এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে বিদ্যুৎ গ্রিড উন্নয়ন জরুরি

প্রকাশিতঃ 12:53 pm | April 30, 2025

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের উন্নয়নশীল দেশগুলোতে বিদ্যুৎ গ্রিডে পর্যাপ্ত বিনিয়োগের অভাব জ্বালানি রূপান্তরের পূর্ণ সুবিধা গ্রহণে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে—যার মধ্যে রয়েছে জ্বালানি নিরাপত্তা বৃদ্ধি, কোটি কোটি সবুজ চাকরির সৃষ্টি এবং বিদ্যুৎ সুবিধা সম্প্রসারণ।

সম্প্রতি এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরেছে।

এডিবি বলছে, ক্রমবর্ধমান জ্বালানি চাহিদা পূরণ এবং অঞ্চলজুড়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানির মতো অনিয়মিত উৎসগুলোর সংযুক্তির জন্য আন্তঃসংযুক্ত ও আধুনিক গ্রিড অবকাঠামোর দ্রুত সম্প্রসারণ জরুরি।

এডিবির বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এই অঞ্চল বিশ্বব্যাপী জ্বালানি রূপান্তরের অগ্রভাগে রয়েছে। সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, ২০১৩ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত উন্নয়নশীল এশিয়ায় পরিচ্ছন্ন জ্বালানিতে বিনিয়োগ ৯০০ শতাংশের অধিক বৃদ্ধি পেয়ে ৭২৯.৪ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে—যা বৈশ্বিক বিনিয়োগের প্রায় ৪৫ শতাংশ। এর বেশিরভাগই ছিল চীনে। তবে ভারত ও আরও সাতটি উন্নয়নশীল দেশের নবায়নযোগ্য জ্বালানির মাধ্যমে ২০২২ সালে নতুন বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৭৫ শতাংশের বেশি এসেছে।

‘এনার্জি ট্রানজিশন রেডিনেস অ্যাসেসমেন্ট ফর ডেভেলপিং এশিয়া অ্যান্ড দ্য প্যাসিফিক’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি এডিবি ও ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের (ডাব্লিউইএফ) যৌথ উদ্যোগ তৈরি হয়েছে। এতে এই অঞ্চলের দেশগুলো জ্বালানি ব্যবস্থাকে পরিবর্তন করতে কতটা প্রস্তুত সেসব বিষয়ে বিশ্লেষণ করেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীন বেশিরভাগ সূচকে এগিয়ে থাকলেও রিপোর্টে দেখা গেছে জর্জিয়া, মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ড তাদের নীতিগত কাঠামোতে উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন এনেছে। বাংলাদেশ, ভারত ও ইন্দোনেশিয়া ২০১০ সাল থেকে ১ বিলিয়নের বেশি মানুষের কাছে বিদ্যুৎ সুবিধা পৌঁছে দিয়েছে।

এডিবির জ্বালানি খাতের সিনিয়র ডিরেক্টর প্রিয়ন্থা বিজয়তুঙ্গা বলেন, লো-কার্বন বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সংক্রমণ ব্যবস্থায় একীভূত করতে হলে ডিজিটালাইজড গ্রিড অবকাঠামো সম্প্রসারণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ২০৪০ সালের মধ্যে বৈশ্বিক জ্বালানি বৃদ্ধির দুই-তৃতীয়াংশ এশিয়া ও প্রশান্ত অঞ্চলে হবে বলে পূর্বাভাস রয়েছে এবং এই চাহিদা পূরণে শক্তিশালী নীতি, উদ্ভাবনী প্রযুক্তি ও দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়ন প্রয়োজন হবে।

ডাব্লিউইএফ এর জ্বালানি ও উপকরণ কেন্দ্রের প্রধান রবের্তো বোক্কা বলেন, এই বিশ্লেষণে এশিয়ার উন্নয়নশীল অর্থনীতিগুলোর সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ তুলে ধরা হয়েছে। নির্ভরযোগ্য, সাশ্রয়ী ও টেকসই জ্বালানি ব্যবস্থা জাতীয় ও আঞ্চলিক উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য।

রিপোর্টে বলা হয়েছে, প্রতিটি দেশের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য অনুসারে জ্বালানি রূপান্তরের পথ নির্ধারণ করলেও দেশের অভ্যন্তরে সংযোগ এবং অঞ্চলভিত্তিক আন্তঃসংযোগ—যেমন সেন্ট্রাল ওয়েস্ট এশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে অর্থনৈতিক দক্ষতা ও বিদ্যুৎ খরচ কমাতে সর্বজনীন সহায়তা দিতে পারে।

এডিবি জানিয়েছে, আগামী জুন মাসে এডিবির এশিয়া ক্লিন এনার্জি ফোরামে আন্তঃসীমান্ত জ্বালানি বাণিজ্যসহ আরও নানা বিষয়ে আলোচনা হবে, যা এই অঞ্চলের শহরায়ন ও শিল্পায়নের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ঘর, কারখানা ও পরিবহন ব্যবস্থাকে শক্তি সরবরাহ নিশ্চিত করতে সাহায্য করবে।

কালের আলো/এএএন