ফ্যাসিস্ট ব্যবস্থার বিলোপে মেটিকুলাস ডিজাইনে সমস্যা কোথায়: মাহফুজ
প্রকাশিতঃ 10:17 pm | July 04, 2025

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক, কালের আলো:
ফ্যাসিস্ট ব্যবস্থার বিলোপে মেটিকুলাস ডিজাইন হলে সমস্যা কোথায়, সেই প্রশ্ন তুলেছেন তথ্য উপদেষ্টা ও ছাত্র আন্দোলনের সংগঠক মাহফুজ আলম।
শুক্রবার (৪ জুলাই) এক ফেসবুক পোস্টে ‘মেটিকুলাস ডিজাইন’ নিয়ে যারা প্রশ্ন তোলেন, তাদের উদ্দেশে এই প্রশ্ন ছুড়ে দেন তিনি।
ফেসবুক পোস্টে মাহফুজ বাংলাদেশের স্বাধীনতার আগের বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রাম নিয়ে লেখেন, ‘পাকিস্তানি স্বৈরশাসকদের বিরুদ্ধে মেটিকুলাস ডিজাইন করে আগরতলা ষড়যন্ত্র, ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান আর ৭১-এর মার্চ মাসে অসহযোগ আন্দোলন ও বাঙালি-বিহারী দাঙ্গা সঠিক হইতে পারলে ২৪-এর গণঅভ্যুত্থান মেটিকুলাস ডিজাইন হলে সমস্যা কোথায়?’
আন্দোলন-সংগ্রামে পরিকল্পনা থাকবে উল্লেখ করে তিনি লিখেছেন, ‘দুনিয়ার কোন অভ্যুত্থান বা বিপ্লব পরিকল্পনা না করে হয়েছে? জনগণের চৈতন্যকে ঐক্যবদ্ধ ও লক্ষ্যাভিমুখী রাখতে মেটিকুলাস ডিজাইনের বিকল্প নেই। যখন জনগণ নেতৃত্ব ও বক্তব্য পেয়ে যাবে এবং বিপ্লবের অবজেক্টিভ কন্ডিশন প্রস্তুত, তখন আর প্ল্যানের দরকার পড়ে না। কিন্তু, তার আগে রাজনৈতিকভাবে জনগণকে প্রস্তুত এবং বিপ্লবী করে তোলা মেটিকুলাস ডিজাইন হলে সমস্যা কোথায়?’
তিনি আরও লিখেছেন, ‘সিরাজুল আলম খান, তাজউদ্দিন, সিরাজ শিকদার আর ভাসানী, এমনকি খোদ শেখ মুজিব যদি পাকিস্তানকে পরাজিত করতে মেটিকুলাস ডিজাইনের অংশ হয়ে পাপবোধ না করেন এবং আমরা তাদের নিয়ে (তাদের ভুলসহই, স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য) গর্বিত হতে পারি, তাহলে ২৪-এর গণঅভ্যুত্থানে মেটিকুলাস ডিজাইন করে হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করলে কেন এ প্রজন্ম গর্বিত বোধ করবে না?
৩ তারিখের ১ দফা ঘোষণার আগে জাতিসংঘের বক্তব্য ছাড়া বিদেশি শক্তি বা সামরিক বাহিনী কারোরই বিন্দুমাত্র অংশগ্রহণ ছিল না এ গণঅভ্যুত্থানে। ভারতের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে (যা ন্যায্য বলেই আমরা মনে করি) আগরতলা বৈঠক থেকে স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য শেখ মুজিব ও অন্যান্য জাতীয় নেতৃত্বের প্রতি যদি আমাদের শ্রদ্ধা থাকে, তাহলে কোনো বিদেশি শক্তি বা তৃতীয় শক্তির সঙ্গে ষড়যন্ত্র কিংবা শলা-পরামর্শ ছাড়াই জনগণের অভ্যুত্থান ঘটিয়ে ফেলার জন্য অভ্যুত্থানের নেতৃবৃন্দ এবং অংশীজনকে কেন গালি শুনতে হবে?
পোস্টে মেটিকুলাস ডিজাইন অংশের ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি লিখেছেন, ‘পুনশ্চ: জুলাই গণঅভ্যুত্থানের দুটি অংশ। ৫ জুন থেকে ১৮ জুলাই। এ অংশে অভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপট এবং নেতৃত্ব তৈরি করেছিল। আর ১৯ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সকল স্তরের ছাত্র-জনতার অংশগ্রহণে এবং আত্মদানে অভ্যুত্থান সফল হয়েছিল।
প্রথম অংশ অবশ্যই মেটিকুলাসলি ডিজাইনড। পরের অংশের কৃতিত্ব বিপ্লবী ছাত্র-জনতার। কিন্তু, অভ্যুত্থানের নেতৃত্বের দিকনির্দেশনা এবং সুনির্দিষ্ট বক্তব্য না থাকলে এ বিপ্লবী জনতা পরের অংশে লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারত না। শুক্রবার দিবাগত রাত, ২ আগস্টে এ অভ্যুত্থান বেহাত হয়ে সামরিক অভ্যুত্থানের দিকে মোড় নেওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল। তা ঠেকাতে পেরেছিল অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব।
এ নির্দেশনা ও বক্তব্যের অবদানটুকু বাদে ১৯ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত বিদ্রোহ, প্রতিরোধ, আত্মত্যাগ আর বিপ্লবী তৎপরতার কৃতিত্ব সকল স্তরের ছাত্র-জনতার।’
মাহফুজ আরও লিখেছেন, উপরের এ ব্যাখ্যা ভাসানীর ৬৮ সালের ঘেরাও আন্দোলন থেকে শুরু করে ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান পর্যন্ত ঘটনাপ্রবাহ মিলিয়ে দেখেন, অথবা ৭১-এর মার্চ। আপনারা মেটিকুলাস ডিজাইনও বুঝতে পারবেন এবং জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত বিদ্রোহ, প্রতিরোধ আর বিপ্লবী তৎপরতারও হদিস পাবেন।
কালের আলো/এএএন