‘অধ্যক্ষের অনুগত মুখোশধারী ছাত্রীরাই গায়ে আগুন দিয়েছে’

প্রকাশিতঃ 10:51 am | April 07, 2019

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

ফেনীর সোনাগাজী ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগকারী মাদ্রাসার ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির গায়ে আগুনের ঘটনায় পুলিশ দুইজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করলেও কাউকে গ্রেফতার দেখানো হয়নি। এখন পর্যন্ত মামলা হয়নি। পরীক্ষার হলে এরকম ঘটনায় জেলায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। পুরো ঘটনাটি বড় ধরনের রহস্যময় বলে জানিয়েছেন প্রশাসনিক কর্মকর্তারা।

হাসপাতালে নেয়ার পথে এক অডিও ক্লিপে মাদ্রাসা ছাত্রী বলেন, সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসা কেন্দ্রে আলিম পরীক্ষা দিতে গেলে তার গায়ে আগুন ধরিয়ে দেয় অধ্যক্ষের অনুগত কিছু মুখোশধারী ছাত্রীরা।

ছাত্রীর ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান জানান, শনিবার সকালে আরবি প্রথমপত্র পরীক্ষায় অংশ নিতে নুসরাত জাহান রাফি সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসা কেন্দ্রে যায়। ওই ছাত্রীকে ফুঁসলিয়ে অধ্যক্ষের নিয়ন্ত্রিত কয়েকজন শিক্ষার্থী মাদরাসার ছাদে তুলে গায়ে আগুন ধরিয়ে পালিয়ে যায়। পরে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে প্রথমে সোনাগাজী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরবর্তীতে ফেনী সদর হাসপাতালে প্রেরণ করেন। কর্তব্যরত ডাক্তার উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে প্রেরণ করেন। তার শরীরের ৮০ শতাংশ পুড়ে যায়।

ফেনী সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. আবু তাহের জানান, ছাত্রীর শরীরের ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ পুড়ে গেছে। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। বর্তমানে সেখানে তার চিকিৎসা চলছে।

সোনাগাজী মডেল থানার পরিদর্শক (ওসি) মো. কামাল হোসাইন জানান, ছাত্রীর শরীরে কে আগুন দিয়েছে এখন পর্যন্ত নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না। পুলিশ বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করছে। পরীক্ষা কেন্দ্রের ছাদে এরকম একটি ঘটনা ঘটিয়ে চলে যাওয়াটা রহস্যজনক। কারণ পরীক্ষা কেন্দ্রে ১৪৪ ধারা বলবৎ রয়েছে। সেখানে চর্তুদিকে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। মাদ্রাসার ছাদ থেকে নামার অন্যকোনো সুযোগ নেই।

সোনাগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোহেল পারভেজ জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত প্রকৃত কারণ জানা যায়নি। রহস্য উদঘাটন করতে পুলিশসহ প্রশাসনের কর্মকর্তা মাঠে তদন্ত করছেন। ঘটনাস্থল থেকে আলামত সংগ্রহ করেছেন।

এর আগে ২৭ মার্চ ওই ছাত্রীকে সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসার নিজ কক্ষে ডেকে নিয়ে যৌন হয়রানির অভিযোগে অধ্যক্ষ মাওলানা সিরাজ উদ্দৌলাকে আটক করে পুলিশ। এ ঘটনার পর থেকে উপজেলার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ভাগ হয়ে শিক্ষার্থীদের নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করে। ওই ছাত্রীর মা শিরিন আক্তার বাদী হয়ে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা দায়ের করলেও পুলিশ অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাহকে গ্রেফতার করে। বর্তমানে অধ্যক্ষ কারাগারে রয়েছেন।

কালের আলো/এমএইচএ