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের এ উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি)।

বঙ্গবন্ধু রচিত এ বইটির ওপর কুইজ প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছেন তিনি।

এমনিতেই পেশাগত মর্যাদার কারণে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কর্মকর্তাদের মধ্যে তাকে বলা হয় সেরাদের সেরা। যিনি সেরা তাঁর উদ্যোগ তো হবেই অনন্য, অসাধারণ এমনটিই বলছেন সবাই।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের ছয়টি থানা (তেজগাঁও, তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল, মোহাম্মদপুর, আদাবর, শেরেবাংলা নগর ও হাতিরঝিল) এলাকায় অবস্থিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ইতোমধ্যেই তেজগাঁও বিভাগে কর্মরত পুলিশ কর্মকর্তারা ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস উপলক্ষ্যে ‘কুইজ প্রতিযোগিতা’র প্রশ্নপত্র বিতরন করেছেন।

জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ডিসি তেজগাঁও-ডিএমপি’র একটি বার্তা দেওয়া হয়েছে।

সেখানে বলা হয়েছে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রচিত ‘কারাগারের রোজনামচা’ পড় এবং প্রশ্নের উত্তর দিয়ে জিতো ল্যাপটপ, ট্যাবসহ অন্যান্য আকর্ষনীয় পুরস্কার।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের এ উদ্যোগের আদ্যোপান্ত সম্পর্কে বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) রাতে জনপ্রিয় গণমাধ্যম কালের আলো’র সঙ্গে কথা বলেন ডিসি বিপ্লব কুমার সরকার।

‘প্রথমত আমি চিন্তা করলাম, আমরা নিজেরা যে প্রজন্মের মানুষ আমরা স্কুল কলেজের পাঠ্যপুস্তকে কখনোই বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে পড়িনি।

৭৫’র পর বঙ্গবন্ধু এদেশে একটি নিষিদ্ধ নাম ছিলো। স্বৈরাচারেরা হত্যার পর বঙ্গবন্ধুকে নিষিদ্ধ করেছিলো। আমি চেয়েছি আমাদের দেশের ভবিষ্যত প্রজন্মকে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে জানাতে। অবশ্যই তাদের জানা উচিত সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ জাতির জনকের সংগ্রামী জীবন সম্পর্কে’ বলছিলেন ইতিবাচক কাজের জন্য পুলিশ বিভাগে স্বনামে খ্যাত এই কর্মকর্তা।

নিজের উদ্যোগের বিশালতা সম্পর্কে মেধাবী এ পুলিশ কর্মকর্তা কালের আলোকে বলছিলেন, ‘বঙ্গবন্ধু কত কষ্ট করে দল গঠন করেছেন, দেশ গঠন করেছেন পরবর্তী প্রজন্ম যেনো এই কষ্টগুলো সম্পর্কে জানতে পারে। কারণ বঙ্গবন্ধু তো আর একদিনে বঙ্গবন্ধু হননি।

তাঁর যে আজীবন সংগ্রাম এ দেশের প্রতি। দেশের মানুষের প্রতি গভীর মমত্ববোধ এসব বিষয়গুলো জাতি গঠনের ভবিষ্যত হাতিয়ার নতুন প্রজন্মকে জানাতে হবে, যোগ করেন বিপ্লব কুমার সরকার।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু ১২ বছর কারাগারে ছিলেন। এসব বিষয়াদি ভবিষ্যত প্রজন্ম না জানলে তখন ইতিহাস বিকৃত হবে। কাজেই পরবর্তী প্রজন্মের কাছে সঠিক ইতিহাসটি পৌছে দিতেই আমরা এই আয়োজন করেছি।’

বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে নতুন প্রজন্মকে জানাতে ডিসি বিপ্লবের এমন উদ্যোগ এবারই প্রথম নয়। চলতি বছর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে তিনি সমাজের অবহেলিত ও সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের ব্যতিক্রমধর্মী ফ্রেন্ডশিপ স্কুলের শতাধিক শিক্ষার্থী নিয়ে মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন করেছিলেন।

সেদিন এতিম শিশুদের ভালোবাসার প্রতীক গোলাপ ফুলে বরণ করে নিয়েছিলেন। তাদের নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো বঙ্গবন্ধু জাদুঘরে। এরপর শ্যামলী শিশুমেলাতে। সেখানে গিয়ে শিশুরা আনন্দে কাটিয়েছিলেন পুরোটি দিন।

সম্প্রতি রাইড শেয়ারিং অ্যাপ উবারে মোটরসাইকেল চালিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচিত হওয়া নারী শাহনাজ আক্তার পুতুলের চুরি হয়ে যাওয়া স্কুটিটি উদ্ধার করে গোটা দেশে প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন তেজগাঁও বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার বিপিএম, পিপিএম।

শুধু তাই নয়, দু’দিন ধরে রাইড শেয়ার করতে না পারার কারণে তেজগাঁও বিভাগের পক্ষ থেকে পুতুলের বাচ্চাদের জন্য ১০ হাজার টাকা উপহারও দেয়া হয়।

চাকরি জীবনে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশে এ পর্যন্ত ২০ বার শ্রেষ্ঠ ডিসি মনোনীত হয়েছেন বিপ্লব কুমার সরকার।

এ ছাড়া রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি হিসেবে ২০১৪ সালে পিপিএম, ২০১৬ ও ২০১৯ সালে বিপিএম পদক পেয়েছেন এ চৌকস পুলিশ কর্মকর্তা।

২০১৩ সালের ৭ এপ্রিল থেকে দক্ষতার সঙ্গে তিনি তেজগাও বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) হিসেবে নিজের দায়িত্ব পালন করে চলেছেন।

কালের আলো/এপিএস/এএ

Print Friendly, PDF & Email