মাদক আইস সিন্ডিকেটের মূল হোতাসহ গ্রেফতার ৬ (ভিডিও)

প্রকাশিতঃ 7:10 pm | June 18, 2021

নিজস্ব সংবাদদাতা, কালের আলো:

রাজধানীর উত্তরা থেকে ক্রিস্টাল মেথ (আইস মাদক) সিন্ডিকেটের অন্যতম হোতা তৌফিকসহ ছয় জনকে আটক করেছে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)।

শুক্রবার (১৮ জুন) বিকেলে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানায় র‌্যাব।

এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে র‌্যাব জানায়, একটি চক্র “মেথ ল্যাব” তৈরী করে ভেজাল আইস, ইয়াবার রং পরিবর্তন, ঝাক্কি মিক্স, ঝাক্কি বা ককটেল মাদক তৈরী করছে এমন তথ্যে বৃহস্পতিবার (১৭ জুন) র‌্যাব-৩ এর আভিযানিক দল ঢাকা মহানগরীর উত্তরা পশ্চিম থানাধীন এলাকায় অভিযান চালিয়ে এ চক্রের মূল হোতা মোঃ তৌফিক হোসাইন(৩৫), মোঃ জামিরুল চৌধুরী, মোঃ আরাফাত আবেদীন, মোঃ রাকিব বাসার খান(৩০), মোঃ সাইফুল ইসলাম সবুজ(২৭) ও মোঃ খালেদ ইকবাল নামের ৬ জনকে আটক করে।

এ সময় আইস, ইয়াবা, বিদেশী মদ, গাঁজা এবং ১৩টি বিদেশী অস্ত্র এবং রেপলিকা অস্ত্র ও অন্যান্য ইলেকট্রিক শক যন্ত্র, বিপুল পরিমান, মাদক সেবনের সরঞ্জামাদিসহ ল্যাবরেটরি (মেথ ল্যাব) সরঞ্জামাদি উদ্ধার করা হয়।

শুক্রবার (১৮ জুন) বিকেলে কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন র‌্যাব সদরদফতরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

তিনি বলেন, তরুণ প্রজন্মরা নতুন নতুন মাদকের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে। এর কারণে এই চক্রটি ভয়ানক মাদক আইসের সঙ্গে ইয়াবা, ঘুমের ওষুধ ও অন্যান্য নেশাজাতীয় ওষুধের তরল মিশ্রণে ‘ঝাক্কি’ তৈরি করছিল। মাদক তৈরিতে তারা একটি বাসা ভাড়া নেয়। বাসা ভাড়া নেয়ার পর তারা ‘মেথ ল্যাব’ তৈরি করে।

এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘মেথ ল্যাবটি’ মূলত গ্রেফতার আরাফাত রুদ্র ওরফে ঝাক্কি রুদ্র ও তার কয়েকজন সহযোগীর সহায়তায় পরিচালিত হতো। তারা ভেজাল ও পরিশুদ্ধ আইস সরবরাহ ও নিজেরাও সেবন করত। এছাড়া তারা উত্তরায় একটি বাইং হাউজের নামে বাসা ভাড়া করে গোপনে মাদক সেবন ও অনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করতো। যেখানে সেবনকারী সিন্ডিকেটের একই ‘রিং’ বা পরিচিতরা আসা-যাওয়া করত।

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন আরও বলেন, মাদক ব্যবসার মূলহোতা ও সমন্বয়কারী হলেন তৌফিক। অর্থ যোগানদাতা হলেন জুবেইন ও খালেদ। রুদ্র কেমিস্ট হিসেবে ‘মেথ ল্যাব’ পরিচালনা করত। সবুজ সংগ্রহ ও সরবরাহকারী এবং তৌফিকসহ বাকিরা সকলেই মাদক বিপণনের সঙ্গে জড়িত ছিল। এ চক্রে আরও ১০-১৫ জন রয়েছে।

তিনি বলেন, গ্রেফতার জুবেইন লন্ডন থেকে বিবিএ শেষ করে দেশে আসে। তৌফিক দেশের একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ শেষ করেছে। খালেদ একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ শেষ করেছে। রুদ্র ও সাইফুল এইচএসসি পাস করার পর ড্রপ আউট এবং খালেদ একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষে অধ্যয়নরত। রুদ্রের নামে ৩টি মাদক মামলা রয়েছে ও জুবেইনের নামে একটি হত্যাচেষ্টা মামলা রয়েছে।

র‌্যাবের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, দীর্ঘদিন ধরে প্রতিনিয়ত ইয়াবা সেবনে তারা চরম আসক্তির পর্যায়ে পৌছায়। পরবর্তীতে আসক্তির মাত্রা বাড়তে গত চার থেকে পাঁচ বছর ধরে তারা আইস গ্রহণ শুরু করে। গ্রেফতাররা বিভিন্ন সময়ে উঠতি বয়সী তরুণ-তরুণীদের নেশায় উদ্বুদ্ধ করতো। ক্ষেত্র বিশেষে গোপন ভিডিও ধারণ করে তাদেরকে ব্ল্যাকমেইল করত। এছাড়া তারা অস্ত্র দিয়ে ‘এমিং গেম’ জুয়া খেলত।

মাদক সিন্ডিকেট ও আইস গ্রহণকারীদের বিরুদ্ধে র্যাবের সাড়াশি অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও জানান র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক।

র‌্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, বর্তমান সময়ের মাদকের ধরণ ও সরবরাহের গতিপথে পরিবর্তন এসেছে। এখন সবচেয়ে আলোচিত মাদক হলো আইস। এই মাদকে আসক্ত হয়ে মাদকাসক্তরা নানা অপরাধে জড়িত হয়ে পড়ছে।

র‌্যাব জানায়, আইস এক ধরনের মেথামফেটামিন মাদক যা মানবদেহে ইয়াবার চেয়েও বহুগুণ ক্ষতিসাধন করে। এটি সেবনের ফলে অনিদ্রা, অতি উত্তেজনা, স্মৃতিভ্রম, মস্তিষ্ক বিকৃতি, স্ট্রোক, হৃদরোগ, কিডনি ও লিভার জটিলতা এবং মানসিক অবসাদ ও বিষণ্ণতা তৈরি হতে পারে। শারীরিক ও মানসিক উভয় ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এই মাদকের প্রচলনের ফলে তরুণ-তরুণীদের মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে এবং অস্বাভাবিক আচরণ পরিলক্ষিত হয়।

কালের আলো/ডিআরবি/এমএম