ছেলের লাশ টয়লেটের ট্যাংকিতে পুঁতে ভোট প্রার্থনায় পিতা-মাতা
প্রকাশিতঃ 6:52 pm | November 26, 2021

কালের আলো সংবাদদাতা:
নিজের সন্তান গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করার পর ঝামেলা এড়াতে ৪ দিন লাশ টয়লেটের ট্যাংকিতে ফেলে দিয়ে নির্দ্বিধায় এলাকার জনগণের কাছে গিয়ে ভোট প্রার্থনায় বেড়িয়েছে পিতা-মাতা।
শুক্রবার (২৬ নভেম্বর) ঘটনার ৪ দিন পর হঠাৎ বিষয়টি জানাজানি হলে, সকাল থেকে হাজার হাজার উৎসুক জনতার ভীড় জমে নিহতের বাড়িতে। চাঞ্চল্যকর এবং নির্মম এ ঘটনাটি ঘটেছে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার নরিনা গ্রামে।
এলাকাবাসী জানায়, শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে শাহজাদপুর থানা পুলিশের একটি দল উপজেলার নারিনা ইউনিয়নের পূর্ব পাড়ায় সংরক্ষিত মহিলা আসনের প্রার্থী করুনা বেগম ও তার স্বামী আলহাজকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে শাহজাদপুর থানা পুলিশ। মারা যাওয়া করিম তাদেরই ছেলে।
শাহজাদপুর থানা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে নিহতের বাবা-মা জানায়, তাদের মেঝো ছেলে করিমের লাশ বাড়ির পায়খানার সেপটিক ট্যাংকে ফেলে বালি দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে। তাদের ছেলের মৃত্যুর বিষয়ে সদস্য প্রার্থী করুণা বেগম ও তার স্বামী আলহাজ বলেন, মেঝো ছেলে করিম দীর্ঘদিন ধরে ড্যান্ডিসহ বিভিন্ন মাদকের নেশায় আসক্ত ছিল।
পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা এসব চাঞ্চল্যকর তথ্য জানায় নিহতের বাবা-মা। তারা আরও বলেন, দুই বছর আগে ছেলের বৌ চিরকুট ( আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়) লিখে আত্মহত্যা করে। তখন সেই ঝামেলা শেষ করতে বিভিন্ন খাতে ম্যানেজের নামে ২ লাখ ৭০ হাজার টাকা খরচ হয়। সেই টাকাও পরিশোধ করতে হয় বাড়ি বিক্রি করে। এখন ছেলে আত্মহত্যা করার পর লোক জানাজানি হলে যদি আবারও মোটা অর্থ জরিমানা দিতে হয় সেই শংকায় ছেলের লাশ টয়লেটের ট্যাংকিতে চাপা দেয়। সেই সাথে আসন্ন নরিনা ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে সংরক্ষিত মহিলা সদস্য প্রার্থী হিসেবে এলাকার ভোটারদের কাছে গিয়ে ভোট প্রার্থনা করছেন নিহতের মা নাজমা খাতুন ওরফে করুনা।
এদিকে, ঘটনা জানাজানির পর শাহজাদপুর থানা পুলিশ উপস্থিত হয়ে শুক্রবার বিকেলে নিহতের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করেন। সেই সাথে নিহতের পিতা আলহাজ্ব, মাতা নাজমা খাতুনসহ ৪ জনকে আটক করে থানায় নিয়ে আসেন।
এ বিষয়ে নরিনা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফজলুল হক মুন্ত্রী জানান, ‘৪ দিন ধরে ছেলের লাশ গুম করে রেখে নির্বাচনে ভোট প্রার্থনা করছে সত্যি এটা আশ্চর্যজনক। আমরা একবারের জন্যও অনুমান করতে পারিনি তারা এমন ঘটনা ঘটাতে পারে।
শাহজাদপুর থানার পরিদর্শক (অপারেশন এন্ড কমিনিউটিং পুলিশিং) আব্দুল মজিদ বলেন, ‘খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসেছি। লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে পাঠানো হয়েছে। রিপোর্ট আসার পর নিহতের মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে। এ ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
কালের আলো/টিআরকে/এসআইএল