রাঙামাটিতে গুলিতে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৭

প্রকাশিতঃ 11:58 pm | March 18, 2019

কালের আলো প্রতিবেদক, রাঙামাটি :

দ্বিতীয় ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শেষে কেন্দ্র থেকে ফেরার পথে রাঙামাটির বাঘাইছড়িতে সন্ত্রাসীদের গুলিতে সাতজন নিহত হয়েছেন। আহত ১৩ জনকে হেলিকপ্টারযোগে চট্টগ্রাম সামরিক হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। মৃতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সোমবার সাড়ে ৬টার দিকে বাঘাইছড়ি উপজেলার নয় মাইল এলাকায় দীঘিনালা-বাঘাইছড়ি সড়কে এই ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলেন- সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার শিক্ষক আবু তৈয়ব, সহকারি পোলিং অফিসার ও বাঘাইছড়ি কিশালয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. আমির হোসেন, শিক্ষক আবু তৈয়ব, আনসার ও ভিডিপি সদস্য মো. আল আমিন, বিলকিস, জাহানারা বেগম, মিহির কান্তি দত্ত এবং চাঁদের গাড়ির হেলপার মন্টু চাকমা।

পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, বাঘাইছড়ির সাজেক ইউনিয়নের দুর্গম কংলাক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাচালং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও বাঘাইহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নির্বাচনী দায়িত্ব পালন শেষে সন্ধ্যায় একসঙ্গে বিজিবির পাহারায় চারটি চাঁদের গাড়ি (জিপ) নিয়ে উপজেলা সদরে ফিরছিলেন নির্বাচনী কর্মীরা। বহরে ছিলেন ভোটকেন্দ্রগুলোর প্রিজাইডিং অফিসার, পোলিং অফিসার, পুলিশ ও আনসার সদস্যরা। গাড়িবহরের সামনে ছিল বিজিবির গাড়ি। বহরটি দীঘিনালা-বাঘাইছড়ি সড়কের নয়মাইল এলাকায় পৌঁছালে সশস্ত্র হামলা চালায় সন্ত্রাসীরা। তাদের গুলিতে পেছনের একটি গাড়ি আক্রান্ত হয়। এ সময় চালক গাড়ি না থামিয়ে দ্রুতগতিতে গাড়িটি চালিয়ে বাঘাইছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখানে গাড়ি থেকে তাদের নামানোর পর একের পর এক মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে থাকেন গুলিবিদ্ধরা।

তাৎক্ষণিকভাবে আহতদের নাম জানা সম্ভব হয়নি। তবে এদের মধ্যে পাঁচজন পুলিশ সদস্য, তিনজন আনসার সদস্য ও তিনজন বেসামরিক লোক রয়েছে বলে জানা গেছে।

বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাদিম সারোয়ার জানিয়েছেন, তিনটি কেন্দ্রে নির্বাচনী দায়িত্ব পালন শেষে তারা সবাই ফিরছিলেন। তখন নয় মাইল এলাকায় তাদের ওপর সন্ত্রাসী হামলার এই নৃশংস ঘটনাটি ঘটে। তিনি জানিয়েছেন, আহতদের উন্নত চিকিৎসার জন্য হেলিকপ্টারযোগে চট্টগ্রামে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) পাঠানো হয়েছে।

রাঙামাটি পুলিশ সুপার আলমগীর কবির ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, হতাহতরা নির্বাচনী দায়িত্ব পালন শেষে বাঘাইছড়িতে ফিরছিলেন।

এ ঘটনায় এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। ঘটনার সাথে কারা জড়িত তা এখনো নিশ্চিত করতে পারেনি প্রশাসন।

২৭ বিজিবির জোন কমান্ডার লে. কর্নেল মাহাবুল ইসলাম জানান, ওই এলাকায় বিজিবি, পুলিশ ও আনসার সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে।

পাল্টাপাল্টি দোষারোপ: নির্বাচনে অংশ নেওয়া পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (এমএন লারমা) চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান সুদর্শন চাকমা জানিয়েছেন, সন্তু লারমার জেএসএসের বড়ঋষি চাকমা নিশ্চিত পরাজয় জেনে সোমবার সকালে নির্বাচন বর্জন নাটক করেন। পরে সন্ধ্যায় সরকারি কাজে নিয়োজিতদের ওপর এই নৃশংস হামলা চালিয়েছে। তিনি এই হামলার জন্য জনসংহতি সমিতি ও ইউপিডিএফকে দায়ী করেছেন।

পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির বাঘাইছড়ি উপজেলা কমিটির সহসাধারণ সম্পাদক ত্রিদিব চাকমা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, ‘এই ঘটনার সঙ্গে আমাদের দূরতম সম্পর্কও নেই। কারণ ওই এলাকায় আমাদের কোনো সাংগঠনিক কার্যক্রম বা অবস্থান নেই। ওইটা পুরোটাই ইউপিডিএফের নিয়ন্ত্রিত এলাকা। আর আমরা যেহেতু সকালেই নির্বাচন বর্জন করেছি এবং লিখিতভাবে আমাদের অভিযোগ নির্বাচন কমিশনকে জানিয়েছি, আমরা কেন এমন কাজ করব? আমরা গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে বিশ্বাসী, গণতান্ত্রিক আন্দোলনেই আমাদের আস্থা আছে।’

অন্যদিকে ইউপিডিএফের মুখপাত্র মাইকেল চাকমা বলেছেন, ‘এই ঘটনার সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। একজন সুস্থ মস্তিষ্কের কারো কাজ এটি নয়। এই নির্বাচনে বাঘাইছড়িতে আমাদের কোনো প্রার্থীও ছিল না। আমরা কেন এই কাজ করতে যাব?’

প্রসঙ্গত, বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাচনে জাতীয় কোনো রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করেনি। ভোটযুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছিলেন সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির প্রভাবশালী নেতা ও বর্তমান চেয়ারম্যান বড়ঋষি চাকমা এবং সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (এমএন লারমা) অন্যতম শীর্ষ নেতা সুদর্শন চাকমা। এই দুই নেতার ভোটযুদ্ধ নিয়ে উত্তাপ ছিল সেখানে। ভোটের প্রচারণার মধ্যেই গত ৩ মার্চ উপজেলার বঙ্গলতলিতে হামলায় নিহত হন জনসংহতি সমিতির গুরুত্বপূর্ণ নেতা উদয় জয় চাকমা চিক্কোধন। সর্বশেষ ভোটের দিন সকালেই নির্বাচনে অনিয়ম, ভোট ও কেন্দ্র দখল এবং চারটি কেন্দ্রে রাতেই ভোট দেওয়া হয়েছে এমন অভিযোগ এনে সকাল ১০টায় ভোট বর্জন করেন জনসংহতি সমিতির প্রার্থী বড়ঋষি চাকমা। ভোট বর্জন করেন তিনজন ভাইস চেয়ারম্যানও।

কালের আলো/এমএইচএ

Print Friendly, PDF & Email