অবরোধে ‘স্বস্তির বাহন’ মেট্রোরেল
প্রকাশিতঃ 10:38 am | November 13, 2023

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:
উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত চলাচলের জন্য মেট্রোরেল খুলে দেওয়া হয় গত ৫ নভেম্বর। এর পর আট দিনের মধ্যে অবরোধেই কেটেছে পাঁচ দিন। টানা অবরোধ কর্মসূচির কারণে গণপরিবহন পাওয়াই যেখানে দুষ্কর, সেখানে মেট্রোরেল যেন আশির্বাদ হিসেবে এসেছে। উত্তরা থেকে মতিঝিল রুট চালু হওয়ার পর এর সুবিধা উপলব্ধি করছেন নগরবাসী। নিরাপদে ও সময়মতো কর্মস্থলে বা গন্তব্যে পৌঁছাতে পেরে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন তারা।
সোমবার (১৩ নভেম্বর) মেট্রোরেলের মিরপুর ১০ নম্বর ও সচিবালয় স্টেশনের যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় তদের অভিমত-অভিজ্ঞতা। গত ২৮ অক্টোবর থেকে এক বা দুই দিন করে বিরতি দিয়ে বিএনপি ও সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর ডাকে সারা দেশে হরতাল-অবরোধের টানা কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। এতে দূরপাল্লার যানবাহন চলাচল প্রায় বন্ধ বললেই চলে। একইসঙ্গে রাজধানীতেও যান চলাচল করছে সীমিত পর্যায়ে। রাজপথে বাস কম থাকায় ভোগান্তিতে পড়ছেন কর্মজীবীরা। তবে তাদের অনেকের জন্য ভোগান্তি লাঘব করে স্বস্তি নিয়ে এসেছে মেট্রোরেল।
ব্যক্তিগত গাড়িতে চেপে রোজ ঢাকার ফার্মগেট থেকে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে যেতে হয় চিকিৎসক উম্মে নাজমিন ইসলামকে। তবে অবরোধের দিন ফিরে আসায় সেই গাড়িতে নিরাপদবোধ করছেন না এই স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ। এ কারণে রোববার সকালে তিনি বাহন হিসেবে বেছে নেন মেট্রোরেল।
নাজমিন বলছিলেন, গতকাল সন্ধ্যায় ৩ থেকে ৪টা বাসে আগুন ধরানো হয়েছে। সেজন্য আজকে আর রিস্ক নিয়ে গাড়ি নিয়ে বের হলাম না, মেট্রোতে যাচ্ছি।
‘কারণ এর আগে আমার মেট্রোতে ওঠা হয় নাই। তাই ভাবলাম এই সুযোগে প্রথমবারের মতো মেট্রোতেও চড়া হবে, সেই সাথে অবরোধের গণ্ডগোল থেকে নিজেকে সেইফও রাখা হবে।’
ফার্মগেট স্টেশন থেকে নাজমিন যখন গন্তব্যে রওনা হন, তখন ট্রেনের ভেতরেই তার সঙ্গে আলাপ হচ্ছিল।
সচিবালয় স্টেশনে নামবেন জানিয়ে তিনি বললেন, ‘আজকে তো অনেক ভিড়, দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে যেতে হচ্ছে। তবুও ট্রেনের ভেতর এসি থাকায় এবং যাওয়ার পথে জ্যাম না পড়ায় কষ্ট লাগছে না।’
তার সঙ্গেই হাসপাতালে যাচ্ছিলেন সহকর্মী শারমিন আক্তার। তিনি ট্রেনে উঠেছিলেন উত্তরা থেকে, তবে কাকতালীয়ভাবে নাজমিনকে পেয়ে যান সহযাত্রী হিসেবে।
শারমিন বললেন, আমি উত্তরা থেকে উঠেছি। আজ গাড়ি ছেড়ে দিয়েছি। কারণ রাস্তাঘাট নিরাপদ না। আর মেট্রোতে মাত্র ৩০ মিনিটে সচিবালয়ে যাব। সেখান থেকে রিকশায় করে হাসপাতালে। ভাবছি- এরপর যখন ট্রেন পুরোপুরিভাবে চালু হবে, তখন মেট্রোতেই আসা-যাওয়া করব। গাড়ি উত্তরায়ই থাকবে।
‘আসলে সকালবেলা যদি বাসা থেকে গাড়ি করেও বের হই, কমপক্ষে দেড় ঘণ্টা লেগে যায়। আর বিকালে বাসায় ফেরার সময় তো তিন-চার ঘণ্টায়ও পারি না।’
যানজটের নগরীতে চলাচলে গতি ফিরিয়ে আনার কারণেই মানুষের আস্থার বাহনে পরিণত হয়েছে মেট্রোরেল। শরীফ হোসেন নামের এক যাত্রী বলেন, আমি এখন কাউকে সময় দিয়ে বলতে পারি যে আমি ২০ মিনিটের মধ্যে আসছি। আগে তো বলতে পারতাম না। কারণ রাস্তার জ্যামের কী অবস্থা সেটা আমরা জানতাম না। ২০ মিনিট সময় দিলে হয়তো এক ঘণ্টায়ও পৌঁছাতে পারতাম না।
যাত্রাবাড়ীর রায়েরবাগে চাকরি করেন শহীদুল ইসলাম। বাসাও তার সেখানেই। মিরপুর এসেছিলেন তার গুরুতর অসুস্থ রোগী দেখতে। তিনি বলেন, আমি মতিঝিল থেকে মেট্রোতে উঠে মিরপুর এসেছি। আধা ঘণ্টার মতো লেগেছে। আমি বাসে আসতে গেলে হয়তো দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা লাগতো। এখন সেটা লাগেনি। আর অবরোধের কারণে গাড়ি কম থাকাতেও আমার কোনও সমস্যা হয়নি। আমি সময় মতোই আসতে পেরেছি। এখন আবার রোগী দেখে চলেও যাচ্ছি।
কালের আলো/ডিএস/এমএম