ময়মনসিংহে এসপি’র বিট পুলিশিংয়ে উপকৃত সেবাপ্রার্থীরা

প্রকাশিতঃ 8:14 pm | August 16, 2022

অনিক খান, ময়মনসিংহ :

প্রতিটি মানুষের পুলিশি সেবাপ্রাপ্তির অধিকার রয়েছে। আগে নানা সমস্যা থাকায় সদিচ্ছা থাকা সত্বেও নাগরিকদের কাঙ্খিত সেবা নিয়ে ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিত সেবাপ্রার্থীদের মাঝে। তবে বর্তমানে নানা সীমাবদ্ধতা পেরিয়ে ময়মনসিংহে জেলা পুলিশের বিট পুলিশিং কার্যক্রম শক্তিশালী হওয়ায় বেড়েছে পুলিশের সক্ষমতা। এতে কোন ধরনের হয়রানি ছাড়াই প্রত্যাশিত সেবা পেয়ে খুশি সেবাপ্রার্থীরা।

এই সেবার নেপথ্যে জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) মো: আহমার উজ্জামানের ভূমিকা অনস্বীকার্য বলে মনে করেন জেলা কমিউনিটি পুলিশিংয়ের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মমতাজ উদ্দিন মন্তা ও জেলা নাগরিক আন্দোলনের সাধারন সম্পাদক প্রকৌশলী নূরুল আমিন কালাম।

তাদের ভাষ্য, দেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে সুষ্ঠু আইন শৃঙ্খলার বিকল্প নেই। আর এই সুশৃংখল আইনশৃঙ্খলার জন্য জনগণের সহযোগিতা ও সম্পৃক্ততা অতি আবশ্যক। ফলে এসব বিষয় সমন্বয় করতেই জেলার বর্তমান এসপি পুলিশি সেবা আরও গণমুখী ও জনবান্ধব করার লক্ষ্যে নানাবিধ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এক্ষেত্রে বিট পুলিশিং কার্যক্রম অন্যতম। এতে পুলিশের প্রতি সাধারন মানুষের আস্থার সংকট কাটিয়ে পুলিশ-জনতা সর্ম্পকের উন্নয়ন ঘটেছে বহুলাংশে।

জানা যায়, ২০১৯ সালে ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার হিসাবে যোগদানের পর সরকারের বিট পুলিশিং কার্যক্রমকে গনমুখী ও জনবান্ধব হিসেবে গড়ে তোলা জন্য কাজ শুরু করেন মোহা: আহমার উজ্জামান। এ লক্ষ্যে জেলার প্রতিটি থানার প্রত্যন্ত অঞ্চলে কীভাবে পুলিশের নিয়মিত টহল নিশ্চিত করা যায়, পুলিশিং কার্যক্রমে কীভাবে আরও গতি আনা যায় এসব বহুমুখী প্রশ্নের সমাধানের পথ বের করে একটি শক্তিশালী বিট পুলিশিংয়ের ভীত রচনা করেন তিনি।

সূত্র জানায়, বিট পুলিশিং কার্যক্রমের জন্য জেলার প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদে বিষয়ভিত্তিক কমিটি রয়েছে এবং এই কমিটিগুলো জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের প্রতিটি মাসিক সভায় উপস্থিত হয়ে বিদ্যমান সমস্যা সমাধানে কথা তুলে ধরেন। এর মধ্যে আইনশৃঙ্খলা সভা, জন্মমৃত্যু নিবন্ধন সভা, পারিবারিক বিরোধ নিরসন এবং নারী ও শিশুকল্যাণ সভা, চোরাচালান নিরোধ সভা উল্লেখযোগ্য।

জেলা পুলিশ সূত্র জানায়, বিট পুলিশিং কার্যক্রমের মাধ্যমে মামলা তদন্ত, আসামি গ্রেফতার, গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহসহ অপরাধমূলক তথ্য সংগ্রহ রা। এরপর ওইসব তথ্য বিট পুলিশিংয়ের নিবিড় পর্যবেক্ষণে প্রকৃত সত্য ও রহস্য উদঘাটন করা হচ্ছে।

এতে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী উপকৃত হওয়ার পাশাপাশি পুলিশের ভাবমূর্তিও উজ্জ্বল হচ্ছে। সেই সাথে যে কোন প্রয়োজনে পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে সহজেই যোগাযোগ ও সাক্ষাৎ করতে পারছেন সেবাপ্রার্থী সাধারণ মানুষ।
একাধিক উপকারভোগী এই তথ্য নিশ্চিত করে জানান, বিট পুলিশিংয়ের কারণে শহরের আলিগলিতে অপরাধ অনেকটা নির্মুল হয়েছে। সেই সাথে জেলার প্রতিটি ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত এই কার্যক্রম বিস্তৃত হওয়ায় অপরাধ প্রবণতা কমেছে। এতে পুলিশিং সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছানোও সহজতর হয়ে উঠেছে।

কোতয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ কামাল আকন্দ জানান, সদর উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়ন এবং সিটি কর্পোরেশনের প্রতিটি ওয়ার্ডকে একটি বিট হিসেবে গণ্য করে চলছে এই কার্যক্রম। এ জন্য প্রতি বিটের দ্বায়িত্বে রয়েছে একজন এসআই এবং একজন এএসআই। তারা যথাক্রমে বিট কর্মকর্তা ও সহকারী বিট কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করে নিয়মিত মনিটরিং করছেন এই কার্যক্রম। আর এ জন্য প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্সে একটি করে কক্ষ নেয়া হয়েছে, যা বিট পুলিশিং কর্মকর্তার কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

এ সম্পর্কে জেলা নাগরিক আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী নূরুল আমীন কালাম বলেন, জনগণের সঙ্গে পুলিশের দূরত্ব কমিয়ে বিশ্বাস, আস্থাহীনতা ও ভুল বোঝাবুঝির অবসানের লক্ষ্যেই কমিউনিটি পুলিশিং কার্য়ক্রম শুরু হয়। আর এই কমিউনিটি পুলিশিং কার্য়ক্রমকে আরো গতিশীল করতে নিয়মিত সহযোগীতা করে যাচ্ছে এসপির বিট পুলিশিং কার্যক্রম। এতে উপকৃত হচ্ছে সেবাপ্রার্থীরা।

জেলা কমিউনিটি পুলিশিংয়ের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মমতাজ উদ্দিন মন্তা জানান, পুলিশ সুপার আহমার উজ্জামানের বিট পুলিশিং কার্যক্রম ময়মনসিংহবাসীর কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। তার কর্মগুনে আলো ছড়িয়ে তিনি জয় করেছেন জেলাবাসীর মন। বর্তমানে তিনি অতিরিক্ত ডিআইজি হিসেবে সদ্য পদোন্নতিপ্রাপ্ত হয়ে ময়মনসিংহ হতে বিদায় নিয়ে অন্যত্র যোগদান করবেন। তবে তার কমিনিটি পুলিশিং ও বিট পুলিশিং কর্মকান্ডের সুফল ভোগ করবে এই অঞ্চলের মানুষ।

এ বিষয়ে ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার (এসপি) মোহা: আহমার উজ্জামান বলেন, বিট পুলিশিংয়ে সাধারন মানুষ সহজেই তাদের সমস্যার কথা পুলিশকে জানিয়ে প্রতিকার চাইতে পারছেন। এজন্য প্রতান্ত গ্রামাঞ্চল থেকে থানায় আসার প্রয়োজন হয় না। তারা নিজ এলাকার ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্সে গেলেই পাচ্ছে তাদের কাঙ্খিত সেবা। এর ফলে পুলিশি সেবা জনবান্ধব হয়ে উঠায় কমছে মাদকের ব্যবহার ও ক্রয়-বিক্রয়, জঙ্গি হুমকি, নারী ও শিশু নির্যাতন এবং সামাজিক অপরাধ।

কালের আলো/এসবি/এমএম