পূরণ হচ্ছে রাজধানীবাসীর আরও একটি স্বপ্ন
প্রকাশিতঃ 10:27 am | March 14, 2022

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো:
দেখতে দেখতে অনেকটাই এগিয়ে গেছে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ। সঙ্গে সঙ্গেই পূরণ হতে চলেছে রাজধানীবাসীর আরও একটি স্বপ্ন। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তেজগাঁও পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার অংশ আগামী বছর ডিসেম্বর নাগাদ খুলে দেওয়ার তোড়জোড় শুরু হয়েছে। এই টার্গেট নিয়েই চলছে পুরোদমে কাজ। যদিও ২০২৩ সালের জুনের মধ্যে পুরো এক্সপ্রেসওয়ের কাজ শেষ করার কথা রয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, এই মূহুর্তে চাইলেই বিমানবন্দর থেকে কুড়িল পর্যন্ত ভায়াডাক্টের উপর দিয়েই হেঁটে চলে আসা সম্ভব। তবে এই প্রকল্পের সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে রেল লাইনের কূলঘেষে হওয়ার কারণেই এমন ব্যস্ততম জায়গায়ও এসেও এই প্রকল্পের কারণে কোনো রকম ভোগান্তিতে পড়তে হবে না নগরবাসীকে।
শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে কাটাখালি পর্যন্ত পুরো পথে পড়তে হবে না কোনো সিগন্যালে। পোহাতে হবে না যানজটও। চলতি পথের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টেই থাকছে ওঠানামার ব্যবস্থা। পুরো প্রকল্পে একটু বিলম্বও বিমানবন্দর টু তেজগাঁও-১২ কিলোমিটার চালুর পরিকল্পনা এই বছরের শেষের দিকেই।
সেই হিসাব কষেই এগিয়ে চলছে কাজ। শুরু থেকে ভায়াডাক্ট উঠে গেছে সাড়ে ৬ কিলোমিটার। বাকি পথের র্যাম আর কলামও এখন দৃশ্যমান। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছে, অক্টোবরের মধ্যেই তেজগাঁও পর্যন্ত ঢালাই শেষ হবে। পিচের আস্তর দিয়ে চলাচলের উপযুক্ত করতে দুই মাসই যথেষ্ট।
জানা যায়, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বনানী, তেজগাঁও, মগবাজার, কমলাপুর, সায়েদাবাদ ও যাত্রাবাড়ী হয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী পর্যন্ত এই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের দৈর্ঘ্য হবে ১৯.৭৩ কিলোমিটার। এর নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে- ৮ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা।
এর মধ্যে বাংলাদেশ সরকার দেবে ২ হাজার ৪১৩ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। বাকি টাকা দেবে নির্মাতা প্রতিষ্ঠান। মূল এক্সপ্রেসওয়েতে ওঠানামার জন্য থাকবে ২৭ কিলোমিটার দীর্ঘ ৩১টি র্যাম্প। র্যাম্পসহ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মোট দৈর্ঘ্য দাঁড়াবে ৪৬.৭৩ কিলোমিটার।
ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প পরিচালক এ এইচ এম সাখাওয়াত আখতার বলেন, ‘আইগার্ডার বসানো ওপরে যে ডেক্সস্লাভটা, এটা আমরা চাচ্ছি যে অক্টোবরের মধ্যে আমরা তেজগাঁও পর্যন্ত শেষ করার। তাহলে হাতে দুই মাস সময় পেলে তখন আমরা বাকি কাজটুকু শেষ করে দিতে পারবো। যেটা আমাদের প্রয়োজন সেটা হচ্ছে আইগার্ডারের উপর বসাচ্ছি এবং প্রোডাক্টশন এবং ইন্সটেলশনটা করছি এটা একটু সময় লাগছে। এটা হয়ে গেলে আমাদের মোটামুটি কাজটা শেষ হয়ে যাবে।’
নানা জটিলতায় আটকে ছিল কাজ
প্রকল্প হাতে নেওয়ার পর নানা জটিলতায় ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের (উড়ালসড়ক) কাজ আটকে ছিল। ২০১৩ সালে প্রকল্পের জন্য ঠিকাদারদের সঙ্গে চুক্তি হলেও কাজ শুরু হতে আরও ৭ বছর গড়িয়ে যায়। তবে প্রকল্প পরিচালক জানান, ২০২০ সালে শুরু হওয়ার পর কাজ এগিয়েছে ‘তড়তড়িয়ে’। করোনা মহামারির মধ্যেও কাজ থেমে থাকেনি।
প্রকল্প পরিচালক সাখাওয়াত আখতার জানান, প্রকল্পটি হাতে নেওয়ার পর ভূমি অধিগ্রহণ, অর্থের সংস্থানসহ নানা জটিলতায় প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০২০ সালের জানুয়ারিতে। এর মধ্যেই হানা দেয় করোনা মহামারি। তবে মহামারির মধ্যেও কাজ থেমে থাকেনি।
প্রকল্পের চুক্তি হওয়ার পর কাজ শুরু হতে সাত বছর দেরি হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে প্রকল্প পরিচালক জানান, প্রকল্পের একটি বড় বাঁধা ছিল ভূমি অধিগ্রহণ। প্রকল্পের ২১০ একর জমির মধ্যে রেলের জমি ১২৮ একর, সড়ক ও জনপথ বিভাগের ২৭ একর। সাধারণ মানুষের ২৮ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। বাকি জমি ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের।
প্রকল্প পরিচালক বলেন, ‘এসব জমি অধিগ্রহণ করে ঘর-বাড়ি স্থাপনা ভেঙে প্রকল্পের ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে অনেক সময় লেগে গেছে। এর বাইরে প্রকল্পের অর্থের সংস্থানের একটা বিষয়ও ছিল।’ পরবর্তীতে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানগুলো চীনা দুটি ব্যাংক থেকে ৮৬ কোটি ১০ লাখ ডলার ঋণ নিয়ে নির্মাণ কাজ শুরু করে। প্রকল্পের ২৭ শতাংশ অর্থাৎ দুই হাজার চারশ ১৩ কোটি টাকা (ভিজিএফ) দেবে বাংলাদেশ সরকার।
নির্ধারণ হয়েছে এক্সপ্রেসওয়ের টোল
ইতোমধ্যেই নির্ধারণ হয়েছে এক্সপ্রেসওয়ের টোল। ছোট গাড়ি অর্থাৎ প্রাইভেটকার বিমানবন্দর থেকে কাঁটাখালি পর্যন্ত যেতে লাগবে ১২৫ টাকা। বাসের ক্ষেত্রে লাগবে ২৫০ টাকা। ট্রাক ৫০০ আর লরির টোল হবে ৬২৫ টাকা। এছাড়া অন্য যে কোনো পয়েন্টে অর্থাৎ মাঝ পথে নামলে ছোট গাড়ি ১০০ টাকা লাগবে। বাকী বাহন যেমন বাস, ট্রাক ও লরির জন্য যথাক্রমে দিতে হবে ২০০, ৪০০ ও ৫০০ টাকা টোল।
প্রকল্প পরিচালক এ এইচ এম সাখাওয়াত আখতার এ বিষয়ে বলেন, ‘টোলগুলোকে চারটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। একটি হচ্ছে, ছোট গাড়িগুলো যেগুলো কার্টার এগুলো টোল এলটুএল এই মাথা থেকে শুরু করে ওই মাথা পর্যন্ত গেলে ১২৫ টাকা করে দিবে। বাস যেগুলো সেগুলো এদিক ইন্টার মিডিয়ার যে কোন পয়েন্টে তারা নামে মাঝখানে তাহলে ছোট গাড়ির ক্ষেত্রে ১০০ টাকা। ঠিক আনুপাতিকভাবে ডাবল বাস ট্রাকগুলো ৪ গুণ আর বড়গুলো ৫ গুণ।
কালের আলো/এসবি/এমএম