সেনাপ্রধানের ১২ দফা নতুন নির্দেশনায় করোনা যুদ্ধে জয়ী হওয়ার দৃঢ় প্রত্যয়
প্রকাশিতঃ 10:39 am | April 18, 2021

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো :
আবারও মাথাচাড়া দিয়েছে ভয়ঙ্কর অদৃশ্য অনুজীব করোনাভাইরাস। বুকভরা ক্রন্দন আহাজারি আর বিচ্ছেদ বেদনার বিষাদকাব্যের সময়টিতে নিজেদের জীবনকে বিপন্ন করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে দেশের ৬২ টি জেলায় বেসামরিক প্রশাসনকে নানাভাবে সহায়তা দিয়ে স্বমহিমায় ঔজ্জ্বল্য ছড়িয়েছিলেন দেশপ্রেমিক সেনারা।
করোনার প্রথম ঢেউয়ের মতো দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলারও দৃঢ় অঙ্গীকার করেছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ড.আজিজ আহমেদ। সফলতার লক্ষে ইতোমধ্যেই তিনি নিজ বাহিনীর সদস্যদের প্রতি ১২ দফা কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন। কালের আয়নায় দেদীপ্যমান করেছেন নিজেদের দায়িত্ববোধকে। দেশ ও মানুষের কল্যাণে করোনার সঙ্গে লড়াইটি আরও শাণিত করেছেন।
নিজের প্রবল সাহস ও আত্মপ্রত্যয়ের মধ্যদিয়ে ভুবন জয় করা এক চিরসত্যকেও মোটাদাগে উপস্থাপন করেছেন। বলেছেন, ‘করোনাভাইরাস মোকাবেলায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রতিটি সদস্যের অবদান জাতি গর্বভরে স্মরণ করে।’
‘করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ অত্যন্ত বিপজ্জনকভাবে সারা বিশ্ব তথা আমাদের দেশ ও সেনাবাহিনীকে হুমকির সম্মুখীন করেছে। এই সঙ্কটময় পরিস্থিতি হতে পরিত্রাণ পেতে সরকার ইতোমধ্যেই দেশব্যাপী কঠোর লকডাউন ঘোষণা করেছে। আমরা প্রথম ঢেউয়ের মতো দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলায় সফলতা আনয়নে বদ্ধপরিকর’-অফুরান প্রাণশক্তি, স্বপ্ন আর পরিকল্পনার সঙ্গে নিজের দৃঢ় নেতৃত্বের মেলবন্ধন ঘটিয়েই উচ্চারণ করেছেন সেনাপ্রধান।
অপ্রত্যাশিত বৈশ্বিক অভিঘাত করোনাভাইরাসের ভয়াবহ বিপর্যয় থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুদক্ষ ও বিচক্ষণ নেতৃত্বে বাংলাদেশ মহামারির প্রথম ধাপের ধকল কাটিয়ে অর্থনৈতিকভাবেও শিরদাঁড়া সোজা করে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর মানবিক ও সাহসী নেতৃত্বের কারণেই সব অসম্ভবকে সম্ভব করে বাংলাদেশ আজ বিশ্বকে দেখিয়েছে আমরাও পারি। নেতৃত্ব ও মানবিকতায় হিরো অব দ্যা ইয়ার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন সেনাপ্রধান জেনারেল ড.আজিজ আহমেদ।
তিনি বলেছেন, ‘জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা করোনাভাইরােেসর প্রথম ঢেউ সফলতার সঙ্গে মোকাবেলা করেছি। বাংলাদেশ সরকারের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এদেশের অসংখ্য মানুষ ইতোমধ্যে করোনা টিকার প্রথম ডোজ গ্রহণ করেছেন যা উন্নত বিশ্বের অনেক দেশ এখনও করতে পারেনি। দ্বিতীয় ডোজও ইতোমধ্যেই অনেকেই গ্রহণ করেছেন।’
নিজের দিকনির্দেশনা ও উদ্দীপনামূলক বক্তব্যে দেশপ্রেমিক সেনা সদস্যদের ভেতরে স্বপ্ন দেখা ও সফল করার স্পৃহা জুগিয়েছেন সেনাপ্রধান জেনারেল ড.আজিজ। চেইন অব কমান্ডের প্রতি গভীর আনুগত্য, ভালোবাসার বন্ধন এবং বিশ্বাস-আস্থা রাখার তাগিদও দিয়েছেন অমিত দৃঢ়তার সঙ্গেই। নিজের বাহিনীর প্রতিটি সদস্যের উদ্দেশ্যে সেনাপ্রধানের ১২ দফা নির্দেশনাসমূহ হচ্ছে-

১.করোনাভাইরাসকে নয়ে আমরা কেউ আতঙ্কিত হবো না, বরং একজন সৈনিক হিসেবে করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধে জয়ী হবার জন্য প্রয়োজনয় দায়িত্ব পালন করব।
২. আমাদের সবাইকে মনে রাখতে হবে, দৈনন্দিন জীবন ধারা থেকে দূরে থাকা নয় বরং করোনা বধি মেনে সকল কার্য সম্পাদন করাই এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের শ্রেষ্ঠ কৌশল। আমরা আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক এবং পারিবারিক জীবনের সকল প্রয়োজনীয় কার্যক্রমই করোনা বিধি মেনে পালন করব এবং করোনাকে প্রতিহত করব।
৩. শক্তিশালী রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা করোনা মোকাবেলায় সবচেয়ে জরুরী। নিয়মিত শরীরচর্চা, পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ, বিশ্রাম, সর্বোপরি সুস্থ জীবনধারা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়তে সাহায্য করে। করোনা মোকাবেলায় আমরা সবাই শক্তিশালী রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে সচেষ্ট হই।
৪. আমরা সকলে করোনা মোকাবেলায় অবশ্যকরণীয় নির্দেশাবলী যেমন- মাস্ক পরিধান করা, নিয়মিত হাত ধোয়া, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং জনসমাগম এড়িয়ে চলা কঠোরভাবে মেনে চলবো এবং পরিবার ও সহকর্মীদের তা মেনে চলতে উদ্ধুদ্ধ করব।
৫. কোভিড এর টিকা আমাদের করোনাভাইরাস হতে সুরক্ষা প্রদান করবে। কোভিড এর টিকার বিষয়ে গুজবে কান না দিয়ে সবাই দুই ডোজ টিকা গ্রহণ করুন এবং নিজেদেরকে সুরক্ষিত রাখুন।
৬. সেনাবাহিনীর চাকুরীরত এবং অবসরপ্রাপ্ত সকল সদস্যের জন্য সিএমএইচ সর্বোচ্চ সেবা দিতে সদা প্রস্তুত। সিএমএইচ এ করোনা চিকিৎসার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে ওষুধ, আইসিইউ, ভেন্টিলেটর সিষ্টেম এবং করোনা ওয়ার্ড প্রস্তুত আছে। তবে, বর্তমানে স্বাভাবিক চিকিৎসা সেবার গতি ত্বরান্বিত রাখতে জরুরী প্রয়োজন ব্যতীত সিএমএইচ আগমন থেকে বিরত থাকুন, প্রয়োজনে টেলিমেডিসিন এর সাহায্য নিন।
৭. আমরা সকলেই এই পরিস্থিতিতে বিচলিত না হয়ে সাহস এবং শৃঙ্খলা বজায় রাখব। পাশাপাশি ধৈর্য্য, সহনশীলতা এবং প্রজ্ঞার সাথে করোনাভাইরাসকে মোকাবেলা করবো। সে লক্ষে সকলে মানসিকভাবে সুস্থ্য থাকুন, পরিবার ও আত্নীয় স্বজনদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগের মাধ্যমে মনকে প্রফুল্ল রাখুন।
৮. এই সঙ্কটময় মুহুর্তে আমরা পবিত্র মাহে রমজান পালন করছি। নির্দেশনা অনুযায়ী স্বাস্থ্যবিধি মেনে এই পব্রিত মাসে সিয়াম সাধনা করব। এই ফযিলতের মাসে সবাই প্রার্থনা করব যেন মহান আল্লাহতাআলা আমাদের করোনার প্রকোপ হতে মুক্তি দান করেন।
৯. লকডাউন অথবা কোয়ারেন্টাইন অবস্থানের সময়গুলো সোশ্যাল মিডিয়াতে অপচয়/অপব্যবহার না করে বরং পেশাদারী জ্ঞান, আত্নশুদ্ধি এবং নিজ পরিবার ও সহকর্মীদের উপকারে ব্যয় করবো।
১০. গুজবে কান না দিয়ে গুজবে প্রতিহত করতে চেইন অব কমান্ডকে সহায়তা করুন। কমান্ড চ্যানেলের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকার পাশাপাশি সব রকম গুজব থেকে নিজেকে দূরে রাখুন।
১১. চলমান করোনা যুদ্ধে পূর্বের ন্যায় সিএমএইচসহ মেডিকেল কোর এর সকল সদস্যগণ প্রথম সারির যোদ্ধা হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন। আপনাদের এই অসামান্য অবদান দেশ এবং সেনাবাহিনী গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে। করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে আমরা সর্বদা আপনাদের পাশেই আছি।
১২. আপনারা সবাই মনে রাখবেন, এ পরিস্থিতি হতে মুক্তি পেতে করোনা সংক্রান্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কোন বিকল্প নেই। নিজে নিরাপদ থাকার পাশাপাশি নিজ পরিবার এবং কর্মস্থলের সুরক্ষা নিশ্চিত করা আমাদের একান্ত দায়িত্ব। আপাতত জরুরি প্রয়োজনে ব্যতীত সকলে আমরা নিজ নিজ স্থানে অবস্থান করব। আসুন আমরা সকলে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হই যেকোন মূল্যে করোনাকে পরাজিত করব ইনশাআল্লাহ।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ‘সেনাপ্রধানের ১২ দফার ঐতিহাসিক কার্যকর দিক নির্দেশনা প্রকারান্তরে নিজের বিবেক, মূল্যবোধ, রুচিবোধ, শিক্ষা, সংস্কৃতি ও দেশপ্রেমের গভীর দর্শনের বহি:প্রকাশ। সৃজনশীল ব্যক্তিত্বের মহিমায় তিনি ভালোবাসার শক্ত বন্ধনে আবদ্ধ করেছেন দেশপ্রেমিক এই বাহিনীটির সব সদস্যকে।’
নির্দেশনার শেষপ্রান্তে সেনাপ্রধান বলেছেন, ‘আমাদের প্রিয় বাংলাদেশ করোনা মহামারী মোকাবেলার এক ক্রান্তিলগ্নে দাঁড়িয়ে আছে। দেশের একজন নাগরিক এবং সেনাবাহিনীর একজন গর্বিত সদস্য হিসেবে আমাদের সমষ্টিগত প্রতিরোধই পারে এই বিপদ হতে সবাইকে রক্ষা করতে।
আসুন পবিত্র রমজান এবং বাংলা নববর্ষের এই মাহেন্দ্রক্ষণে আমরা প্রতিজ্ঞা করি, করোনার বিরুদ্ধে চলমান এ যুদ্ধে আমাদের জয়ী হতেই হবে। শুধু প্রয়োজন মনোবল, শৃঙ্খলা আর করোনা সংক্রান্ত নির্দেশিকার পূর্ণ বাস্তবায়ন। মহান সৃষ্টিকর্তা আমাদের সকলের সহায় হউন।’
কালের আলো/এমএএএমকে