নতুন স্বপ্ন ডানা মেলে হাসুমণির পাঠশালায়

প্রকাশিতঃ 3:33 pm | February 17, 2018

বিশেষ প্রতিবেদক, কালের আলো:

রাজধানীর এ্যালিফ্যান্ট রোডে তিন কক্ষের একটি পাঠাগার। দেখতে বেশ সাদামাটা এবং সাধারণ। কিন্তু কী গভীর প্রশান্ত! পাঠাগারে থরে থরে সাজানো বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ আর বিশ্বনেত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে লেখা বিভিন্ন বই। রয়েছে সাহিত্যের বইও।

গবেষণাধর্মী সামাজিক ও সাংস্কৃতিক এ পাঠাগারটির নামকরণ করা হয়েছে বঙ্গবন্ধুর আদরের সেই নয়নমণি ছোট্ট হাসুমণির নামে। পুরো নাম হাসুমণির পাঠশালা। বঙ্গবন্ধুর নিজের হাতে লেখা ‘হাসুমণি’ শব্দটিকে এ পাঠশালার লোগো হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে।

বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আকাশসম বিশাল মানবিকতা, হৃদয় উজাড় করা ভালোবাসা আর মানব কল্যাণে উৎস্বর্গ করার মধ্যে দিয়ে বিশ্বনেত্রী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।

তৃতীয় বিশ্বের বিচক্ষণ এ বিশ্বনেতার প্রতি হৃদয়ের মর্মমূল থেকে গভীর শ্রদ্ধা, অটুট বিশ্বাস আর অফুরান ভালোবাসা স্বরূপ এ পাঠাগারটি প্রতিষ্ঠা করেছেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও কেন্দ্রীয় আ’লীগের কার্য নির্বাহী কমিটির সদস্য মারুফা আক্তার পপি। সত্যের শিখা জ্বালিয়ে নতুন স্বপ্নে ডানা মেলা এ পাঠশালাটি যেন জাগিয়ে তুলেছে ইতিহাসের একেকটি অধ্যায়কে।

বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার ৭০ তম জন্মদিনে এ পাঠশালাটির পথচলা শুরু হয়। এ পথের গল্প শোনা গেলো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দু:সময়ের সহযাত্রী মারুফা আক্তার পপি’র কন্ঠে। তিনি বলেন, ‘একবিংশ শতাব্দীর অভিযাত্রায় দিন বদল ও ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপকার জননেত্রী, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গোটা বিশ্বের নির্যাতিত-নিপীড়ীত ও বঞ্চিত মানুষের ভরসাস্থল তিনি।

বিশ্ব মানবতা মুখ থুবড়ে পড়লে মানবতার ঝান্ডা হাতে আমার নেত্রী মাথা তুলে দাঁড়িয়েছেন। তাঁর কণ্ঠে উচ্চারিত হয় নীপিড়িত মানুষের কণ্ঠস্বর। তরুণ প্রজন্মকে এসব বিষয়গুলো সম্পর্কে আরো উৎসাহী করে তুলতেই এ পাঠশালা গড়ে তোলা হয়েছে।
সাবেক ডাকসাইটে এ ছাত্রনেতা যোগ করে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর পুরো মাসের বক্তব্য নিয়ে এখানে আয়োজন করা হয় সেমিনার। তিন মাস পরপর সেমিনার এবং প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য নিয়ে করা হয় প্রকাশনা। বিভিন্ন জায়গায় আওয়ামী লীগ সরকারের নানান উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডগুলো দেখানো হয় প্রজেক্টরের মাধ্যমে। এ উদ্যোগটি দেশের প্রতিটি জেলা থেকে ইউনিয়ন পর্যন্ত ছড়িয়ে দিতেও কাজ করছেন তিনি।

শৈশবে বঙ্গবন্ধুর ছবি দেখেই তাকে ভালবেসেছিলেন মারুফা আক্তার পপি। বৃহত্তর ময়মনসিংহের জামালপুর সদরের বাড়ীঘাগুরী গ্রামে তাঁর জন্ম। সাধারণ কৃষক পরিবারে সন্তান হয়েও নিজেকে গর্বিত মনে করেন। প্রাথমিক শিক্ষার পাঠ চুকিয়েছেন স্থানীয় পিয়ারপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে। শাহিদা খানম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময়েই জড়িয়ে পড়েন ছাত্রলীগের রাজনীতিতে।

ওই সময় স্কুলের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান মানেই ‘মধ্যমণি’ মারুফা আক্তার পপি। স্থানীয় নান্দিনা মহাবিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে ১৯৮৮ সালে ছাত্রনেত্রী হিসেবে সবার দৃষ্টি কাড়েন তিনি।

ঢাকা বিশ্বদ্যালয় থেকে ইসলামের ইতিহাসে অনার্স ও মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৯২ সালে তিনি রোকেয়া হলের ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ইতিহাসে একমাত্র নারী হিসেবে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি’র দায়িত্ব পালন করেন মারুফা আক্তার পপি।

বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের শাসনামলে ২০০২ সাল থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত রাজপথে ছাত্র আন্দোলনে লড়াকু রাজনীতিকের প্রতিচ্ছবি ছিলেন। ২০১২ সালের জাতীয় সম্মেলনের পর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সহ-সম্পাদকের দায়িত্ব পান।

ছাত্র রাজনীতি করতে গিয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যা, জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছাকাছি যাওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেন। নেত্রীর কাছ থেকেই রাজনীতির নানা কৌশল আয়ত্ত করেন। জননেত্রী শেখ হাসিনার মমতাময়ী আচরণ, কর্মীদের প্রতি ভালোবাসা, সততা, অক্লান্ত পরিশ্রম এবং শোককে শক্তিতে পরিণত করার যোগ্যতা তাকে দারুণভাবে আকৃষ্ট করতো।

সৃষ্টিশীল ও মননশীলতাই মুখ্য মারুফা আক্তার পপি’র কাছে। সেই শৈশবেই লেখালেখিতে হাত পাঁকিয়েছেন। কবিতার প্রতি তাঁর রয়েছে বিশেষ দুর্বলতা। ‘মুজিব মানেই বাংলাদেশ, মুজিব মানেই স্বাধীনতা, মুজিব মানেই লাল-সবুজের পতাকা’ শৈশবেই বাবার মুখে উচ্চারিত এসব বাক্য হৃদয়তন্ত্রিতে গেঁথে নিয়েছিলেন মারুফা আক্তার পপি।

‘জয় বাংলা’র বজ্রকন্ঠ তাঁর হৃদয়কে আন্দোলিত করতো। পপি বিশ্বাস করেন, জননেত্রী শেখ হাসিনার উন্নত বাংলাদেশ ও মেধাবী প্রজন্ম গড়তে হাসুমনির পাঠশালার এ উদ্যোগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

মারুফা আক্তার পপি বলেন, হাসুমণির পাঠশালার মাধ্যমে নতুন প্রজন্ম বাংলাদেশের সঠিক ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু এবং বিশ্বনেত্রী শেখ হাসিনাকে জানার সুযোগ পাবে।

নতুন প্রজন্ম বিশ্বনেত্রী’র আদর্শ ও জীবন দর্শনকে ধারণ করতে পারলে আগামীতে সৎ ও দেশপ্রেমিক নেতৃত্ব গড়ে উঠবে। একটি উন্নত, সুখ-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার মিছিলে আমরা এগিয়ে যাবো আরো দুর্বার গতিতে, যোগ করেন এ নেত্রী।

হাসুমণির পাঠশালার উদ্যোগে সেমিনার রোববার
দু:সময়ে ছাত্রলীগকে নেতৃত্ব দেয়া মারুফা আক্তার পপি জানান, হাসুমণির পাঠশালার উদ্যোগেই আগামী রোববার (১৮ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে ‘শেখ হাসিনার উন্নয়ন দর্শন : নতুন প্রজন্মের করণীয়’ শীর্ষক একটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর এমপি।

বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আ.আ.ম.স.আরেফিন সিদ্দিক, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের আইএমইডি সচিব মো: মফিজুল ইসলাম, বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড.জামাল উদ্দিন আহমেদ, শহীদ বুদ্ধিজীবির সন্তান ড.তৌহীদ রেজা নূর। আলোচনা করবেন নব্বই পরবর্তী প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও সুধীজন।

 

কালের আলো/ওএইচ

Print Friendly, PDF & Email