সীমান্ত হত্যার শেষ কোথায়
প্রকাশিতঃ 8:08 am | September 10, 2024

কালের আলো রিপোর্ট:
ফেলানী হত্যাকাণ্ডের কথা মনে আছে? ২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি ভোরে হত্যা করা হয়েছিল তাকে। তার লাশ দীর্ঘ সময় ঝুলে ছিল কাঁটাতারের বেড়ায়। কাঁটাতারে ঝুলে থাকা কিশোরী ফেলানীর লাশ প্রবল আলোড়ন তুলেছিল দেশ-বিদেশের গণমাধ্যমে। ফেলানীর মতোই বাংলাদেশের আরেক কিশোরীকে গুলি করে মেরেছে ভারতীয় বিএসএফ। ১৪ বছর বয়সী স্বর্ণা দাসকে হত্যা করা হয় সেই ঘটনার ১৩ বছরের বেশি সময় পর ২০২৪ সালের ১ সেপ্টেম্বর রাতে। এ হত্যার পর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ভারত সরকারের কাছে আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ জানায়।
ফেলানীর মা জাহানারা বেগম নিজের সন্তানের হত্যার বিচার পাননি। বিএসএফের পাখির মতো গুলি করে মানুষ হত্যাও বন্ধ হয়নি। সীমান্তে পিঠ না দেখাতে ইতোমধ্যেই বর্ডার গার্ড বাংলাদেশকে (বিজিবি) কঠোর নির্দেশ দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মোঃ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। বিজিবিকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেছেন, ফেলানীর মতো হত্যাকাণ্ড আর দেখতে চাই না। সীমান্তে পিঠ প্রদর্শন করবেন না। নিজেদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করুন।
সীমান্ত হত্যা ঢাকা-দিল্লি সম্পর্কে বড় বাধা বলে মনে করেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনও। সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সীমান্ত হত্যার ঘটনা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক জন-মানুষের পর্যায়ে জোরদার করা দরকার। সীমান্তে হত্যাকাণ্ড ঘটলে তা জনগণের মধ্যে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। আমরা এটা চাই না।
সীমান্তে স্বর্ণা দাস নামে এক কিশোরীকে হত্যার বিষয়েো প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন তিনি। বলেছেন, ‘আমরা বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) নিশ্চয়তার অপেক্ষায় আছি। এটা পেলেই আমরা নয়াদিল্লির কাছে কড়া প্রতিবাদ জানাবো। এই হত্যাকাণ্ডকে ‘অগ্রহণযোগ্য’ বলে অভিহিত করেন তিনি। তৌহিদ হোসেন উল্লেখ করেন, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের তথাকথিত ‘সোনালী অধ্যায়’ চলাকালীনও সীমান্ত হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে এবং এ ধারা এখনও অব্যাহত রয়েছে। উপদেষ্টা জোর দিয়ে বলেন, ‘ভারত ঢাকার সঙ্গে সুসম্পর্ক চাইলে এ সম্পর্ক অবশ্যই ন্যায্যতার ভিত্তিতে গড়ে তুলতে হবে। আমরা একতরফা সম্পর্ক চাই না।’
জানা যায়, স্বর্ণা দাসকে হত্যার এক সপ্তাহ’র ব্যবধানে ঠাকুরগাঁও সীমান্তে আরও কিশোরকে হত্যা করেছে বিএসএফ। রবিবার (৮ সেপ্টেম্বর) গভীর রাতে ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার ধনতলা ইউনিয়নের কান্তিভিটা সীমান্ত এলাকায় বিএসএফের গুলিতে নিহত হয় জয়ন্ত কুমার সিংহ (১৫) নামে এক কিশোর। এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হন অন্য দুজন। এমন তথ্য নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস)।
মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) হিসাব অনুয়ায়ী, ২০২৩ সালে ৩১ জন বাংলাদেশি সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বা নির্যাতনে নিহত হয়েছেন। ২০২১ ও ২০২২ সালে এই সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ১৮ ও ২৩। আসকের হিসাবে এর আগে ২০০৯ থেকে ২০২০ সাল—এই ১১ বছরে ৫২২ বাংলাদেশি বিএসএফের গুলিতে বা নির্যাতনে মারা গেছেন।
এদিকে, অবিলম্বে সীমান্ত হত্যা বন্ধে প্রয়োজনীয় আন্তঃরাষ্ট্রীয় এবং বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে ভূমিকা নেওয়ার ব্যবস্থা করার আহ্বান জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। তারা বলেছেন, স্বর্ণা দাশের হত্যাকারী বিএসএফ সদস্যদের বিচারের আওতায় আনার জন্য পদক্ষেপ নিতে হবে। শনিবার মৌলভীবাজারের জুড়ীতে বিএসএফের গুলিতে নির্মম হত্যার শিকার কিশোরী স্বর্ণা দাশের পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা এক ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন। সংগঠনের রাজনৈতিক সমন্বয়ক ফরিদুল হক এবং নির্বাহী কমিটির সদস্য প্রীতম দাশের নেতৃত্বে স্থানীয় নেতাকর্মীরা স্বর্ণার পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন।
এ সময় নেতারা আরও বলেন, ‘নেপালের সীমান্তে বিএসএফের নেপালী নাগরিক হত্যার জেরে সে দেশের জনগণ যেভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিবাদ জানিয়ে ইন্ডিয়াকে ক্ষমা চাইতে এবং সীমান্ত হত্যা বন্ধ করতে বাধ্য করেছিল, একইভাবে বাংলাদেশের জনগণকেও সেভাবে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।’ তারা বলেন, ‘আসুন পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রের এরকম আগ্রাসনের বিরুদ্ধে দল-মত নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এদের আগ্রাসন রুখে দেই।’
কালের আলো/এমএএইচ/ইউএইচ