উন্নত দেশগুলো ক্ষতিপূরণ না দিলে জলবায়ু সম্মেলন বৃথা: মেয়র আতিক

প্রকাশিতঃ 11:21 am | November 16, 2022

ডেস্ক রিপোর্ট, কালের আলো:

উন্নত দেশগুলো ক্ষতিপূরণ না দিলে জলবায়ু সম্মেলন বৃথা হবে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম।

তিনি বলেছেন, সময় এখন কথা কম বলে কাজ বেশি করার। উন্নত দেশগুলো আমাদের কোনোভাবেই সাপোর্ট দিচ্ছে না। তারা উন্নয়নশীল ও ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে ক্ষতিপূরণ ও সাপোর্ট না দিলে এবারের জলবায়ু সম্মেলন বৃথা হবে।

মঙ্গলবার (১৫ নভেম্বর) মিসরের শার্ম আল শেখে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। অ্যা ম্যাটার অব স্কেল: সাব-ন্যাশনাল অ্যাকশন ফর ক্লাইমেট এম্বিশন শীর্ষক এ আলোচনা সভার আয়োজন করে যুক্তরাষ্ট্রের ইউ.এস সেন্টার।

ডিএনসিসি মেয়র বলেন, এটি হ্যান্ড টু হ্যান্ড নয়, হার্ট টু হার্ট হিসেবে কাজ করতে হবে। বিশ্বজুড়ে যুদ্ধ বন্ধ করে অস্ত্র কিনতে যে অর্থ ব্যয় হচ্ছে তার তিনের একাংশ পরিবেশের জন্য ব্যয় করতে হবে। তাহলেই আমরা আগামী প্রজন্মকে একটি সুস্থ পরিবেশ দিয়ে যেতে পারব।

তিনি বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে শহরে মানুষের সংখ্যা বেড়েই চলছে। শহরের খালি জায়গা, সবুজ স্থান ও জলাশয়ে আবাসন গড়ে তোলা হচ্ছে। শহরে দারিদ্র্যের সংখ্যাও বাড়ছে। তাদের জন্য আবাসন, খাবার পানি সরবরাহ, স্যানিটেশন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা খুবই চ্যালেঞ্জিং। অবিলম্বে পদক্ষেপ না নিলে জলবায়ু পরিবর্তনে বিপর্যয় বাড়তেই থাকবে।

২০৩০ সালের আগে মাত্র ৮টি জলবায়ু সম্মেলন বাকি রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন এখনই সময় কথা বলার। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। প্যারিসচুক্তি অনুযায়ী তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমাবদ্ধ রাখতে যথেষ্ট পরিমাণ গ্রিনহাউজ গ্যাস (জিএইচজি) নির্গমন হ্রাস করতে হবে।

এ সময় মেয়র আতিক বলেন, ‘খুবই সামান্য পরিমাণ গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমন করা সত্ত্বেও জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ও ক্ষতিগ্রস্ত দেশের মধ্যে বাংলাদেশ একটি। বাংলাদেশ প্রতি বছর জনপ্রতি গড়ে ০.৫ মেট্রিক টন কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ করে। অথচ উন্নত দেশগুলো ২০ থেকে ৩০ গুণ বেশি নিঃসরণ করছে। যুক্তরাষ্ট্রে জনপ্রতি ১৫ দশমিক ২ মেট্রিক টন নিঃসরণ করে, যা প্রায় ৩০ গুণ বেশি। কিন্তু ২০৫০ সালের মধ্যে বা তার আগেই সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশের প্রায় ১৭ শতাংশ ভূমি পানিতে তলিয়ে যাবে। অতএব এখনই উন্নত দেশগুলোকে পদক্ষেপ নিতে হবে।

উন্নত দেশগুলোকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, পরিবেশের ক্ষতির কারণে আমাদের শস্য নষ্ট হচ্ছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে প্রান্তিক খামারিরা নিঃস্ব হয়ে যায়। উন্নত দেশগুলো বেশি বেশি কার্বন নিঃসরণ করে আমাদের ক্ষতি করছে। জমিতে লবণাক্ত পানি জমে ফসল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

এ কারণে আমাদের শস্যবিমা করতে হবে। বিমার অর্থ উন্নত দেশগুলোকে পরিশোধ করার দাবি জানান মেয়র আতিক।

জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতি মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বের কথা তুলে ধরে ডিএনসিসি মেয়র বলেন, শেখ হাসিনা সিটি অব ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের (সিভিএফ) সভাপতি ছিলেন। জলবায়ু পরিবর্তন ও প্রভাব মোকাবিলায় জরুরি বৈশ্বিক পদক্ষেপের জন্য তিনি আহ্বান জানিয়েছেন। কপ-২৬ এ তিনি উন্নত দেশগুলোকে দায়িত্ব নিতে এবং বার্ষিক ১০০ বিলিয়ন ডলার আর্থিক সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি পূরণের আহ্বান জানিয়েছেন।

বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় কাজ করে যাচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা প্রণয়ন করে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় কাজ করে যাচ্ছে। বাংলাদেশ দুর্যোগ মোকাবিলায় সাফল্য দেখিয়েছে এবং মৃতের সংখ্যা ও ক্ষয়ক্ষতি উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করেছে। আশ্রয়ণ নামে বাস্তুচ্যুত মানুষের জন্য জলবায়ু সহনশীল আশ্রয় নামে একটি বিশাল আবাসন প্রকল্প প্রধানমন্ত্রী হাতে নিয়েছেন। জলবায়ু উদ্বাস্তুদের জন্য বিশ্বের বৃহত্তম আবাসন প্রকল্পগুলোর মধ্যে এটি একটি। এই প্রকল্পের আওতায় চার হাজার ৪০৯টি জলবায়ু উদ্বাস্তু পরিবারকে পুনর্বাসনের জন্য আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসহ ১৩৯টি পাঁচতলা ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। প্রকল্পটিতে রয়েছে ১ দশমিক ৫ মিলিয়ন গাছ রোপণ, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ, সৌর বিদ্যুৎ ব্যবস্থা প্রভৃতি।

শহরকে আরও বসবাসযোগ্য ও অন্তর্ভুক্তিমূলক করতে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন প্রতিশ্রুতিবদ্ধ মন্তব্য করে মেয়র বলেন, আমরা খাল এবং জলাশয়গুলি পুনরুদ্ধার করে চলেছি। খেলার মাঠ ও পার্ক নির্মাণ করেছি, বৃক্ষরোপণ করছি। গত মাসে ইউনাইটেড ইন বিল্ডিং ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্স বিভাগের অধীনে সি৪০ সিটিস ব্লুমবার্গ ফিলানথ্রপিস অ্যাওয়ার্ডের মাধ্যমে আমাদের প্রচেষ্টা স্বীকৃত হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘ক্লাইমেট জাস্টিস (জলবায়ু ন্যায়বিচার) আমাদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন এবং প্রাপ্য। তিনটি বিষয়ে জোর দিতে হবে। এগুলো হচ্ছে- মোট জলবায়ু তহবিলের অন্তত ৫০ শতাংশ ঢাকার মতো ঝুঁকিপূর্ণ ও ক্ষতিগ্রস্ত শহরগুলোকে দিতে হবে, জলবায়ু উদ্বাস্তুদের ক্ষতিগ্রস্ত ও ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে সরিয়ে নিরাপদ স্থানে আবাসনের ব্যবস্থা কর‍তে হবে ও তাদের মর্যাদা দিতে হবে এবং জলবায়ু উদ্বাস্তুদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য সহায়তা দিতে হবে।

কালের আলো/এসবি/এমএম