শীর্ষ সন্ত্রাসী পরিচয়ে ফোন দিয়ে চাঁদাবাজি, ছিনতাই-ডাকাতি করত তারা

প্রকাশিতঃ 3:40 pm | October 24, 2021

নিজস্ব সংবাদদাতা, কালের আলো:

কেউ পিয়ন, কেউ পরিচ্ছন্নতা কর্মী, কেউ আবার অটোরিকশা চালক। এ পরিচয়ের আড়ালে তারা রাজধানীর মোহাম্মদপুর, শ্যামলী ও আদাবর এলাকার ভয়ঙ্কর চাঁদাবাজি, ছিনতাই, ডাকাতির ঘটনার সঙ্গে জড়িত। বিদেশি নম্বর থেকে প্রথমে তারা শীর্ষ সন্ত্রাসী আর্মি আলমগীর, জিসান ও শাহাদাত হোসেনের পরিচয়ে চাঁদা দাবি করে। কেউ চাঁদা না দিলে সেখানে হামলা, ভাঙচুরের মাধ্যমে আতঙ্ক ছড়িয়ে ডাকাতি করে।

রোববার (২৪ অক্টোবর) দুপুরের দিকে রাজধানীর কারওয়ান বাজারের র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গত ১২ অক্টোবর সন্ধ্যায় মিরপুরের শ্যামলীবাগ এলাকায় অবস্থিত উত্তরা মটরসের ডিলার ইভেন আটোস নামের শো-রুমে একটি ডাকাত দল প্রবেশ করে ম্যানেজার ওয়াদুদ সঞ্জীব এবং মটর টেকনিশিয়ান নুরনবী হাসানকে ধারালো চাপাতি দিয়ে আঘাত করে। এ সময় ডাকাত দলের কিছু সদস্য শোরুমের দোতলায় উঠে গ্লাস, কম্পিউটার, ল্যাপটপ, ক্যাশ ড্রয়ার ইত্যাদি ভাঙচুর করে এবং সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা ডাকাতি করে নিয়ে চলে যায়।

এ ঘটনায় শো-রুমের মালিক পক্ষ থেকে কে এম আবদুল খালেক শেরেবাংলা নগর থানায় ঘটনার পরদিন একটি মামলা করেন। এ ঘটনার পর র‍্যাব গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে। সর্বশেষ গতকাল রাতে ডাকাত চক্রের মূলহোতা জহিরুল ইসলাম, জসিম উদ্দিন (৩৪), জাহিদুল ইসলাম শিকদার (২৬), খায়রুল ভূঁইয়া (২০), রাকিব হাসান (২০), মো. নয়নকে (২৮) গ্রেপ্তার করে র‍্যাব। গ্রেপ্তারের সময় চারটি চাপাতি, শো-রুম থেকে লুষ্ঠিত প্রায় এ লাখ ৯৩ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বরাত দিয়ে খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘গ্রেপ্তার করা ব্যক্তিরা মোহাম্মদপুরকেন্দ্রিক একটি সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্রের সদস্য। এ চক্রের সদস্য সংখ্যা আট থেকে ১০ জন। তারা সবাই এ এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে অস্থায়ীভাবে বসবাস করে আসছে এবং এই সূত্রে পরস্পরের পরিচিত। চক্রটি ঢাকার মোহাম্মদপুর, বসিলা ও শ্যামলী এলাকায় বিভিন্ন পলাতক শীর্ষ সন্ত্রাসীদের নাম ভাঙিয়ে কয়েক বছর ধরে ব্যবসায়ী, নির্মাণাধীন ভবন মালিকদের নিকট চাঁদাবাজি করে আসছে। দাবি করা চাঁদা না দিলে তারা ভুক্তভোগীদের বিভিন্নভাবে হুমকি দিয়ে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে থাকে।’

‘তারপরেও কেউ চাঁদা দিতে না চাইলে ডাকাতেরা ভুক্তভোগীদের বাসাবাড়ি অথবা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা ও ডাকাতি করে থাকে। গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের নামে একাধিক চুরি, ডাকাতি ও চাঁদাবাজির মামলা রয়েছে। এ ছাড়া তারা এলাকায় মাদক ও চোরাই অটোরিকশার ব্যাবসা, চুরি ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িত। তাদের বিরুদ্ধে থাকা অভিযোগ তারা স্বীকার করেছে।’

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বেশ কয়েক মাস ধরে একজন পলাতক তথাকথিত সন্ত্রাসীর নামে ইডেন অটোস নামের প্রতিষ্ঠানে চাঁদা দাবি করে আসছে গ্রেপ্তার করা ব্যক্তিরা। চাঁদা না পেয়ে বিভিন্ন হুমকি প্রদান করে। এই চক্রের সদস্যেরা হুমকি এবং ভয়-ভীতি প্রদর্শন করে চাঁদা আদায় করতে ব্যর্থ হয়। এর পরে তারা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানটিতে ডাকাতি করার পরিকল্পনা করে। গত ১১ অক্টোবর তারা ঢাকা উদ্যান এলাকায় গ্রেপ্তার করা জসিমের আবাসস্থলে জহির, জাহিদ, নয়ন, খায়রুল ও রাকিব একত্রিত হয়ে শ্যামলী ইডেন অটো শো-রুম ডাকাতি করার বিস্তারিত পরিকল্পনা করে। ওই দিন সন্ধ্যায় শো-রুম রেকি করে পরের দিন ডাকাতি করে। তারা পাঁচ থেকে ছয় মিনিটের ডাকাতি সম্পন্ন করে বের হয়ে যায়। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কালের আলো/ডিএসবি/এমএম