চানখারপুলে ৬ হত্যা : ৮ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন, বিচার শুরু

প্রকাশিতঃ 1:32 pm | July 14, 2025

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান চলাকালে গত বছরের ৫ আগস্ট রাজধানীর চানখারপুলে গুলি করে ছয়জনকে হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান হাবিবসহ আট আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর নির্দেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।

সোমবার (১৪ জুলাই) দুপুরে বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ আদেশ দেন। অপর দুই সদস্য হলেন, বিচারপতি শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারপতি মহিতুল হক এনাম চৌধুরী।

ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশনের পক্ষে ছিলেন- চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামিম। আসামি পক্ষে ছিলেন- আইনজীবী সিফাত মাহমুদ শুভ।

অভিযোগ গঠনকালে গ্রেপ্তার চার আসামি ইন্সপেক্টর আরশাদ, কনস্টেবল মো. সুজন, কনস্টেবল ইমাজ হোসেন ইমন ও কনস্টেবল নাসিরুল ইসলাম ট্রাইব্যুনালে হাজির ছিলেন। এই মামলায় মোট আট আসামির মধ্যে সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান হাবিবসহ চার আসামি পলাতক রয়েছেন।

জানা গেছে, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান চলাকালে গত বছরের ৫ আগস্ট রাজধানীর চানখারপুলে গুলি করে ছয়জনকে হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেপ্তার চার আসামিকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়েছে। তারা হলেন- ইন্সপেক্টর আরশাদ, কনস্টেবল মো সুজন, কনস্টেবল ইমাজ হোসেন ইমন ও কনস্টেবল নাসিরুল ইসলাম।

এই মামলার পলাতক চার আসামিকে ট্রাইব্যুনালে হাজির হতে গত ৩ জুন পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দেওয়া হয়। তবে তারা হাজির না হওয়া ট্রাইব্যুনাল আজ এই আদেশ দেন। গত ৩ জুন ট্রাইব্যুনাল যাদের বিরুদ্ধে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিতে নির্দেশ দেন তারা হলেন- ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান, সাবেক যুগ্ম কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী, রমনা অঞ্চলের সাবেক অতিরিক্ত উপকমিশনার শাহ্ আলম মো. আখতারুল ইসলাম, রমনা অঞ্চলের সাবেক সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ ইমরুল।

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান চলাকালে গত ৫ আগস্ট রাজধানীর চানখারপুলে গুলি করে ছয়জনকে হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় প্রথম (ফরমাল চার্জ) আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গত ২৫ মে আমলে নেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। ওইদিন আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিলের পর তা ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করে অভিযোগটি আমলে নেওয়ার আবেদন করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। এরপর ট্রাইব্যুনালের অভিযোগটি (কগনিজেন্সে নেওয়ার) আমলে নেওয়ার আদেশ দেন।

এর আগে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা চিফ প্রসিকিউটর বরাবর এই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। তদন্ত প্রতিবেদনের অভিযোগে বলা হয়, রাজধানীর চানখারপুল এলাকায় আসামি কর্তৃক নিরস্ত্র ও শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকারীদের ওপর প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করে শহীদ শাহরিয়ার খান আনাস, শেখ মাহদি হাসান জুনায়েদ, শহীদ মো ইয়াকুব, শহীদ মো. রাকিব হাওলাদার, শহীদ মো. ইসমামুল হক এবং শহীদ মানিক মিয়াকে গুলি করে হত্যা করা হয়।

তদন্ত সংস্থা এই মামলায় তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের পর চিফ প্রসিকিউটর সাংবাদিকদের জানান, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে তদন্ত সংস্থার দেওয়া এই মামলার তদন্ত প্রতিবেদনটি ৯০ পৃষ্ঠার। তদন্ত করতে তদন্ত সংস্থার সময় লেগেছে ৬ মাস ১৩ দিন। তদন্ত প্রতিবেদনে ৭৯ সাক্ষীর জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়। এছাড়া ১৯টি ভিডিও, পত্রিকার ১১টি রিপোর্ট, ২টি অডিও, বই ও রিপোর্ট ১১টি এবং ৬টি ডেথ সার্টিফিকেট সংযুক্ত করা হয়। তদন্ত প্রতিবেদনে আসামি করা হয় সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ ৮ জনকে। তাদের মধ্যে গ্রেপ্তার আছেন ইন্সপেক্টর আরশাদ, কনস্টেবল মো. সুজন, কনস্টেবল ইমাজ হোসেন ইমন ও কনস্টেবল নাসিরুল ইসলাম।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন নির্মূলে আওয়ামী লীগ সরকার, তার দলীয় ক্যাডার ও সরকারের অনুগত প্রশাসনসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংগঠিত করে বলে একের পর এক অভিযোগ জমা পড়ে। জাজ্বল্যমান এসব অপরাধের বিচার এখন অনুষ্ঠিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে।

কালের আলো/এমডিএইচ