বঙ্গবন্ধুর বায়োপিক নিয়ে জ্যোতিকা জ্যোতির ক্ষোভ

প্রকাশিতঃ 5:09 pm | March 19, 2022

শোবিজ ডেস্ক, কালের আলো:

বাংলাদেশ ও ভারত সরকারের যৌথ প্রযোজনায় ভারতীয় পরিচালক শ্যাম বেনেগাল নির্মাণ করেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বায়োপিক। আগে ছবিটির নাম ছিল ‘বঙ্গবন্ধু’, পরে গত ১৭ মার্চ জাতির পিতার জন্মদিনে পাল্টে ফেলা হয় নাম। সেদিন প্রকাশ পায় ছবির পোস্টারও।

‘মুজিব: একটি জাতির রূপকার’ সিনেমায় অভিনয় করেছেন একঝাঁক বাংলাদেশি অভিনয়শিল্পী। এ সিনেমায় বঙ্গমাতার চরিত্রে অভিনয়ের জন্য অডিশন দিয়েছিলেন জ্যোতিকা জ্যোতি।

চলতি বছরই সিনেমাটি মুক্তি পাওয়ার কথা রয়েছে। সিনেমাটির জন্য শুভকামনা জানিয়ে নিজের ক্ষোভ ঝারলেন জ্যোতিকা জ্যোতি। শুক্রবার (১৮ মার্চ) ফেসবুকে দীর্ঘ স্ট্যাটস দিয়ে সিনেমাটি নিয়ে শেষ পোস্ট দিয়ে জীবনের এই পর্বের ইতি টানছেন উল্লেখ করেন অভিনেত্রী। সেই সঙ্গে সিনেমাটি দেখার জন্য খুব অপেক্ষায় আছেন তাও জানিয়েছেন জ্যোতি।

তিনি লিখেছেন, মূলত আমি আমার সাদৃশ্য খুঁজে পাই শেখ হাসিনা চরিত্রের সাথে। গঠন এবং মানসিকতা দুইদিক থেকেই। আমার স্ট্রাগল, এটিচ্যুড, নাক, হাসি যেন অনেকটাই মেলে। সেই প্রিপারেশন নিয়েই অডিশন দিতে গেছিলাম শ্যাম বেনেগালের ‘মুজিব’ প্রজেক্টে। সেদিন অডিশন নিয়েছিলেন এই সিনেমার কাস্টিং ডিরেক্টর আর এক টেবিল বাংলাদেশি নতুন-পুরনো আমলা। কাস্টিং ডিরেক্টর আমাকে রেনু (বঙ্গমাতা) চরিত্রের জন্য ক্যামেরার সামনে দাঁড় করালেন, পছন্দ করলেন।

রাতে হোয়াটসঅ্যাপে আরো কিছু ছবি চাইলেন। আমি সকালেই আমার এক ফটোগ্রাফার বন্ধুকে অনুরোধ করে বাসায় নিজেই রেডি হয়ে ছবি তুলে পাঠালাম। আমি জানলাম ওনারা রেনুকে পেলেন। এই ছবিগুলোই আপনারা অনেকে দেখেছেন অনলাইনে, পত্রপত্রিকায়। আবার অডিশনের ডাক পড়ল শ্যাম বেনেগালের সামনে। যদিও সেদিন অডিশনে না যাওয়ার জন্য কড়াভাবে আমাকে দূরে রাখা হয়েছিল অডিশনের বাংলাদেশি টেবিল থেকে।

কিন্তু কাস্টিং ডিরেক্টর এবং ডিরেক্টর স্বয়ং যখন আমার নাম ধরে খুঁজছেন তখন আমাকে জানানো হলো এবং গিয়ে হাজির হলাম। সামনে পরিচালক শ্যাম বেনেগাল এবং এক টেবিলে নতুন-পুরনো বাংলাদেশি আমলা। ভারত টিম হাসিমুখে আমাকে টিকমার্ক দিলেও বাংলাদেশি টিমের মুখে সেই কলমের কালি যেন ছাই হয়ে উড়ে পড়ল! কিছুদিনের মধ্যেই আমি বাদ পরলাম।

এমন খবরে ভেঙে পড়েছিলেন জানিয়ে জ্যোতিকা জ্যোতি লিখেন, কান্নাভরা চোখ, রুদ্ধ গলা, কাঁপা কাঁপা বুক আর এলোমেলো পায়ে এই যাদুর শহরে আমি এদিক-সেদিক ছুটলাম কিছুদিন। কোনো কিছুরই কুল কিনারা পাচ্ছিলাম না। এতটাই আপসেট ও মরিয়া হয়েছিলাম যে ভেবেছিলাম প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করব, অডিশনের ছবিগুলো দেখাব। নিশ্চই তিনি তার মাকে চিনে নেবেন। কিন্তু তার কাছে এই কাজে যাওয়া কতটা সঠিক হবে বুঝতে পারছিলাম না।

প্রধানমন্ত্রীর একজন বিশেষ সহকারী, আমার শ্রদ্ধেয় সিনিয়র জানালেন, এই চলচ্চিত্রের পুরো দায়িত্বে আছেন প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড: গওহর রিজভী। তার সাথে যোগাযোগ করতে। তিনি ভালো মানুষ, সঠিক সাজেশন দিতে পারবেন। কলিজা ভরা সাহস আর জেদ নিয়ে যোগাযোগ করলাম তার সাথে। একগাদা অভিযোগ নিয়ে তার সামনে হাজির হলাম। আমার অডিশনের ছবি দেখে তিনিও বিস্মিত হলেন। আমার সাথে ঘটে যাওয়া সবকিছুর জন্য সহমর্মিতা ও দু:খ প্রকাশ করলেন।

তিনি বললেন, অবশ্যই বিষয়টি দেখবেন, নেক্সট মিটিংয়ে আলোচনায় বিষয়টি তুলবেন। তিনি আরো জানালেন, প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন একদম স্বাধীনভাবে পরিচালকের ওপর সব ছেড়ে দিতে, স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিতে। তারপর আর কী বলব। ঘাটে ঘাটে কত জল গড়ালো…আমলাতন্ত্রের কাছে হেরে গেলো সব নির্দেশনা…ক্ষমতা!

এই সিনেমার শুটিং শুরুর ১৮দিন আগে আবারো আমার সাথে যোগাযোগ করা হলো। আবারো সিলেক্ট করা হলো। ৩দিন পর এগ্রিমেন্ট। ৫দিন পর জানলাম আমি আবারো বাদ! অডিশনের পর আবার দেখা হয়েছিল পরিচালক শ্যাম বেনেগালের সাথে। দুই বার সিলেকশন থেকে বাদ পড়ার পরও তার কারণ অজানা আমাকে যন্ত্রণা দিচ্ছিল। সাহস করে বলেই ফেললাম তাকে, জানতে চাইলাম কারণ।

উনি বললেন, আমি নাকি সেসময় অন্য প্রজেক্ট নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম! মানে তাকে বলা হয়েছিল আর কি! আমি আবারো দু:খ ভুলে সোজা হলাম। আবারো নিজেকে বুঝালাম আমার জন্য যা বরাদ্দ দুনিয়াতে, তার বেশি আসলে হবে না। মাঝে শুধু একটু টানাপোড়েন! এখন আমি সামলে উঠেছি। বরং মনে হচ্ছে যা হয় ভালোর জন্যই হয়।

‘বঙ্গবন্ধু’ নামে সিনেমাটির শুটিং শুরু হয়ে শেষ হলেও বঙ্গবন্ধুর ১০২তম জন্মদিনে এসে বদল হলো এর নাম। জানা গেলো, সিনেমাটির নতুন নাম রাখা হয়েছে ‘মুজিব: একটি জাতির রূপকার’।

সিনেমায় বঙ্গবন্ধু হিসেবে আরিফিন শুভ ও শেখ হাসিনা সেজেছেন নুসরাত ফারিয়া। এছাড়াও বঙ্গবন্ধুর স্ত্রী ফজিলাতুন নেছা মুজিবের চরিত্রে অভিনয় করেন নুসরাত ইমরোজ তিশা। অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে দেখা যাবে, খায়রুল আলম সবুজ (লুৎফর রহমান), দিলারা জামান (সাহেরা খাতুন), সায়েম সামাদ (সৈয়দ নজরুল ইসলাম), শহীদুল আলম সাচ্চু (এ কে ফজলুল হক), প্রার্থনা দীঘি (ছোট রেনু), রাইসুল ইসলাম আসাদ (আবদুল হামিদ খান ভাসানী), গাজী রাকায়েত (আবদুল হামিদ), তৌকীর আহমেদ (সোহরাওয়ার্দী), সিয়াম আহমেদ (শওকত মিয়া), মিশা সওদাগর (জেনারেল আইয়ুব খান), এলিনা (বেগম খালেদা জিয়া) ও জায়েদ খানকে (টিক্কা খান)।

কালের আলো/এসবি/এমএম