জুলাই বিপ্লবের অংশীদাররা একে অপরকে হেয় করা বন্ধ করুন: এবি পার্টি
প্রকাশিতঃ 8:21 pm | July 18, 2025

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:
বিএনপি, জামায়াত, এনসিপি ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ জুলাই বিপ্লবের সব অংশীদারদের একে অপরকে হেয় করে উস্কানিমূলক কথা বলা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছে আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টি।
শুক্রবার (১৮ জুলাই) জুলাই অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ৩৬ দিনব্যাপী কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসাবে শহীদদের স্মরণে প্রতীকী কফিন রোড মার্চে এ আহ্বান জানান দলের চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু ও সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ।
এবি পার্টির নেতারা বলেন, ‘দেশ ও গণতন্ত্রের স্বার্থে জাতীয় ঐক্যর ভিত্তিতে যারা রাজপথে অকাতরে রক্ত ও জীবন বিলিয়ে দিয়েছেন, এক বছর যেতে না যেতেই তাদের একে অপরের প্রতি হিংসাত্মক আচরণ শহীদের রক্ত ও আত্মদানের প্রতি অসম্মান।’
এসময় গোপালগঞ্জে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী-ছাত্রলীগের গণতন্ত্রবিরোধী কর্মকাণ্ড, সরকারের ব্যর্থতা ও নানা অবয়বে আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন প্রচেষ্টার তীব্র সমলোচনা করেন মঞ্জু ও ফুয়াদ।
এদিন এবি যুব পার্টির সদস্যসচিব হাদিউজ্জামান খোকনের সঞ্চালনায় রাজধানীর বিজয় নগর, যাত্রাবাড়ী, বাড্ডা, উত্তরা, মিরপুরসহ বিভিন্ন স্থানে পথসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেসব কর্মসূচিতে বক্তব্য দেন দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার সাদাত টুটুল, ব্যারিস্টার নাসরীন সুলতানা মিলি, আলতাফ হোসাইনসহ কেন্দ্রীয় নেতারা।
জুলাই অভ্যুত্থানে ঢাকার যেসকল গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে ছাত্র-জনতা স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল এবং নির্মম নির্যাতন ও নির্বিচার হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েও দমে যায়নি, যাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে সারাদেশে প্রতিবাদ-প্রতিরোধ ছড়িয়ে পড়েছিল, সে সকল শহীদ ও অদম্য সংগ্রামীদের স্মরণে এবি পার্টি এই প্রতীকী কফিন মার্চের আয়োজন করে।
এই কর্মসূচি বিজয় নগরস্থ বিজয়-৭১ চত্বর থেকে শুরু হয়ে প্রথমে যাত্রাবাড়ী মোড়ে শহীদ চত্বরে যায়। সেখানকার পথসভা শেষ করে ক্রমান্বয়ে বাড্ডা, উত্তরা হয়ে মিরপুর-১০ নম্বর চত্বরে এসে পথসভা সমাপ্ত হয়।
পথসভাগুলোতে এবি পার্টির চেয়ারম্যান মঞ্জু বলেন, ‘গণঅভ্যুত্থান ও অপরিসীম রক্তদানের লক্ষ্য ছিল দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা। হাসিনার দুঃশাসনের অবসান বা তার পতনের মধ্যে আমাদের প্রত্যাশাকে সীমাবদ্ধ করলে হবে না। জুলাইয়ের অঙ্গীকার হতে হবে নিজেদের ভেতরকার স্বৈরতান্ত্রিক মনোভাবের বিরুদ্ধেও।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের নিজেদের মধ্য থেকে কেউ যেন ফ্যাসিবাদী আচরণে অভ্যস্ত না হয়, সে প্রতিজ্ঞা করতে হবে। জানুয়ারিতে বিএনপি ও ইসলামী আন্দোলন অঙ্গীকার করেছিল, কেউ কাউকে হেয় করে কথা বলবে না। কিন্তু ইদানিং একে অপরকে ‘চোরের দল’ এবং ‘চাঁদা তোলে পল্টনে, ভাগ যায় লন্ডনে’ বলে হেয় করে কথা বলছেন। বিএনপি জামায়াতকে ‘রাজাকার’ জামায়াত বিএনপিকে ‘চাঁদাবাজ-দখলদার’ বলে উস্কানিমূলক মন্তব্য করছেন।’
এসব বক্তব্যের ফলে বিভেদ বাড়ছে এবং তা ছড়িয়ে পড়ছে বলে মনে করেন মঞ্জু। তিনি বলেন, ‘জুলাই অভ্যুত্থানের অংশীদার রাজনৈতিক দল, সংগঠক ও এক্টিভিস্টদের পরস্পরের প্রতি হেয় করে উস্কানিমূলক কথা বলা বন্ধ করতে হবে।’
পাশাপাশি গোপালগঞ্জে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী-ছাত্রলীগের গণতন্ত্রবিরোধী কর্মকাণ্ডকে কেন্দ্র করে গুলি ও চারজন নিরীহ নাগরিক হত্যাকে সরকারের ব্যর্থতা হিসেবে উল্লেখ করে তিনি এর তীব্র সমালোচনা করেন।
পথসভায় ব্যারিস্টার ফুয়াদ বলেন, ‘গণঅভ্যুত্থানের সময় যাত্রাবাড়ী, বাড্ডা, উত্তরাসহ দেশের প্রায় সকল গুরুত্বপূর্ণ সড়ক মোড়ে লাখ লাখ ছাত্র-জনতা জড়ো হয়ে শ্লোগান তুলেছিল- ‘লাখো শহীদের রক্তে কেনা দেশটা কারও বাপের না’।’
তিনি বলেন, ‘এ শ্লোগানের মর্ম আমরা যেন কেউ ভুলে না যাই। লাল সবুজের পতাকাকে বাঁচিয়ে রাখবার জন্য দিল্লীর আধিপত্যের বিরুদ্ধে শহীদেরা জীবন দিয়েছেন, এটা সবসময় আমাদের স্মরণ রাখতে হবে।’ নানা অবয়বে আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন প্রচেষ্টার তীব্র সমলোচনা করে ফুয়াদ বলেন, ‘শহীদের রক্ত ও প্রত্যাশার সঙ্গে বেঈমানির কোনো পদক্ষেপ জনগণ মেনে নেবে না।’
অতীতের মতো এখনো মাদরাসা শিক্ষার্থী ও আলেম ওলামাদের সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন রাখার যে প্রচেষ্টা, সেটারও তীব্র প্রতিবাদ জানান এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক। তিনি মনে করিয়ে দেন, ‘যাত্রাবাড়ীর প্রতিরোধ সংগ্রামে মাদরাসা শিক্ষার্থী ও বাড্ডা-উত্তরায় প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের অবদান সারাদেশে জাগরণ সৃষ্টি করেছিল।
গোপালগঞ্জে আওয়ামী লীগের ধৃষ্টতাপূর্ণ আচরণকে আগের মতো ফ্যাসিবাদী আস্ফালন উল্লেখ করে ফুয়াদ আরও বলেন, ‘এর বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন অব্যাহত রাখতে হবে।’
প্রতীকী কফিনবাহী রোড মার্চে আরও অংশগ্রহণ করেন- এবি পার্টির শ্রম বিষয়ক সম্পাদক শাহ আব্দুর রহমান, মহানগর দক্ষিণের যুগ্ম আহবায়ক আনোয়ার ফারুক, আব্দুল হালিম খোকন, উত্তরের সদস্যসচিব সেলিম খান, যুবপার্টির দফতর সম্পাদক আমানুল্লাহ সরকার রাসেল, ছাত্রপক্ষের সাধারণ সম্পাদক রাফিউর রহমান ফাত্তাহ, গণপরিহন সম্পাদক অ্যাডভোকেট মতিয়ার রহমান, সহকারী নারী বিষয়ক সম্পাদক শাহীনুর আক্তার শীলা, আমেনা বেগম, সহকারী প্রচার সম্পাদক আাজাদুল ইসলাম, সহকারী স্বেচ্ছাসেবা সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেন রমিজ, কেফায়েত হোসেন তানভীর, সহকারী অর্থ সম্পাদক আবু বকর সিদ্দিক, পল্টন থানা আহ্বায়ক মুন্সি আব্দুল কাদের, যাত্রাবাড়ী থানা আহ্বায়ক আরিফ সুলতান, সদস্যসচিব নাসিমুল ইসলাম অন্তর, মহানগর উত্তরের যুগ্ম আহ্বায়ক ফিরোজ কবির, যুগ্ম সদস্যসচিব আব্দুর রব জামিলসহ কেন্দ্রীয়, মহানগর উত্তর, দক্ষিণ, যুবপার্টি ও ছাত্রপক্ষের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।
কালের আলো/এএএন