সার্বজনীন ভালবাসা ছড়াতে ব্যর্থ এ দিবস

প্রকাশিতঃ 2:39 pm | February 14, 2018

মনদীপ ঘরাই:

ভ্যালেন্টাইন ডে এলেই ভ্যালেন্টাইন কে ছিল তার ইতিহাস নিয়ে একটু তো ঘাঁটাঘাটি হয় ই। ওসব লিখে সময় নষ্ট করবো না। শুধু ভ্যালেন্টাইন ডে নিয়ে বেশ কয়েকটি তোতো কথা বলি।কারও কাছে মধুরও লাগতে পারে।

কোন্ ভ্যালেন্টাইন ভালবাসার প্রতীক? বা তার নামে দিবস? বলবেন, একজনই তো…ওই যে যাকে মেরে ফেলা হয়েছিল!

ইতিহাসটা ঘোলাটে এই জায়গাতে। রাজা দ্বিতীয় ক্লডিয়াস তৃতীয় শতাব্দীর ভিন্ন দুই বছরে দুইজন ভ্যালেন্টাইন নামক ব্যক্তির প্রাননাশ করেন। আবার তৃতীয় এক ভ্যালেন্টাইনের উল্লেখও পাওয়া যায় ক্যাথলিক এনসাইক্লপিডিয়ায়!

দিবসটা তাহলে কোন ভ্যালেন্টাইনের? যিনি সৈনিকদের বিবাহে আবদ্ধ হওয়ার অধিকার নিয়ে সরব ছিলেন।ধরে নিলাম তিনি ই। সুদুর ইতালির ঘটনা আন্দোলিত করছে শত কোটি প্রেমিক মন। উৎসটা কোথায়? কে চালু করলো এই দিবস। এখন তো বলবেন,ওই হয়ে গেছে বা আগে থেকে চলে আসছে। সত্যিটা হলো, ওয়েস্টার্ন ক্রিশ্চিয়ান চার্চ ধর্মীয় দিবস হিসেবে চালু করে ভ্যালেন্টাইনস ডে। এখনও ভ্যালেন্টাইনস ডে তে অন্যান্য সবকিছুর সাথে চার্চ সার্ভিস বা রিচুয়ালও আছে।

তাহলে দিবসটা ইতালি থেকে আমাদের কাছে আনলো কে?

যাদের প্রয়োজন, তারাই নিয়ে এসেছে। আমি প্রেমিক-প্রেমিকাদের কথা বলছি না। বলছি হলমার্কের মতো ভিনদেশী কার্ড আর গিফট কোম্পানির কথা। ওরা এনেছে।আমরা গিলেছি।

গিলে ফেললেও দোষের কিছু নেই।কিন্তু আমাদের ক্ষেত্রে ওষুধের ইফেক্ট না হয়ে সাইড ইফেক্ট হয়েছে বেশি।

প্রত্যেক সম্পর্কের একটা শুরুর দিন থাকে। থাকে মনে রাখার মতো বিশেষ দিন। ভ্যালেন্টাইনের মৃত্যুর দিনে তার লিখে যাওয়া” ইতি তোমার ভ্যালেন্টাইন” এই তিনটা শব্দ আমাদের এত বেশি আন্দোলিত করেছে, যে আমরা সব সম্পর্কের বিশেষ দিন এক করে নিয়েছি। ১৪ ফেব্রুয়ারি।

ঠিক আগের দিন বসন্তকে বরন করেছি। আমাদের ভালবাসা তো বসন্তের প্রতিরূপ। পয়লা ফাল্গুন বাঙ্গালির প্রানে মিশে আছে। এমন একটি দিবস পালনের পরদিনই ভ্যালেন্টাইন ডে। ফাল্গুনের উদযাপনটা তাই আধাআধি হয়।আবেগ, ঘোরাঘোরির শক্তি কিংবা পকেট, সবই আধাটা কাগজে মুড়ে রাখতে হয় পরবর্তী দিনের জন্য।

হ্যাঁ আনন্দটা দ্বিগুন হয়,হয়তোবা।

এবার আসি কিভাবে ওষুধের সাইড ইফেক্ট নিয়ে। আমরা ভ্যালেন্টাইনস ডে কে কখনই ভালবাসা দিবস বানাতে পারিনি। বানিয়েছি প্রেম দিবস।

যার ফলে একলা একা সিঙ্গেলদের জন্য এটা বিব্রতকর এক শোক দিবস এটা। এ নিয়ে ট্রলও কম হয় না।

সার্বজনীন ভালবাসা ছড়াতে আমার মতে ব্যর্থ এ দিবস।

তবে একটা জিনিষ খুব ভালো ছড়িয়েছে। একটা জাপানিজ টাইপ মেয়ে একগোছা ফুল হাতে অপেক্ষা করছে। দুয়ার খুললেই দেখতে পাবেন।ম্যাসেঞ্জারের ইনবক্সের দুয়ার। আজ যদি গুরুত্বপূর্ণ মেসেজও কাউকে দিতে চান, নিশ্চিত থাকুন সে দেখবে কিনা ঠিক নেই। ঢাকার অলিতে -গলিতে যে জ্যাম তা ছড়িয়েছে ইনবক্সেও।

ভ্যালেন্টাইনরা জানেও না, তাদের মৃত্যুর হাজার বছর পরেও তাদের নামে উৎসবে মাতছে জগতের সবাই। তবে ধরনটা বদলেছে দেশ থেকে দেশে। প্রেমিকদের থেকে ভালোবাসার আবেগটা সার্বজনীন হোক। তবে যতটুকু হয়েছে, তা যথেষ্ট। একটাই অনুরোধ যারা পড়ছেন সবাইকে। অনুগ্রহ করে কিস ডে, হাগ ডে টাইপের দিবসগুলো আর আমাদের বাঙ্গালিয়ানার সাজানো বাগানে ঢুকতে দেবেন না। নিজের গায়ে যে জামা ফিট হয়না, তা পড়তে যাবো কেন? আমাদের “চারপাশ” বলে তো একটা কথা আছে,তাই না?

এতক্ষণে আমার দিকে সমালোচনার তীর ছোঁড়া হয়ে গেছে অনেকের। তারপরেও বলি।

আপনি তো বলবেন, বিশ্বায়নের এই যুগে কি সংকীর্ণ কথা বলছেন।

তা তো বলছিই। বিশ্বের অন্য জন গুরুত্বপূর্ণ দিবসে কাউকে এককথায় খুঁজেই পাওয়া যায় না। প্রশাসনকে বাজেট বরাদ্দ দিয়ে উদযাপন করতে হয়। বিশ্ব পরিবেশ দিবস কিংবা উৎপাদনশীলতা দিবস আমাদের মন ছুঁতে পারে না। কারণ, ওগুলোর আবেগ যে কাঁচঘেরা হলমার্কে বিকিকিনি হয় না।

অথচ, ভ্যালেন্টাইস ডে হয়ে যায় বিশ্ব ভালবাসা দিবস। বিশ্ব কাঁপানো দিবস এক।

লেখকে লেখতে ইনবক্সে তিনটি মেসেজ আসলো। সত্যিই সবাই ভালোবাসা ছড়াচ্ছে। তবে, ইনবক্সেই শুধু বন্দী থাকবে না তো এই একদিনের ভালবাসা?

– ইতি তোমার ভ্যালেন্টাইন

মনদীপ ঘরাই: সরকারি কর্মকর্তা

Print Friendly, PDF & Email