ফখরুলের গাড়িতে হামলা
প্রকাশিতঃ 10:29 am | December 09, 2018

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের গাড়িতে হামলা করেছে মনোনয়ন বঞ্চিত প্রার্থীদের সমর্থকরা। এসময় তার চালক হেলাল রক্তাক্ত হন।
শনিবার রাতে রাজধানীর গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এই ঘটনা ঘটে। তবে এতে ফখরুলের গাড়ি চালক হেলাল ছাড়া আর কেউ আহত হয়েছে কিনা জানা যায়নি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, নারায়ণগঞ্জ-১ আসনে তৈমুর আলম খন্দকার মনোনয়ন না পাওয়ায় তার সমর্থকরা চেয়ারপারসন কার্যালয় লক্ষ্য করে ইট ছোঁড়ে। এ সময় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের গাড়িতেও তারা হামলা করে। এতে গাড়ির গ্লাস ভেঙে যায় এবং চালক হেলাল রক্তাক্ত হন।
তাদের সঙ্গে যোগ দেন গোপালগঞ্জ-১ আসনের সেলিমুজ্জামান সেলিম ও চাঁদপুর-১ আসনের এহছানুল হক মিলন ও মানিকগঞ্জে প্রয়াত মহাসচিব খন্দকার দেলোয়ার হোসেনের ছেলে অ্যাডভোকেট খোন্দকার আবদুল হামিদ ডাবলুর কয়েক হাজার নেতাকর্মী গুলশান কার্যালয়ের সামনে জড়ো হন।
এ সময় তারা বিক্ষোভ শুরু করেন। একপর্যায়ে বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা কার্যালয় লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। তাদের ছোড়া ইটের আঘাতে কার্যালয়ের দ্বিতীয় তলার জানালার কাচ ভেঙে যায়।
বাইরে যখন বিক্ষোভ চলছিল, সেসময় ভেতরেই ছিলেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, নজরুল ইসলাম খানসহ সিনিয়র কয়েক নেতা।
পরিস্থিতি শান্ত করতে দেলোয়ারের দুই ছেলে ও মেয়েকে কার্যালয়ের ভেতরে ডেকে নেয়া হয়। এ সময় নজরুল ইসলাম খান তাদের সঙ্গে কথা বলেন। দেলোয়ারের সন্তানরা নজরুল ইসলাম খানের কাছে জানতে চান, এ দলে কি তার বাবার কোনো অবদান নেই। মনোনয়ন তো দূরের কথা, তাদের কেন কার্যালয়ে ঢুকতে দেয়া হল না। এ সময় নজরুল ইসলাম খান তাদের শান্ত হতে বলেন। বাইরে বিক্ষুব্ধ কর্মীদের চলে যেতে বলেন। কার্যালয়ের নিচ তলায় তাদের অপেক্ষা করতে বলেন নজরুল।
এরপর তৈমুর আলম খন্দকারকে ভেতরে ডাকেন নজরুল ইসলাম খান। তার সঙ্গে কথা বলেন তিনি। এ সময় তৈমুর ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলেন, আমি কার্যালয়ের বাইরে আছি। মহাসচিবসহ আপনারা কীভাবে বাইরে বের হন, তা আমি দেখে নেব। এ বলে তিনি নিচে চলে আসেন।
দুপুরে চাঁদপুর-১ আসনের মনোনয়নবঞ্চিত সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী দলের আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক এহছানুল হক মিলনের অনুসারীরা নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করেন।
একপর্যায়ে তারা কার্যালয়ের প্রধান ফটকে তালা লাগিয়ে দেন। মূল গেটে প্রতিবাদ মিছিল লেখা একটি ব্যানার টাঙিয়ে দেয়া হয়। এ সময় মিলনের স্ত্রী নাজমুন নাহার বেবী ছাড়াও বিক্ষোভে অংশ নেন চাঁদপুরের কচুয়া থানা বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা।
বেবী সাংবাদিকদের বলেন, বিগত সময়ে যারা দলের জন্য কাজ করেছেন, তাদের মূল্যায়ন করা হয়নি।
এরপর প্রার্থী পরিবর্তনের জন্য ১২ ঘণ্টার সময় বেঁধে দিয়ে বিএনপির নেতা আ ন ম এহছানুল হক মিলনের অনুসারী নেতাকর্মীরা নয়াপল্টন কার্যালয়ের ফটকের তালা খুলে দেন। এরপর তারা দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর সঙ্গে দেখা করে তারা তাদের ক্ষোভের কথা জানান।
বিক্ষোভরত মিলনের একাধিক সমর্থক অভিযোগ করেন, এহছানুল হক মিলনের জায়গায় চাঁদপুর-১ (কচুয়া) আসনে দলীয় মনোনয়ন দেয়া কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মো. মোশাররফ হোসেনকে এলাকায় কেউ চেনেন না।
সারা জীবন তিনি মালয়েশিয়ায় ছিলেন। এহছানুল হক মিলন পাঁচ বছর দেশের বাইরে থাকলেও তার সঙ্গে এলাকার মানুষের নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। এখনও তিনি জেলে আছেন, তার ত্যাগকে মূল্যায়ন করা হয়নি।
মনোনয়নবঞ্চিতদের বিক্ষোভ প্রসঙ্গে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘ধানের শীষ’ প্রতীকে যারা মনোনয়ন পাচ্ছেন, তাদের পক্ষেই নেতাকর্মীরা ‘একট্টা’। মনোনয়ন নিয়ে ছোটখাটো দুই-একটি প্রতিক্রিয়া- এটা কি নতুন কিছু? এটা নতুন নয়। বরং যাদের দেয়া হয়েছে, তারা অত্যন্ত জনপ্রিয় তাদের এলাকায়। আন্দোলন-সংগ্রাম থেকে শুরু করে এলাকায় তাদের সম্পৃক্ততা অত্যন্ত নিবিড়। যোগ্যদেরই মনোনয়ন দেয়া হয়েছে।
অপরদিকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের মনোনয়ন না পাওয়ায় ফের নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে তালা মেরেছে মনোনয়নবঞ্চিতদের সমর্থকরা।
শনিবার রাত ৮টার দিকে পটুয়াখালী-৩ আসনে মনোনয়নবঞ্চিত হাসান মামুন-এর সমর্থকরা কার্যালয়ে তালা মারেন। এই আসন থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন সদ্য বিএনপিতে যোগ দেয়া আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মাওলা রনি।
কালের আলো/এএ/এমএইচএ