রাশিয়ার সেনা সদর দপ্তরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে ওয়াগনার

প্রকাশিতঃ 12:20 pm | June 24, 2023

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, কালের আলো:

রাশিয়ার রাজধানী মস্কোর দিকে এগিয়ে যাওয়া ও বর্তমান সামরিক নেতৃবৃন্দকে ক্ষমতাচ্যুত করার হুমকি দিয়েছেন রুশ ভাড়াটে সেনাবাহিনী ওয়াগনার প্রধান ইয়েভগিনি প্রিগোজিন। এর মধ্যেই সামনে এলো রুশ সেনাদের একটি সদর দপ্তরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে প্রিগোজিনের সেনারা।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, রাশিয়ার সেনাবাহিনীর দক্ষিণাঞ্চলের সেনা সদর দপ্তরে বিচরণ করছে ওয়াগনার সেনারা। আর সেটির ভেতর অবস্থান করছেন ইয়েভগিনি প্রিগোজিন। এই সদর দপ্তরটি রোস্তোভ-ওন-দোন বিভাগে অবস্থিত।

ইউক্রেনে রাশিয়ার সেনাবাহিনীর পাশাপাশি যুদ্ধে লিপ্ত ভাড়াটে ওয়াগনার গ্রুপ। এর নেতা ৬২ বছর বয়সী ইয়েভগেনি প্রিগোঝিন বিভিন্ন সময় যুদ্ধের কৌশল নিয়ে রাশিয়ার সেনাবাহিনীর নেতৃ্ত্বের সমালোচনা করে আসছেন।

শুক্রবার তিনি তার দলের সৈন্যদের ওপর এক মারাত্মক মিসাইল হামলার অভিযোগ করেন রাশিয়ার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে। প্রিগোঝিন এই অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ দেখাননি। তবে যারা এই হামলা করেছে তাদের শাস্তি দেয়ার শপথ নেন তিনি।

অডিওবার্তায় নিজের মুখপাত্রের মাধ্যমে ইয়েভগেনি প্রিগোঝিন ইউক্রেনে অভিযানরত রুশবাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহের ঘোষণায় বলেন, ‘তারা (রুশবাহিনী) আমাদের বিভিন্ন সেনা শিবিরের ওপর ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। এসব হামলায় আমাদের অনেক সহযোদ্ধা সেনা সদস্যের মৃত্যুও হয়েছে। এ কারণে পিএমসি ওয়াগনারের সর্বোচ্চ নির্বাহী ফোরাম কমান্ডার্স কাউন্সিল এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, সামরিক নেতৃত্বের হাত থেকে রাশিয়াকে অবশ্যই রক্ষা করতে হবে।’

ওয়াগনারপ্রধান বলেন, ‘আমরা মস্কো অভিমুখে অগ্রসর হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমাদের বাহিনীর ২৫ হাজার সদস্য এই অভিযানে যোগ দিয়েছে। (এই যাত্রাপথে) কেউ যদি আমাদের প্রতিরোধ করতে চায়, সে ক্ষেত্রে আমরা সেই প্রতিরোধকে হুমকি হিসেবে বিবেচনা করব এবং তাৎক্ষণিকভাবে তা ধ্বংস করব।’

বক্তব্যে রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী এবং দেশটির সেনাবাহিনীর চিফ অব জেনারেল স্টাফ ভ্যালেরি গেরাসিমোভের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ জানান ওয়াগনারের শীর্ষ কমান্ডার। তাদের ‘নোংরা বিশ্বাসঘাতক’ উল্লেখ করেন প্রিগোঝিন বলেন, ‘আমরা তাদের নোংরামোর শেষ দেখতে চাই। আমরা কোনো সেনা অভ্যুত্থান করছি না, বরং ন্যায়বিচারের জন্য (মস্কো অভিমুখে) এগিয়ে চলছি।’

এদিকে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ওয়াগনারের ওপর মিসাইল হামলার কথা অস্বীকার করে এবং প্রিগোঝিনকে সবরকম ‘অবৈধ কার্যক্রম’ বন্ধের আহবান জানায়। তার বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহের অভিযোগ এনেছে ক্রেমলিন।

শনিবার সকালে অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায় ওয়াগনারের সৈন্যরা রাশিয়ার শহর রোস্তভ-অন-ডনে প্রবেশ করছে। তবে এই ভিডিও সত্যতা যাচাই সম্ভব হয়নি।

আরেক ভিডিওতে দেখা যায় সশস্ত্র সৈন্যরা এক সরকারি ভবন ঘিরে রেখেছে এবং দুটি ট্যাংক থেকে অস্ত্র তাক করে রাখা হয়েছে। রয়টার্স বলছে এটি পুলিশ হেডকোয়াটার্স ভবন।

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের কাছের লোক হিসেবে খ্যাত প্রিগোঝিনে দোষীদের সাজা দিতে রাশিয়ার জনগণকেও তার সঙ্গে থাকার আহবান জানান।

ইউক্রেনের সীমান্তবর্তী শহরগুলোতে অধিবাসীদের ঘরের ভেতর শান্ত থাকার আহবান জানিয়েছে স্থানীয় গভর্নর।

এমফোর হাইওয়ে লিপেতস্ক ও ভরোনেঝ অঞ্চলের সীমান্তে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন লিপেতস্কের গভর্নর। এমফোর মস্কোর সঙ্গে রাশিয়ার দক্ষিণাঞ্চলের সংযোগ ঘটায় এবং একই সঙ্গে রোস্তভ অঞ্চল ও এর প্রধান শহর রোস্তফ-অন-ডনেও যাবার রাস্তা এটি।

মস্কোর মেয়র জানিয়েছেন রাজধানীতে সন্ত্রাস-দমন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে নিরাপত্তা নিশ্চিতে।

সশস্ত্র বিদ্রোহের জন্য প্রিগোজিনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে রাশিয়ার এফএসবি সিকিউরিটি সার্ভিস। ওয়াগনার প্রাইভেট মিলিটারি কোম্পানির বাহিনীকে প্রিগোজিনের আদেশ উপেক্ষা করে তাকে গ্রেপ্তার করার আহ্বান জানিয়েছে মস্কো।

এদিকে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী বলেছে, মস্কোর সঙ্গে ওয়াগনারের সংঘর্ষ পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।

দেশটির সামরিক গোয়েন্দা প্রধান কিরিলো বুদানভ বলেছেন, প্রতিদ্বন্দ্বী রাশিয়ান দলগুলি “ক্ষমতা এবং অর্থের জন্য একে অপরকে খেতে শুরু করেছে”।

কালের আলো/ডিএস/এমএম