প্রধানমন্ত্রীর বিচক্ষণ নেতৃত্বে নিয়ন্ত্রণের পথে করোনা
প্রকাশিতঃ 4:07 pm | May 06, 2021

নিজস্ব সংবাদদাতা, কালের আলো:
করোনায় যখন বিশ্বের বহুদেশ বিপর্যস্ত ঠিক সেই সময়েও বাংলাদেশকে টালমাটাল করতে পারেনি প্রাণঘাতী এই ভাইরাস। অন্যান্য দেশের তুলনায় মৃত্যু ও শনাক্তের সংখ্যাও নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বাংলাদেশে। বলা হচ্ছে, কেবলমাত্র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচক্ষণ নেতৃত্ব ও সময়োপযোগী সিদ্ধান্তেই নিয়ন্ত্রিত রয়েছে করোনার সংক্রমণ।
ইতোমধ্যেই প্রধানমন্ত্রীর বিচক্ষণ নেতৃত্ব এবং সময়োচিত পদক্ষেপ প্রশংসা কুড়িয়েছে বিশ্বজুড়েই। বিশ্বের টালমাটাল অবস্থাতেও নতুন মাইলফলক স্থাপন করেছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। একই সঙ্গে জীবন এবং জীবিকার সমন্বয় করে ভারসাম্যমূলক কর্মপন্থা অবলম্বন করায় বেড়েছে রপ্তানি আয়।
দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় ২০২০ সালের ৮ মার্চ। এরপর বছরজুড়ে ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ চার হাজার ১৯ জন শনাক্তের রেকর্ড হয়। মৃতের সর্বোচ্চ সংখ্যা ছিল ২৪ ঘণ্টায় ৬৪ জন। এ বছর দ্বিতীয় ঢেউয়ে শনাক্ত বাড়তে শুরু করে হু হু করে।
একপর্যায়ে ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত হয় সাত হাজার ৬২৬ জন। মৃতের সর্বোচ্চ সংখ্যা ওঠে ২৪ ঘণ্টায় ১১২ জনে। এ অবস্থায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কারিগরি কমিটির সুপারিশের সঙ্গে নিজের বিজ্ঞতার সমন্বয় ঘটিয়ে আবারো সংক্রমণ ঠেকাতে চলাচলে বিধি-নিষেধ আরোপ করেন। তবে পাশাপাশি ক্যারিশম্যাটিকভাবে চালু রাখেন অর্থনীতির চাকা। যেমন শিল্প-কারখানা এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান একইসঙ্গে নিয়ন্ত্রন্ত্রিভাবে চালু রেখে জীবন এবং জীবিকার ভারসাম্য রক্ষা করেন। ফলে এক মাসের ব্যবধানে ঊর্ধ্বমুখী করোনার সংক্রমণ নিম্নমুখী হতে শুরু করেছে। সর্বশেষ গত ২৪ ঘণ্টায় এক হাজার ৭৪২ জন শনাক্ত হয়েছেন। নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় শতকরা হার আট দশমিক ৫৯। মৃত্যু কমে এসেছে ৫০ জনে। মৃত্যুর এই সংখ্যা গত পাঁচ সপ্তাহে সর্বনিম্ন। বিশেষজ্ঞদের হিসাবে শনাক্তহার একটানা চার সপ্তাহ পাঁচ শতাংশের নিচে থাকলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ধরা হয়। তাদের মতে, চলমান কঠোর বিধি-নিষেধ পুরোপুরি মেনে চললে করোনা পরিস্থিতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসী ও সময়োপযোগী নানা পদক্ষেপের কারণেই বর্তমান পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণের দিকে বলে মনে করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। এমনকি করোনা নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি এর প্রভাবে সৃষ্ট অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেওয়া পদক্ষেপের প্রশংসা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। বাংলাদেশ বৈশি^ক মহামারির শুরুর দিককার অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রভাবও সাফল্যের সঙ্গেই নিয়ন্ত্রণে আনতে যাচ্ছেন।
পাশ্ববর্তী দেশ ভারত যখন প্রতিনিয়ত শনাক্ত ও মৃত্যুর রেকর্ডে দিশেহারা, তখন বাংলাদেশে এপ্রিলের শেষ থেকেই পরিস্থিতি অনেকটা নিয়ন্ত্রণে। এই দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলা করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৩১ দফা নির্দেশনাসহ ভার্চুয়াল কনফারেন্সের মাধ্যমে নানামুখী দিকনির্দেশনা প্রদান করেছেন। প্রায় এক মাস ধরে দেশব্যাপী চলা কঠোর বিধি-নিষেধের ফলে মানুষের সচেতনতাও বৃদ্ধি পেয়েছে। এই বিধি-নিষেধের মধ্যেও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড স্বাভাবিক রাখা ছিল সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর কৌশলী বিভিন্ন পদক্ষেপের ফলে দেশের রপ্তানি বৃদ্ধি পেয়েছে এবং অভ্যন্তরীণ বাজারে পণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখা সম্ভব হয়েছে। বিনামূল্যে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ, ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রয় এবং নগদ অর্থ বিতরণসহ সরকারের বিভিন্ন কর্মসূচির কারণে দেশে একটি মানুষও করোনাকালে না খেয়ে থাকেনি।
এছাড়াও করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় জরুরিভিত্তিতে দুই হাজার চিকিৎসক ও পাঁচ হাজার ৫৪ জন নার্স নিয়োগ করা হয়েছে। কোভিড ডেডিকেটেড (করোনার জন্য নির্ধারিত হাসপাতালে) হাসপাতালগুলোতে ১০ হাজার ৫২৫টি সাধারণ শয্যা, ৬৬৬টি আইসিইউ এবং ৭৩টি ডায়ালাইসিস বেড, ৫৫৪টি ভেন্টিলেটর, ১৩ হাজার ৫১৬টি অক্সিজেন সিলিন্ডার, ৬৭৮ হাই ফ্লো নাজাল ক্যানুলা এবং ৬৩৯টি অক্সিজেন কনসেনট্রেটর ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। কোভিড-১৯ মহামারি মোকাবিলায় টিকা আবিষ্কারের শুরুর দিকেই ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে তিন কোটি ডোজ ভ্যাকসিন ক্রয়ের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করা হয়। যার ফলে দেশে গত তিন মাসে প্রায় এক কোটি মানুষকে টিকার আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে। এদিকে, ভারতের অভ্যন্তরীণ চাহিদার কারণে টিকা রপ্তানি সাময়িক বন্ধ করলেও সরকার বিকল্প জায়গা থেকে টিকা সংগ্রহের চেষ্টা করে। সেক্ষেত্রেও সফলতার পরিচয় দিয়েছে শেখ হাসিনার সরকার। এ জন্য চীন ও রাশিয়া থেকে টিকা আনার প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। আগামী ১২ মে চীন থেকে উপহার হিসেবে ১২ লাখ ডোজ টিকা আসছে। এ ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র থেকে টিকা পাওয়ার আশ্বাস মিলেছে।
বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়েছিল গতবছর ৮ মার্চ। এর তিন মাস পর গত বছরের জুন-জুলাইয়ের দিকে প্রথম ধাপের সংক্রমণের চূড়ান্ত রূপ দেখা যায়। ২ জুলাই দৈনিক শনাক্তের সংখ্যা ছিল চার হাজার ১৯ জন। প্রথম ধাপে সেটিই ছিল সর্বোচ্চ সংখ্যা। তবে ১৭ জুন শনাক্তের সর্বোচ্চ হার ছিল ২২ দশমিক ৮৭। ওইদিন শনাক্তের সংখ্যা ছিল চার হাজার আট জন। ওই ধাপে ৩০ জুন সর্বোচ্চ দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ৬৪ জন। এরপর থেকে প্রথম ধাপের সংক্রমণের সংখ্যা কমতে থাকে। এক পর্যায়ে চলতি বছরের শুরুর দিকে সেটি কমে আসে। গত ৭ ফেব্রুয়ারি শনাক্তের সংখ্যা আগের ১০ মাসের মধ্যে সবচেয়ে কমে আসে ২৯২ জনে। ওইদিন শনাক্তের হার ছিল দুই দশমিক ৩৫ শতাংশ। তবে চলিত বছরের মার্চের দিকে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রভাবে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা ফের বাড়তে শুরু করে। এক পর্যায়ে শনাক্ত, মৃত্যু ও শনাক্তের হার আগের সব রেকর্ড অতিক্রম করে। গত ৭ এপ্রিল দেশে দৈনিক সর্বোচ্চ সাত হাজার ৬২৬ জন রোগী শনাক্ত হয়। এর দুদিন পর ৯ এপ্রিল দৈনিক শনাক্তের হার দাঁড়ায় ২৩ দশমিক ৫৭ শতাংশ। যা এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ শনাক্তের হার। আর ১৯ এপ্রিল দেশে করোনায় আক্রান্ত হয়ে একদিনে রেকর্ড ১১২ জনের মৃত্যু হয়। তবে এপ্রিলের শেষ দিকে এসে আক্রান্ত রোগী, মৃত্যু, নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার সবই নিম্নমুখী।
গতকাল বুধবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, দেশে করোনা ভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে গত একদিনে আরো ৫০ জনের মৃত্যু হয়েছে, যা গত পাঁচ সপ্তাহের মধ্যে সর্বনিম্ন। সর্বশেষ এরচেয়ে কম মৃত্যুর খবর এসেছিল গত ৩০ মার্চ; সেদিন ৪৫ জনের মৃত্যুর তথ্য জানয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এরপর গত ৩৫ দিনে তা পঞ্চাশের নিচে নামেনি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আরো জানায়, গতকাল সকাল পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় দেশে আরো এক হাজার ৭৪২ জনের দেহে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে। এদের নিয়ে দেশে এ পর্যন্ত শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে হয়েছে সাত লাখ ৬৭ হাজার ৩৩৮ জন। আর করোনা ভাইরাসে মৃতের মোট সংখ্যা ১১ হাজার ৭৫৫ জনে পৌঁছেছে। এদের মধ্যে আট হাজার ৫৪৪ জন পুরুষ এবং তিন হাজার ২১১ জন নারী। আর গত একদিনে আরো তিন হাজার ৪৩৩ জন সুস্থ হয়ে উঠেছে; এ পর্যন্ত সুস্থ মোট হয়েছেন ছয় লাখ ৯৮ হাজার ৪৬৫ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার আট দশমিক ৫৯ শতাংশ, এ পর্যন্ত মোট শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৮০ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৯১ দশমিক শূন্য দুই শতাংশ এবং মৃত্যুর হার এক দশমিক ৫৩ শতাংশ। গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ৪২৭টি ল্যাবে ২০ হাজার ২৮৪টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এ পর্যন্ত পরীক্ষা হয়েছে ৫৫ লাখ ৬০ হাজার ৬৭৮টি নমুনা। সরকারি ব্যবস্থাপনায় এ পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৪০ লাখ ৯৪ হাজার ৩৮৪টি; বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ১৪ লাখ ৬৬ হাজার ২৯৪টি।
এ সময়ে মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে ৩২ জন পুরুষ আর নারী ১৮ জন। তাদের ৩৫ জন সরকারি হাসপাতালে, ১২ জন বেসরকারি হাসপাতালে মারা যান। বাসায় মারা গেছেন তিনজন। তাদের মধ্যে ৩০ জনের বয়স ছিল ৬০ বছরের বেশি, ১৩ জনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে, পাঁচ জনের বয়স ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে এবং দুজনের বয়স ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ছিল। তাদের মধ্যে ২৮ জন ঢাকা বিভাগের, ১৬ জন চট্টগ্রাম বিভাগের, একজন রাজশাহী বিভাগের, তিনজন খুলনা বিভাগের ও দুজন সিলেট বিভাগের বাসিন্দা ছিলেন।
কালের আলো/এসকে/এমআরবি