হবিগঞ্জ-নেত্রকোনা-কিশোরগঞ্জের ত্রাস আক্কাস, আত্মগোপনে কাজ করতেন ইটভাটায়
প্রকাশিতঃ 10:47 pm | September 01, 2022

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:
কিশোরগঞ্জ-হবিগঞ্জ-নেত্রকোণার ত্রাস ও ডাকাতি মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি আক্কাস বাহিনীর প্রধান আক্কাসকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। আক্কাস প্রায় ৬ বছর ধরে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে ফেরারি জীবন যাপন করছিলেন। বুধবার (৩১ আগস্ট) রাতে দক্ষিণ কেরানিগঞ্জ থানা এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে র্যাব-৩।
র্যাব বলছে, হবিগঞ্জ, নেত্রকোনা এবং কিশোরগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলায় ডাকাতি, মারামারি ও হত্যা মামলার দন্ডপ্রাপ্ত আসামি আক্কাস মিয়া পেশাদার খুনি ছিলেন। সবশেষ ছয় বছর ধরে সে আত্মগোপনে ছিল।
বৃহস্পতিবার (১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-৩ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, খুন ও ডাকাতি তার পেশা। ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে নেত্রকোনার খালীয়াজুড়িঁর আদমপুরে মনোরঞ্জন সরকারের বাড়ির দেয়াল ভেঙ্গে প্রবেশ করে। এসময় পরিবারের পুরুষ সদস্যদের হাত-পা বেঁধে স্বর্ণা অলংকার, নগদ টাকা ডাকাতি করে আক্কাস চক্র। এতে মনোরঞ্জন সরকারের ছেলে বাঁধা দিলে তাকে রামদা দিয়ে কুপিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। এই ঘটনার মামলা হলে ১৯ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। এতে প্রধান অভিযুক্ত করা হয় আক্কাসকে।
আক্কাসের বাহিনী হবিগঞ্জ, নেত্রকোনা এবং কিশোরগঞ্জ এলাকায় অর্ধ-শতাধিক বাড়িতে ডাকাতি করেছে বলে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর কাছে তথ্য ছিল। এরমধ্যে অনেক ডাকাতির ঘটনায় কেউ চিহ্নিত হয়নি। আবার অনেক ভুক্তভোগী থানায় অভিযোগ দেয়নি। গ্রেপ্তার আক্কাসের বিরুদ্ধে ডাকাতি, চুরিসহ বিভিন্ন অপরাধে সাতটি মামলা আছে।
এছাড়া ২০১৬ সালে আক্কাস নিজের বাহিনী নিয়ে শাল্লায় ভাড়ায় মারামারি করতে যায়। মারামারিতে দুই গ্রুপের তিনজন মারা যান। আক্কাস নিহতদের মরদেহ ধান খেতে মাটি চাপা দিয়ে রাখে। ২০১৪ সালেও সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলায়ও মারামারি করতে যায়। সেখানেও ১০জন আহত হন।
ভাড়াকে খুনি আক্কাসের বিষয়ে আরিফ মহিউদ্দিন আরও জানান, খুন ও ডাকাতি ছাড়াও এলাকায় ভূমিদখল, জলমহল দখল, ভাড়ায় মারামারি ও লুটপাট করত। তার একটি ডাকাত দল রয়েছে যা ‘আক্কাস বাহিনী’ হিসেবে পরিচিত। এই দলের সদস্যর সংখ্যা ১৫ থেকে ২০ জন। ডাকাত দলের সদস্যদের নিয়ে হবিগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ এবং নেত্রকোনা এলাকায় ডাকাতি করত। ডাকাতির কাজে বাঁধা দিলে হত্যা করত।

২০০৬ সাল হতে ২০১৬ সাল পর্যন্ত খুন, ডাকাতি, খুনসহ ডাকাতি, চুরি, মারামারি, লুটপাট, দাঙ্গা-হামলাসহ ১২টি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে। তার বিরুদ্ধে শাল্লা থানায় একটি সাজা ওয়ারেন্টসহ মোট ছয়টি ওয়ারেন্ট রয়েছে। হবিগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ এবং নেত্রকোনা এলাকায় আক্কাস বাহিনী ছিল একটি আতঙ্কের নাম।
২০১৬ সালে সুনামগঞ্জ থেকে পালিয়ে রাজধানীতে এসে ছদ্মনামে বসবাস করতে শুরু করে। রাজধানীতে আসার পর একাধিকবার সে তার বাসস্থান ও পেশা পরিবর্তন করলেও কখনোই তার প্রকৃত পরিচয় প্রকাশ করেনি। প্রথমে রিক্সাচালক, বাসের হেলপার, কিছুদিন সিএনজি চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেছে। পরে রাজধানীতে একটি ডাকাত চক্র গড়ে তুলেছিল।
প্রথমে রাজধানীর পার্শ্ববর্তী এলাকায় যানবাহনে ও বাসা বাড়িতে ডাকাতি শুরু করে। এতে আক্কাস ধরা গ্রেপ্তার না হলেও তার দলের সদস্যরা গ্রেপ্তার হয়। পরে ডাকাতি ছেড়ে মাছের ব্যবসা শুরু করে। ২০১৯ সালে খুনসহ ডাকাতি মামলায় তার যাবজ্জীবন সাজা হয়। এরপরই কেরানীগঞ্জ এলাকায় ইট ভাটায় স্ত্রীসহ শ্রমিক হিসেবে কাজ শুরু করে। প্রয়োজন ছাড়া আক্কাস ঘর থেকে বের হত না।
সংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে র্যাব-৩ অধিনায়ক আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আক্কাস মিয়া তার ডাকাতি জীবনে কতগুলো হত্যা ও লুটপাট করেছে তার সঠিক তথ্য কেউ জানে না। তবে এখন পর্যন্ত ১২টি মামলা ও ছয়টি ওয়ারেন্টের তথ্য পাওয়া গেছে। আরও মামলার তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা চলছে।
কালের আলো/ডিএস/এমএম