শিক্ষার্থীদের নিয়ে একসাথে নিরাপদ সড়ক গড়ার ঘোষনা আতিকের

প্রকাশিতঃ 12:44 pm | March 20, 2019

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

নিরাপদ সড়ক গড়ার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের নিয়েও একসঙ্গে কাজ করবেন বলে জানিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম।

তিনি বলেন, প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আসা শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের নিয়ে আমরা মিটিং করব। আমাদের সড়কের সিস্টেম কিভাবে আপডেট করা যায়, তা নিয়ে তাদের সঙ্গে আলোচনা করব। সেই অনুযায়ী কাজের অগ্রগতি আমরা সাত দিন পরপর জানাব। একটি নিরাপদ শহর গড়তে আমি নতুন প্রজন্মকে নিয়ে কাজ করতে চাই।

বুধবার (২০ মার্চ) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর বসুন্ধরা গেট এলাকায় ‘আবরার ফুটওভারব্রিজে’র ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের সময় মেয়র এসব কথা বলেন। ঠিক ওই জায়গাতেই গতকাল মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) সুপ্রভাত পরিবহনের একটি বাসের ধাক্কায় প্রাণ হারিয়েছিলেন বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের (বিইউপি) শিক্ষার্থী আবরার আহমেদ চৌধুরী। তার নামেই ফুটওভারব্রিজটি তৈরি করা হচ্ছে বলে জানান মেয়র আতিকুল ইসলাম।

ফুটওভারব্রিজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের আগে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মেয়র বলেন, আমরা জনগণ, শিক্ষার্থী— সবাইকে অনুরোধ করব, আপনারা সাজেশন দিন। আমরা নতুন প্রজন্মকে নিয়ে কাজ করতে চাই। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই জন করে প্রতিনিধিকে নিয়ে আমরা ডিএনসিসি অফিসে মিটিং করব। অনেক শিক্ষার্থী জানতে চায়, তারা কিভাবে আমাদের সঙ্গে কাজ করতে সম্পৃক্ত হবে। আমি মনে করি, আপনারা ইউনিভার্সিটির মাধ্যমে আসুন। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের এসব শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের নিয়ে আমি কাউন্সিল করতে চাই। আমাদের নিরাপদ সড়ক গড়ার যে চ্যালেঞ্জ, সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলয় নতুন প্রজন্মকে নিয়ে কাজ করার বিকল্প নেই।

আতিকুল ইসলাম বলেন, গতকাল (মঙ্গলবার) এখানে যে ঘটনাটি ঘটে গেছে, সেটি অত্যন্ত দুঃখজনক। আমরা কেউ মেনে নিতে পারিনি, মেনে নেওয়ার মতোও না। আমি গতকালই বলেছি, এখানে একটি ফুটওভারব্রিজ করতে হবে। সিটি করপোরেশনকে বলেছি, দুই মাসের ভেতরে এখানে ফুটওভারব্রিজ হতে হবে। আমি কাল বলেছিলাম, আবরারের নামে ফুটওভারব্রিজ করা হবে, সেটাই করেছি। তার বাবা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আরিফ আহমেদ চৌধুরীর সঙ্গে আমি আলাপ করেছি। আমি অনুরোধ করেছিলাম তিনি যেন এই ফুটওভারব্রিজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। তিনি আসতে পারেননি, দুঃখপ্রকাশ করেছেন।

মেয়র বলেন, আমি নতুন দায়িত্ব নিয়েছি। দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই প্রতিটি সংস্থার সঙ্গে আলাপ করেছি। নিরাপদ সড়ক আমাদের সবার দাবি। প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা সে অনুযায়ী কাজ করে যাচ্ছি। আজকেও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সঙ্গে আমাদের মিটিং আছে। আমাদের আলোচ্যসূচি একটাই, সড়ক নিরাপদ করার উদ্যোগগুলো কত দ্রুত বাস্তবায়ন করা যায়।

শিক্ষার্থীসহ সাধারণ জনগণের উদ্দেশে মেয়র বলেন, আমি সবাইকে অনুরোধ করব, আমরা নিজেরাও যেন দায়িত্বশীল হই। যেখানে ফুটওভারব্রিজ আছে, সেখানে যেন আমরা ফুটওভারব্রিজ দিয়েই রাস্তা পার হই। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যেন কেউ রাস্তা পার না হই। আর কোন কোন জায়গায় ফুটওভারব্রিজ প্রয়োজন, তার তালিকা জরুরিভিত্তিতে তৈরির নির্দেশ দিয়েছি সিটি করপোরেশন ও ডিএমপিকে। দ্রুত এসব ফুটওভারব্রিজ তৈরি করে দেওয়া হবে।

শিক্ষার্থীদের প্রতি মেয়র বলেন, ছাত্রদের অনুরোধ করব, তোমরা শিক্ষাঙ্গনে ফিরে যাও। তোমাদের দাবিগুলো লিখিতভাবে দেওয়া হয়েছে। আমরা সেগুলো নিয়ে সর্বোচ্চ পর্যায়ে আলাপ করেছি। যতগুলো বাস্তবায়ন সম্ভব, এখনই করছি। বাকিগুলোও যত দ্রুতসম্ভব বাস্তবায়ন হবে। আসুন, আমরা সবাই মিলে যেন একটি নিরাপদ শহর গড়তে পারি।

এসময় ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, ‘সড়কে পাল্লা দিয়ে গাড়ি চলাচল করলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের দাবি যৌক্তিক। আর এই যৌক্তিক দাবির সঙ্গে আমরাও আছি। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আমরা এক হয়ে সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনবো।’

তিনি শিক্ষার্থীদের আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে আমরাও কাজ করছি। আসুন আপনারা (শিক্ষার্থীরা) আমরা একত্রিত হয়ে এই কাজ করি। আমরা ট্রাফিক শৃঙ্খলা পক্ষ,ট্রাফিক সপ্তাহ কর্মসূচি করেছি।’

শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে পড়ে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘ট্রাফিক শৃঙ্খলা পক্ষের মাধ্যমে আমরা পুরোপুরি সফলতা পাইনি সেটা সত্য। তবে সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে শিক্ষার্থীদের সহযোগীতা প্রয়োজন। আসুন আমরা সবাই মিলে একসঙ্গে কাজ করি। আমরা আপনাদের সকল দাবিগুলো মেনে নিচ্ছি,সমর্থন করছি। আপনারা রাজপথ ছেড়ে ঘরে ফিরে যান।’ এসময় শিক্ষার্থীরা ভুয়া ভুয়া বলে শ্লোগান দিতে থাকে এবং বলতে থাকে ‘আর নয় আশ্বাস এবার চাই বাস্তবায়ন।’

ডিএমপি কমিশনার বলেন,‘সড়ক ও সেতুমন্ত্রী সুস্থ হয়ে ফিরলে সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার বিষয়ে এবং সড়কের সার্বিক ব্যবস্থার বিষয়ে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

সুপ্রভাত কেন চলে জাবালে নুর কেন চলে?-শক্ষার্থীদের এই কথার প্রেক্ষিতে তিনি বলেন,‘আজ থেকে সুপ্রভাত কোথাও চলবে না। সুপ্রভাতের যে বাসটি দুর্ঘটনা ঘটিয়েছে সেটির ঘাতক চালক ও হেলপারকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিতে আমরা কাজ করছি। তাদের কোনও ছাড় দেয়া হবে না।

তিনি বলেন, ‘আগে সড়কে উল্টোপথে গাড়ি চলাচল করতো, আমরা ব্যবস্থা নিতে পারতাম না। কিন্তু শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পরে আমরা সেটি করতে পেরেছি। আপনাদের দাবিগুলো গ্রহণ করেছি,এগুলো বাস্তায়নের জন্য আমাদের সময় দিন। আমাদের সহযোগিতা করুন। ’তবে ডিএমপি কমিশনার ও মেয়রের আশ্বাসের পরও শিক্ষার্থীরা রাজপথ ছাড়েনি। তারা তাদের আন্দোলন অব্যহত রেখেছে। এদিকে ঘটনাস্থলে পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।

কালের আলো/এমএইচএ