তৈরি হচ্ছে ৪২ টি বাইপাস সড়ক, দুঃখ ঘুচছে গাজীপুরবাসীর!

প্রকাশিতঃ 9:59 am | August 07, 2021

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো:

ক’দিন আগেও ছিল ১৫- ২০ ফুট গভীর ডোবা। এখন সেখানে মাটি ও বালু ফেলে নির্মাণ করা হয়েছে সড়ক। প্রায় ১৫ কিলোমিটার ৬০ ফুট প্রশস্ত সড়কে গাজীপুরবাসীর দুঃখ ঘুচতে চলেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই রাস্তা নির্মাণের ফলে ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কে চলাচল করা পথিক ও যানবাহন যানজটের ভোগান্তি থেকে মুক্তি পাবে৷ এতে মানুষের কর্মঘণ্টাও বেঁচে যাবে, কমে যাবে ভোগান্তি।

জানা যায়, টঙ্গী-কাপাসিয়া সড়কটি এখন রোলার দিয়ে সমান করা হচ্ছে। চলছে শেষ মুহূর্তের গাঁথুনি আর সড়কে পাশেই বসানো হচ্ছে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন এলইডি লাইট।

কর্মকর্তারা বলছেন, মূলত ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের গাজীপুর অংশের উপর চাপ কমাতে টঙ্গী-কাপাসিয়া নতুন এই বাইপাস সড়কটি নির্মাণ করা হচ্ছে। যা ঢাকা-ময়মনসিংহ যাতায়াতের সময় নামিয়ে আনবে সাড়ে ৩ ঘণ্টায়।

শুধু এই সড়কই নয়, ৩২৯ বর্গকিলোমিটার আয়তনের গাজীপুর সিটিতে করা হচ্ছে এমন ছোট বড় ৪২টি বাইপাস সড়ক। পুরো সিটিকে ৮টি জোনে ভাগ করে নির্মিত হচ্ছে প্রায় সাড়ে ৭০০ কিলোমিটার সড়ক, যা আশপাশের সব জেলার সাথে গাজীপুরের দূরত্ব অনেকাংশে কমিয়ে আনবে।

এসব করতে গিয়ে এরই মধ্যে প্রায় ৩১ হাজার ঘরবাড়ি ভেঙে ৮ হাজার বিঘা জমি রাস্তার জন্য ছেড়ে দিয়েছে গাজীপুরবাসী। স্থানীয়দের মতামত নিয়ে স্থানান্তর করা হয়েছে প্রায় ১৮৫টি মসজিদ, মন্দির ও শ’খানেক কবরস্থান।

গাজীপুরের সিলমুইন এলাকার বাসিন্দা মাজহারুল ইসলাম হৃদয় কালের আলোকে বলেন, ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ছাড়া ভেতরে যাওয়ার জন্য আমদের এলাকায় কোনো রাস্তা নেই। আমরা এই রাস্তার জন্য অনেক কষ্ট করছি। মসজিদ-মাদ্রাসাও ভাঙা পড়েছে। তবে মেয়র মহোদয় বলেছেন তা তৈরি করে দেবেন।

‘আর আমাদের যে জায়গা জমি গেছে সড়কে তা সবাই নিজ ইচ্ছায় দোকান-পাট ঘর-বাড়ি ভেঙে দিয়েছেন।’

একই এলাকার বাসিন্দা আবদুর রহিম বলেন, আগে এখানে খালের মতো ছিল, ডোবা ছিল। ছিল বসত বাড়িসহ বিভিন্ন স্থাপনা। কিন্তু আমরা এলাকাবাসী স্ব ইচ্ছায় সেগুলো সরিয়ে কিংবা ভেঙে রাস্তা দিয়েছি।

‘এখন টঙ্গী স্টেশন রোড থেকে জয়দেবপুর পৌঁছাতে আমাদের ২ থেকে ৩ ঘণ্টা সময় লাগে। কিন্তু এই রোডে গেলে ২০ মিনিটে চলে যাওয়া সম্ভব,’ যোগ করেন তিনি।

স্থানীয় লোকজন জানান, এখন টঙ্গী থেকে যানবাহনগুলো ময়মনসিংহ রোড দিয়ে ময়মনসিংহ, জয়দেবপুর, চন্দ্রা, সিলেট কিংবা নরসিংদীর দিকে যেতে চাইলে যানজটে পড়ে। কিন্তু টঙ্গী-জয়দেবপুর সড়ক হওয়ায় দ্রত ও সহজে ঢাকা কিংবা জয়দেবপুরে আসা যাওয়া করতে পারবে মানুষ।

এদিকে রাস্তার জন্য বিভিন্ন ভবন ভাঙা হয়েছে। এতে কারো কারো ক্ষতি হলেও বৃহত্তর স্বার্থে তা করেছেন এলাকাবাসী।

আবদুল আলী নামে এক ব্যক্তি বলেন, ওইপাশ থেকে আগে ফসল নিয়ে আসার জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা ছিল না। মাটির রাস্তা থাকার কারণে ঠিকমত কোনো যানবাহনও নেওয়া যেতো না ওইপাশে।

‘রাস্তাগুলো হওয়ার কারণে এদিক দিয়ে অনায়াসে ওইদিকের কৃষি ফসল খুব সুন্দরভাবে নিয়ে যাওয়া যাচ্ছে। বড় তিনটি ব্রিজ হয়েছে সেই ব্রিজগুলো হওয়ার কারণে আমাদের যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও ভালো হয়ে গেছে,’ বলেন তিনি।

গাজীপুরে অবস্থিত ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা সামসুল আমিন কালের আলোকে বলেন, আগে গাজীপুর, বোর্ডবাজার, বড়ুয়াবাড়ি হয়ে টঙ্গীতে ঢুকতাম। এখন আমরা গাজীপুর থেকে সরাসরি কলেজগেট পার হয়ে সহজে আব্দুল্লাহপুর পাড় হয়ে ঢাকায় চলে যেতে পারি। আমাদের এক ঘণ্টা সময় বেঁচে যাচ্ছে।

গ্রামের মধ্য দিয়ে নতুন নতুন সড়ক নগরবাসীর কয়েক দশকের দুঃখ দুর্দশা গুছাবে বলে মনে করেন তিনি।

এদিকে, জনকল্যাণে সড়কটি নির্মাণ করতে পেরে আনন্দিত গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলমও।

কালের আলোকে তিনি বলেন, গ্রামকে শহর করতে হবে, সেই শহরটি আমি মনে করি গাজীপুরের মধ্যে। যা বাংলাদেশে উদাহারণ হিসেবে থাকবে।

‘সেটি আমরা বক্তৃতা নয়, বাস্তবে, মাঠ পর্যায়ে এর প্রতিফলন করার চেষ্টা করেছি। এই কঠিন পরিস্থিতিতে আমরা সকল উন্নয়নমূলক কাজ চলমান রেখেছি, কোনো কাজ আমরা বন্ধ করি নাই। তবে এখানে কোনো রিপারিং কাজ করছি না। সম্পূর্ণ নতুন রাস্তা।’

এক প্রশ্নের উত্তরে সিটি মেয়র জাহাঙ্গীর আলম বলেন, প্রায় সাড়ে ৭০০ মিটারের কাজ প্রথম পর্যায়ে শুরু করেছি। আমাদের অনেকগুলো রাস্তা আছে, যেগুলো আস্তে আস্তে শুরু করছি। যেখানে সিক্স লাইন রাস্তা আছে, ফোর লাইন রাস্তা আছে এবং টু লাইন রাস্তা আছে— ধাপে ধাপে সেগুলা করা হচ্ছে।’

‘ময়মনসিংহ রোড থেকে সিলেট যাওয়া যায় এবং ময়মনসিংহ রোডে টাঙ্গাইল হয়ে রংপুর এবং রাজশাহী বিভাগে যাওয়া যায়। টঙ্গী থেকে ঢাকা এই চারপাশে যে আমাদের চারটা বিভাগ আছে—সেগুলোতে কিভাবে দ্রুত যাওয়া যায় আমরা সেভাবে পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছি।’

নতুন সড়ক নির্মাণের বিষয়ে তিনি বলেন, নতুন সড়ক নির্মাণ কাজের প্রায় ৮০ শতাংশ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। টঙ্গী স্টেশন রোড থেকে এসে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের এই নিমতলী ব্রিজ থেকে শুরু হয়ে নতুন বাইপাস মহাসড়কটি গাজীপুরের মধ্য দিয়ে যুক্ত হয়েছে জয়দেবপুর সালনা মোড়ে গিয়ে।

এতে এই এলাকা দিলে চলাচলকারী সবার কষ্ট লাঘব হবে বলে মনে করেন সিটি মেয়র।

কালের আলো/জিকেএম/এমকে

Print Friendly, PDF & Email