নগর ভবনে কর্মবীর মেয়র টিটু’র ‘রাজসিক’ ফেরা, প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের পাশাপাশি জনকল্যাণমুখী আচরণের অঙ্গীকার

প্রকাশিতঃ 10:57 pm | June 30, 2024

অনিক খান, ময়মনসিংহ, কালের আলো:

জনআকাঙ্খা পূরণে সব সময় নিবেদিত রেখেছিলেন নিজেকে। ছকে বাঁধেননি কখনও। দিন বা রাত সমানতালে থেকেছেন সক্রিয়। তাঁর নামের শেষে জ্বলজ্বল বিলুপ্ত ময়মনসিংহ পৌরসভার শেষ মেয়র, ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের (মসিক) প্রথম ও দ্বিতীয় মেয়র উপমা। গত ৪ এপ্রিল অনুষ্ঠিত নির্বাচনেও রেকর্ড ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বীদের ধরাশায়ী করে মেয়রের মসনদ চূড়ান্ত করেন। অপেক্ষা ছিল কেবলই নগর ভবনে ফেরার। যেখানে কেটেছে তাঁর প্রতিটি মুহুর্ত। নির্বাচন শেষে বিজয়মাল্য পড়ে আবারও নগর ভবনে ফিরেছেন নব-নির্বাচিত মেয়র ও ময়মনসিংহ মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মো.ইকরামুল হক টিটু।

রোববার (৩০ জুন) তাকে বরণ করতে উন্মুখ নগর ভবনে ছিল অবারিত আনন্দের ফল্গুধারা। সিটি মেয়র হিসেবে দ্বিতীয় মেয়াদে তাঁর দায়িত্বভার গ্রহণ পর্বটি ছিল রাজসিক। রঙিন বেলুনে সাজানো হয় করপোরেশন ভবন। ভবনের দেয়ালে দেয়ালে রঙিন কাগজে মোড়ানো বাহারি পতাকা। লাল গালিচায় পায়ে হেঁটে নগর পিতা টিটু যখন নগর ভবনের নিজকক্ষে পৌঁছেন তখন ফুলেল শুভেচ্ছা আর হৃদয়ের উষ্ণতায় অভিবাদন জানানো হয় আলোকিত ময়মনসিংহের পথিকৃৎ জনবান্ধব এই নগর সেবককে। আনন্দ আর উচ্ছ্বাসের আবহে মসিকের নবনির্বাচিত কাউন্সিলরদের সঙ্গে নিয়ে করপোরেশনের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সঙ্গে পরিচিতি ও মতবিনিময় সভা করেন। জননেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে দ্বিতীয় মেয়াদে বিপুল ভোটে মেয়র নির্বাচিত করায় নগরবাসির প্রতিও ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন তিনি।

উপস্থাপন করলেন ময়মনসিংহ মহানগরীকে ঘিরে নিজের স্বপ্নের কথা। আমলে নিলেন জনপ্রত্যাশার কথাও। দলের উর্ধ্বে থেকে একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে নাগরিকদের সেবা দিতে চান তিনি। বারবার এমন কর্মযজ্ঞে নিজেকে প্রমাণও করেছেন। সাফ সাফ বলেছেন, জানিয়ে দিয়েছেন-‘ আমরা জনগণকে অনেক প্রতিশ্রুতি দিয়েছি, আমাদের কাছে জনগণের প্রত্যাশাও অনেক। সেসব প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে সচেষ্ট হতে হবে। বর্তমান আর্থসামাজিক অবস্থায় রাতারাতিই সবকিছু বদলে দেওয়া সম্ভব না, তবে সামর্থের সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করা জরুরী এবং খেয়াল রাখতে হবে- সকল সময়ে আমাদের আচরণ যেন হয় জনকল্যাণমুখী।’

বহুমুখী বৈশিষ্ট্যের অধিকারী, সাহসী ও কর্মবীর নগর পিতা মো. ইকরামুল হক টিটু। নগরবাসীর জীবনমান উন্নয়নই তাঁর ব্রত! সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে নাগরিক সেবা বৃদ্ধিতে সেবা প্রদানে তথ্য প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে চান। সৌম্য ও হৃদয়বান এই মেয়র বলেন-‘দেশে সব ক্ষেত্রেই ডিজিটালাইজেশনের জোয়ার তৈরি হয়েছে। সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের ফলে ঘরে বসেই মিলছে সব ধরণের সেবা। ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনও এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম হবে না। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে তথ্য প্রযুক্তি নির্ভর বিভিন্ন সেবা নিশ্চিত করতে চাই।’

একগুচ্ছ নির্দেশনা মেয়র টিটুর
মতবিনিময় সভায় ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশন (মসিক) এর নব-নির্বাচিত মেয়র মো. ইকরামুল হক টিটু নগরীর যানজট, জলাবদ্ধতা, পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা, নাগরিক সেবা বৃদ্ধি, নাগরিক অভিযোগ প্রতিকার, ফুটপাত দখলমুক্তকরণসহ বিভিন্ন বিষয়ে নির্দেশনা প্রদান করেন। তিনি বলেন, ‘ময়মনসিংহ একটি ‍পুরতন এবং ঘনবসতিপূর্ণ শহর। এ বিষয়গুলো বিবেচনায় রেখেই আমাদের সমস্যা সমাধানে সচেষ্ট হতে হবে। রাস্তার পাশে অবৈধ বাজার, ভ্রাম্যমাণ বাজার বন্ধ করা, নির্ধারিত জায়গা ছেড়ে বাড়ি করা নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া সড়ক প্রশস্তকরনের কাজগুলোকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।’

মেয়র বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকে টেকসই করতে জনসচেতনতা বৃদ্ধির প্রতি গুরুত্বারোপ করেন। তিনি প্রতিটি ওয়ার্ডে প্রতি মাসে সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন করার জন্য প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তাকে নির্দেশ প্রদান করেন। এছাড়াও মেয়র বলেন, মশক নিধন, খালকে দখলমুক্ত ও পরিস্কার রাখতেও নাগরিকদের সহযোগিতা প্রয়োজন।

মেয়র মো. ইকরামুল হক টিটু নাগরিক সেবা বৃদ্ধিতে সেবা প্রদানে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার, প্রশাসনিক বিকেন্দ্রেকরণ কার্যক্রম জোরদার, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির যথাযথা বাস্তবায়ন ইত্যাদি বিষয়ে জোর দেন। কর্মকর্তা-কর্মচারিদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, নাগরিক অভিযোগ প্রতিকারে এবং জনভোগান্তি লাঘবে ঢিলেঢালা ভাব দেখা গেলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সভায় প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কাউন্সিলর ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বক্তব্য রাখেন। সভা শেষ বর্তমান কাউন্সিলের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোঃ ফারুক হাসান এবং বিলুপ্ত ময়মনসিংহ পৌরসভার কাউন্সিলর মোঃ লিয়াকত আলী এবং লাল মিয়া লাল্টুর মৃত্যুতে দোয়া করা হয়। সভায় ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ ইউসুফ আলী, সংরক্ষিত ও সাধারণ আসনের কাউন্সিলররা, করপোরেশনের সচিব মোঃ আরিফুর রহমান, প্রধান প্রকৌশলী মোঃ রফিকুল ইসলাম মিঞাসহ অন্যান্য বিভাগ ও শাখা প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন।

কালের আলো/এমএএএমকে