পেঁয়াজের দামের চাপে পিষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা
প্রকাশিতঃ 5:18 pm | April 23, 2025

কালের আলো রিপোর্ট:
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময় পেঁয়াজের দাম আবারও বাড়ছে। ঢাকার খুচরা বাজারে এখন প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকায়। এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ২০ টাকা। পেঁয়াজের দামের চাপে পিষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
কৃষি বিভাগের ভাষ্যমতে, দেশে বছরে ৩৬ লাখ টন পেঁয়াজ উৎপাদন হয়। তবে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য বলছে, উৎপাদন ২৫ লাখ টনের বেশি নয়। দেশে পেঁয়াজের চাহিদা ২৬ লাখ টন। প্রতি বছর উত্তোলন ও সংরক্ষণের সময়ই নষ্ট হচ্ছে প্রায় ১০ লাখ টন। ফলে চাহিদা মেটাতে ৯ থেকে ১১ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি করতে হচ্ছে প্রতি বছর। আমদানির বড় অংশই আসে ভারত থেকে। বলা চলে, পেঁয়াজ আমদানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ভারতের ওপর অনেকটা নির্ভরশীল।
দেশের সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজ উৎপাদন হয় পাবনা জেলায়। ওই জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম প্রামাণিক বলেন, পেঁয়াজের দাম ৫০ থেকে ৬০ টাকা পর্যন্ত স্বাভাবিক ও সহনশীল। এরচেয়ে বেশি হলে সেটা অস্বাভাবিক পর্যায়ে চলে যায়, কমে গেলে কৃষকরা লোকসানে পড়েন।
কৃষি অর্থনীতিবিদ ড. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘এখন যে দাম এটা মোটেও বেশি নয়। এটাই পেঁয়াজের স্বাভাবিক দাম। বরং কিছুদিন দাম অস্বাভাবিক কম ছিল, যে কারণে চাষিদের লোকসান হয়েছে।’
প্রধান উৎপাদন এলাকা পাবনা, ফরিদপুর, রাজবাড়ীসহ অন্যান্য জেলায় পেঁয়াজের দাম বাড়ায় এখন কৃষকরা খুশি। তারা বলছেন, শুরুতে লোকসান হলেও এখন তারা কিছুটা লাভ পাচ্ছেন। এখন ওইসব উৎপাদনস্থলেই প্রতি কেজি পেঁয়াজ (পাইকারি) ৪৬ থেকে ৪৮ টাকা দাম পাচ্ছেন কৃষক। এই পেঁয়াজ ঢাকার খুচরা বাজারে আসতে আসতে দাম বেড়ে ৫৫ থেকে ৬০ টাকায় ঠেকেছে।
ফরিদপুরের সালথা উপজেলার কৃষক এনামুল বলেন, ‘অনাবৃষ্টির কারণে এবার তিন দফা সেচ দিতে হয়েছে। ফলে পেঁয়াজের উৎপাদন খরচ বেড়েছে। এখন দাম বাড়ায় উৎপাদন খরচ উঠছে। আরও কিছুটা বাড়লে আমরা ভালো লাভজনক অবস্থায় যেতে পারব।’
এখন পেঁয়াজের দাম বাড়ার কারণ হিসেবে ব্যবসায়ী, আড়তদার ও পেঁয়াজের আমদানিকারকরা প্রায় একই রকম তথ্য দিয়েছেন। তারা জানান, মৌসুমের শেষে জমিতে এখন আর খুব বেশি পেঁয়াজ নেই। ভারত থেকেও পেঁয়াজ আমদানি হচ্ছে না। ফলে বেশির ভাগই কৃষক নিজেরা ও মজুতদাররা পেঁয়াজ সংরক্ষণ করছেন। এসব কারণে পেঁয়াজের মৌসুম হওয়া সত্ত্বেও বাজারে পণ্যটির দাম বেড়ে গেছে।
দেশে সারা বছর সংরক্ষণ করা যায়, ওই ধরনের পেঁয়াজ ওঠেই এ সময়, যা প্রায় পরের মৌসুম পর্যন্ত সারা বছরের চাহিদা মেটায়। ফলে কৃষক পর্যায়ে পেঁয়াজের সংরক্ষণ অস্বাভাবিক নয়। তবে সেই সুযোগে মজুতদাররাও বেশি বেশি পেঁয়াজ মজুত করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
ঢাকার সবচেয়ে বড় বাজার শ্যামবাজারের পেঁয়াজ আমদানিকারক আব্দুল মাজেদ বলেন, ভারত থেকে বেশি পেঁয়াজ আসছে না। যে কারণে এক শ্রেণির মজুতদার ভবিষ্যতে দাম বাড়ার আশায় বেশি বেশি পেঁয়াজ কিনে রাখছেন। যে কারণে এবার পেঁয়াজের দাম হুট করে বেড়েছে।
কালের আলো/এমএএইচএন