এবার বাজেট ঘাটতি ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা
প্রকাশিতঃ 10:30 pm | June 04, 2024

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:
চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের তুলনায় ৩৫ হাজার ২১৫ কোটি টাকা বাড়িয়ে আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট দিতে যাচ্ছে সরকার। বাজেটের আকার বাড়লেও আগমী অর্থবছরে ঘাটতির পরিমাণ কিছুটা কমছে। চলতি অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের তুলনায় আগামী অর্থবছরের বাজেটে ঘাটতি কম ধরা হচ্ছে পাঁচ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী ৬ জুন জাতীয় সংসদের মাধ্যমে জাতির সামনে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব উপস্থান করবেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। এ বাজেটের আকার হবে ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। আর বাজেট ঘাটতি ধরা হবে ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা।
এ ঘাটতি মেটাতে বৈদেশিক ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হতে পারে ১ লাখ ২৭ হাজার ২০০ কোটি টাকা। আর অভ্যন্তরীণ ব্যাংক ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ১ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ধরা হতে পারে। সঞ্চয়পত্র বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হতে পারে ১৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। বিপরীতে ঋণের সুদ পরিশোধের ব্যয় ধরা হতে পারে ১ লাখ ১৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হতে পারে ৫ লাখ ৪৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটের প্রায় ৬৪ শতাংশ অর্থ পরিচালন ব্যয়ে বরাদ্দ রাখা হতে পারে। এর আগে কখনো পরিচালন ব্যয়ে এতো বেশি হারে বরাদ্দ রাখা হয়নি। এছাড়া বাজেটের ১৪ শতাংশের মতো অর্থ ব্যয় হবে ঋণের সুদ পরিশোধে। ফলে উন্নয়ন ব্যয়ে অর্থের বরাদ্দ দাঁড়াবে ২২ শতাংশের মতো।
চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার যে বাজেট প্রস্তাব দিয়েছিলেন। সেখানে সামগ্রিক ঘাটতি ধরা হয় ২ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। এ ঘাটতি মেটাতে বৈদেশিক ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। বিপরীতে ২৪ হাজার ৭০০ কোটি টাকা বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। তাতে নিট বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় এক লাখ দুই হাজার ৪৯০ কোটি টাকা।
অন্যদিকে অভ্যন্তরীণ ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ১ হাজার ৫৫ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে ১ লাখ ৩২ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা এবং ব্যাংক বহির্ভূত ২৩ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যামাত্রা ধরা হয়। আর সঞ্চয়পত্র থেকে ১৮ হাজার কোটি টাকা নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। অর্থাৎ চলতি অর্থবছরের তুলনায় আগামী অর্থবছরে বৈদেশি ঋণ এবং অভ্যন্তরীণ ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে বেশি ঋণ নেওয়া হবে। তবে সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে অর্থ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা কমানো হয়েছে।
আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে ভর্তুকি ও প্রণোদনা ব্যয় চলতি অর্থবছরের চেয়ে বেশি হতে পারে। চলতি অর্থবছরে ভর্তুকি ধরা হয় ১ লাখ ১৭৪ কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরে এর পরিমাণ বাড়িয়ে ১ লাখ ১২ হাজার কোটি টাকা করা হতে পারে।
আগামী অর্থবছরের বাজেটে সবচেয়ে বেশি ভর্তুকি দেওয়া হতে পারে বিদ্যুৎ খাতে। বিদ্যুৎ খাত ভর্তুকি বাবদ বরাদ্দ দেওয়া হতে পারে ৪২ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের বিদ্যুতের জন্য ভর্তুকি ছিল ৩৫ হাজার কোটি টাকা। এ হিসাবে চলতি অর্থবছরের তুলনায় আগামী অর্থবছরে বিদ্যুতে ভর্তুকি বাড়তে পারে ৭ হাজার কোটি টাকা।
এছাড়া ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানিতে ভর্তুকি ধরা হতে পারে ৭ হাজার কোটি টাকা, কৃষিতে ২৫ হাজার কোটি টাকা, খাদ্যে ৭ হাজার কোটি টাকা এবং রেমিট্যান্সের জন্য ৬ হাজার ২০০ কোটি টাকা ভর্তুকি ধরা হতে পারে।
সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর প্রকল্পগুলোর জন্য বরাদ্দ রাখা হতে পারে ১ লাখ ৩২ হাজার কোটি টাকা। উপকারভোগীর সংখ্যা বাড়তে পারে প্রায় ৫ লাখ। মাথাপিছু ভাতা অপরিবর্তিত থাকতে পারে। অবশ্য প্রবীণ নাগরিক এবং বিধবা, পরিত্যক্ত বা নিঃস্ব নারী সুবিধাভোগীদের ভাতা বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। প্রবীণ নাগরিকদের ক্ষেত্রে একজন ব্যক্তি প্রতি মাসে ৬০০ টাকা এবং বিধবা, স্বামী পরিত্যক্তা বা দুস্থ নারীকে মাসে ৫৫০ টাকা করে ভাতা দেওয়া হতে পারে।
কালের আলো/ডিএইচ/কেএ