জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বের অকুন্ঠ প্রশংসায় বিশ্ব নেতারা

প্রকাশিতঃ 4:32 am | May 13, 2021

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো :

জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় সামনের সারিতে থেকে বিশ্বকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় সচেতন থেকে নিজ নিজ দায়িত্ব পালনে যেমন আহ্বান জানিয়েছেন তেমনি গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শও দিয়ে যাচ্ছেন বিশ্ব নেতাদের।

‘নিয়মানুবর্তিতা ও কঠোর পরিশ্রমের ‘রোল মডেল’ শেখ হাসিনাই সেই সরকারপ্রধান যিনি প্রতি বছর জলবায়ু অভিযোজন এবং টেকসই অবকাঠামো নির্মাণে নিজেদের জিডিপির ২ দশমিক ৫ শতাংশ অর্থাৎ ৫ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করছেন। জলবায়ুর পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ বিচক্ষণতার সঙ্গে মোকাবেলা করে দারিদ্র্য জয়ের লড়াইয়ে শেখ হাসিনার অনন্য নেতৃত্বের প্রশংসায় তাই পঞ্চমুখ বিশ্ব নেতারা।

মঙ্গলবার (১১ মে) রাতে ঢাকায় একটি আন্তর্জাতিক ভার্চুয়াল সংলাপেও অন্যতম প্রধান উপজীব্য ছিলো দুর্যোগে-সঙ্কটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কার্যকর ও দূরদর্শী নেতৃত্বগুণের সারি সারি চিত্রপট। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা: এনামুর রহমানও দারিদ্র্য বিমোচনসহ সামাজিক নিরাপত্তা অর্জনে নিজ দেশের সফল কর্মপ্রয়াস তুলে ধরেন।

জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগ মোকাবেলায় নিজের সরকারের নানামুখী উদ্যোগের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগ গোটা বিশ্বেই প্রশংসা কুড়িয়েছে বলেও মনে করেন। একই সেমিনারে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোহসীন দুর্যোগ সহনীয় টেকসই নিরাপদ বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পিতভাবে কাঠামোগত ও অকাঠামোগত কর্মসূচি বাস্তবায়নের বিষয়টিও সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েই উপস্থাপন করেছেন।

‘রিস্ক ইনফরমড আরলি অ্যাকশন পার্টনারশিপ- কমিটমেন্ট টু অ্যাকশন-আরইএপি’ শীর্ষক এই ভার্চুয়াল সংলাপে দৃঢ়তার সঙ্গে বলা হয়, ‘ভৌগোলিক অবস্থান ও জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব সত্ত্বেও ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, বন্যা, ভূমিকম্প, অগ্নিকাণ্ড, নদী ভাঙন, খরার মত দুর্যোগ মোকাবেলা করেই বাংলাদেশ টিকে রয়েছে। গত দুই বছরে ফণী, বুলবুল ও আম্পানের মতো প্রবল ঘূর্ণিঝড় সফলভাবে মোকাবেলায় দেশটির সক্ষমতাও মোটা দাগে আলোচনায় উঠে আসে।

উল্লেখ করা হয়, জনগণের জন্য অভিযোজন ব্যবস্থা তৈরি করতে শেখ হাসিনার সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এ সময়ে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবসমূহ অভিযোজনের মাধ্যমে নিরসনের জন্য বছরে প্রায় একশো কোটি মার্কিন ডলার ব্যয় করছে। একই সঙ্গে বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান ২১০০ নামে একটি দীর্ঘ-মেয়াদি পরিকল্পনাও গ্রহণ করেছে।

ভার্চুয়াল এই সেমিনারে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান বলেন, ‘জীবন ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি কমাতে দুর্যোগপূর্ব প্রস্তুতি গ্রহণ, আসন্ন দুর্যোগের কবল থেকে নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় গ্রহণের জন্য বেতার, টেলিভিশন এবং স্থানীয়ভাবে দুর্যোগ প্রবণ এলাকায় মাইকিংয়ের মাধ্যমে প্রচারণার পাশাপাশি দ্রুত ও অধিকতর কার্যকর পদ্ধতি হিসেবে ইন্টারেক্টিভ ভয়েস রেসপন্স চালু করা হয়েছে।

মোবাইল ফোন নম্বর থেকে ১০৯০ (টোল ফ্রি) নম্বরে ডায়াল করে দুর্যোগের আগাম বার্তা পেয়ে জনগণ পূর্ব প্রস্তুতি গ্রহণের সুযোগ পাচ্ছে। এ বার্তাকে আরও অধিকতর জনবান্ধব করার লক্ষ্যে কমিউনিটি রেডিওর মাধ্যমে স্থানীয় ভাষায় বার্তা প্রচারের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।’

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোহসীন বলেন, ‘দুর্যোগে জীবন ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে দুর্যোগসহনীয় টেকসই নিরাপদ বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় পরিকল্পিতভাবে কাঠামোগত ও অকাঠামোগত কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। স্বাধীনতার পর উপকূলীয় অধিবাসীদের জান-মাল ও সার্বিক ক্ষয়ক্ষতি লাঘব করার লক্ষ্যে ১৯৭২ সালে ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি (সিপিপি) প্রতিষ্ঠিত হয়।

তিনি বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এটিকে সরকারি কর্মসূচি হিসেবে গ্রহণ করেন। বর্তমানে প্রায় ৭৪ হাজার সিপিপি স্বেচ্ছাসেবক উপকূলীয় এলাকায় কাজ করছেন। দুর্যোগ প্রস্তুতি, প্রশমন ও ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বিকশিত হয়েছে।’

যুক্তরাজ্যের মিনিস্টার ফর বিজনেজ এনার্জি অ্যান্ড ক্লিন গ্রোথ অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল চ্যাম্পিয়ন অন অ্যাডাপ্টেশন অ্যান্ড রেসিলেন্স ফর দি কপ-২৬ প্রেসিডেন্সি অ্যানি মেরি ট্রেভেলিয়ানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তৃতা করেন জামাইকার হাউজিং, আরবান রিনিউওয়াল, এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড ক্লাইমেট চেঞ্জ বিষয়ক মন্ত্রী পিয়ারনেল পি চার্লেস, জাপানের গ্লোবাল এনভায়রনমেন্টাল অ্যাফেয়ার্স বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ভাইস-মিনিস্টার কোনদো টমোহিরো, ফ্রান্সের ইউরোপ ও পররাষ্ট্র বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ক্লাইমেট অ্যাম্বাসেডর স্টেপহান ক্রেওউজাট, জার্মানির পার্লামেন্টারি স্টেট সেক্রেটারি টু দ্য ফেডারেল মিনিস্টার ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট মারিয়া ফ্লাকহিসবার্থ, মিশরের পররাষ্ট্র বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ডাইরেক্টর অব এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সাস্টেইনেবল ডেভেলপমেন্ট ডিপার্টমেন্টের অ্যাম্বাসেডর মোহম্মদ গাদ প্রমুখ।

কালের আলো/জিকেএম/এমএ

Print Friendly, PDF & Email