ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে: তিন সপ্তাহে পাঁচ কোটি টাকার বেশি টোল আদায়
প্রকাশিতঃ 2:09 pm | September 25, 2023

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:
উদ্বোধনের পর ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি যানবাহন চলাচল করেছে। ফলে ৩ সেপ্টেম্বর জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত হওয়ার পর থেকে গত তিন সপ্তাহে পাঁচ কোটি টাকার বেশি টোল আদায় করেছে কর্তৃপক্ষ।
ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প পরিচালক এএইচএমএস আখতার জানান, রবিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) সকাল ৬টা পর্যন্ত ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে মোট ছয় লাখ ২১ হাজার ১৫২টি যানবাহন চলাচল করেছে, যার অধিকাংশই প্রাইভেট কার।
গত ২ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার গাড়িবহরে থাকা ২৫টি গাড়ির জন্য দুই হাজার টাকা টোল পরিশোধের মধ্য দিয়ে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের বিমানবন্দর-ফার্মগেট অংশের উদ্বোধন করেন। প্রতিটি গাড়ির জন্য ৮০ টাকা করে টোল নেওয়া হয়।
কর্তৃপক্ষ গত ৩ সেপ্টেম্বর সকাল ৬টায় বিমানবন্দর থেকে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ফার্মগেট পর্যন্ত অংশটি যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়। এক্সপ্রেসওয়ের মাধ্যমে বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেটে পৌঁছাতে মাত্র ১০ থেকে ১২ মিনিট সময় লাগে।
প্রকল্প পরিচালক এ এইচ এম এস আখতার বলেন, “আমরা আগে ধারণা করেছিলাম প্রতিদিন গড়ে প্রায় ২০ হাজার যানবাহন এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করবে। কিন্তু এখন এক্সপ্রেসওয়েতে চলাচলকারী যানবাহনের সংখ্যা বেড়ে প্রায় ৩০ হাজারে উন্নীত হয়েছে।”
তিনি বলেন, “ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ শেষ হলে ঢাকার কাওলা থেকে কুড়িল-বনানী-মহাখালী-তেজগাঁও-মগবাজার-কমলাপুর-সায়েদাবাদ-যাত্রাবাড়ী হয়ে কুতুবখালী এলাকা পর্যন্ত যান চলাচল করবে। আমরা আশা করছি এটি সম্পন্ন হলে প্রতিদিন প্রায় ৮০ হাজার যানবাহন ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করতে পারবে।”
এক প্রশ্নের জবাবে প্রকল্প পরিচালক এ এইচ এম এস আখতার বলেন, “এক্সপ্রেসওয়ের নকশা অনুযায়ী ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার গতিতে যানবাহন চলাচল করতে পারে। কিন্তু তাদের গতিবেগ র্যাম্পে ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার এবং ৪০ কিলোমিটার পর্যন্ত সীমাবদ্ধ রাখা হয়েছে।”
যদিও তারা এখনও গতিসীমা লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগ শুরু করতে পারেনি। তবে ইতোমধ্যে এক্সপ্রেসওয়েতে সিসিটিভি ক্যামেরা এবং অন্যান্য সরঞ্জাম স্থাপন করা হয়েছে।
এদিকে, গত ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) বাস চলাচল শুরু হয়েছে। যাত্রীরা এখন মাত্র ৩৫ টাকায় ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে পার হচ্ছেন।
এর আগে গত ১৫ সেপ্টেম্বর এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের খেজুর বাগান থেকে জসিমউদ্দিন রোড পর্যন্ত নতুন বাস রুটের ঘোষণা দেন বিআরটিসির চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম।
তিনি জানিয়েছিলেন, প্রাথমিকভাবে তিনটি ডিপো থেকে মোট ৮টি বাস চলাচল করবে। এক্সপ্রেসওয়ের উভয় প্রান্ত থেকে যাত্রীরা বাসে উঠতে পারবেন। বর্তমানে এক্সপ্রেস হাইওয়েতে চলাচলকারী বিআরটিসি বাসের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২টিতে।
উত্তরা-ফার্মগেট বিআরটিসি বাস রুটের ফার্মগেট বাস কাউন্টারে কর্মরত বিআরটিসি বাস কাউন্টারের কর্মী বিশ্বজিৎ বলেন, “১৮ সেপ্টেম্বর থেকে এক্সপ্রেসওয়েতে আটটি দোতলা বাস চলাচল শুরু করে। এখন এক্সপ্রেসওয়ে রুটে মোট ১২টি বাস চলছে। সেবা নিয়ে যাত্রীরা সন্তুষ্ট, যাত্রী সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় আমরাও সন্তুষ্ট।”
তিনি জানান, ফার্মগেট বাস কাউন্টার থেকে উত্তরা পর্যন্ত প্রতি ১০ মিনিটে একটি করে বাস চলাচল করছে। এক্সপ্রেসওয়ের উভয় প্রান্তে যানজটের কারণে বাসগুলে কখনো কখনো দেরি করে।
বিশ্বজিৎ বলেন, “যাত্রীদের সেবা আরও উন্নত করতে আমরা দিনরাত কাজ করে যাচ্ছি। যাত্রী সংখ্যা বাড়ানোর জন্য রুটে বাসের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। শিগগিরই বাসের সময়সূচি কঠোরভাবে বজায় রাখা হতে পারে।”
তানজিলা রহমান নামে এক যাত্রী রবিবার বিকালে ফার্মগেট বিআরটিসি এক্সপ্রেসওয়ে বাস কাউন্টার থেকে উত্তরায় যাওয়ার জন্য টিকেট কিনছিলেন। জানতে চাইলে তিনি বলেন, তিনি সকালে একটি চাকরির ইন্টারভিউয়ের জন্য এসেছিলেন এবং বিমানবন্দর থেকে মাত্র ১০-১৫ মিনিটের মধ্যে ইন্দিরা রোডে পৌঁছান।
তানজিলা বলেন, “পরিষেবাটি আমার খুব ভালো লেগেছে। বিমানবন্দর থেকে এখানে পৌঁছাতে স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক কম সময় লেগেছে। আমি একই পথ দিয়ে ফিরে যাচ্ছি।”
মো.রায়হান নামে আরেক যাত্রী জানান, আগে বাসা থেকে কারওয়ানবাজারে অফিসে পৌঁছাতে অন্তত দেড় ঘণ্টা লাগতো। এটি তার জন্য একটি চমৎকার অভিজ্ঞতা যে এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করে তিনি মাত্র ২০ থেকে ৩০ মিনিটের মধ্যে অফিসে পৌঁছাতে সক্ষম হন।
আরেক যাত্রী রাফিউজ্জামান রিয়ন বলেন, “লোকাল বাসে অনেক বেশি স্টপেজ থাকে। ফলে গন্তব্যে পৌঁছাতে অনেক বেশি সময় লাগে এবং তারা প্রায়ই অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করে।”
তিনি আরও বলেন, “বিআরটিসি এক্সপ্রেসওয়ে রুটে ই-টিকেটিং ব্যবস্থা ব্যবহার করা হয়, তাই ভাড়া ন্যায্য থাকে। বাসের আসনগুলোকে বিআরটিসি আরও আরামদায়ক করে তুলতে পারে। এছাড়া যদি এই রুটে আরও কয়েকটি স্টপেজ থাকে, তাহলে আরও বেশি সংখ্যক যাত্রী উপকৃত হবে।
কালের আলো/এম এ/বিবিএ/টিআর