‘নতুন বছরে জঞ্জাল ধুয়ে-মুছে নিজেদের পরিশুদ্ধ করে সামনে এগিয়ে যাবো’
প্রকাশিতঃ 8:01 pm | April 13, 2021

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:
দেশবাসীকে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, পহেলা বৈশাখ আমাদের সব সঙ্কীর্ণতা, কূপমণ্ডূকতা পরিহার করে উদারনৈতিক জীবন-ব্যবস্থা গড়তে উদ্বুদ্ধ করে। আমাদের মনের ভেতরের সব ক্লেদ, জীর্ণতা দূর করে আমাদের নতুন উদ্যোমে বাঁচার অনুপ্রেরণা দেয়। আমরা যে বাঙালি, বিশ্বের বুকে এক গর্বিত জাতি, পহেলা বৈশাখের বর্ষবরণে আমাদের মধ্যে এই স্বাজাত্যবোধ এবং বাঙালিয়ানা নতুন করে প্রাণ পায়, উজ্জীবিত হয়।
তিনি বলেন, অতীতের সব জঞ্জাল-গ্লানি ধুয়ে-মুছে আমরা নিজেদের পরিশুদ্ধ করবো। দৃপ্ত পায়ে এগিয়ে যাবো সামনের দিকে। গড়বো আলোকোজ্জ্বল ভবিষ্যৎ- এই হোক এবারের নতুন বছরের শপথ।
মঙ্গলবার (এপ্রিল) জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পয়লা বৈশাখ আমাদের সব সঙ্কীর্ণতা, কুপমণ্ডুকতা পরিহার করে উদারনৈতিক জীবন-ব্যবস্থা গড়তে উদ্বুদ্ধ করে। আমাদের মনের ভিতরের সব ক্লেদ, জীর্ণতা দূর করে আমাদের নতুন উদ্যোমে বাঁচার অনুপ্রেরণা দেয়। আমরা যে বাঙালি, বিশ্বের বুকে এক গর্বিত জাতি, পয়লা বৈশাখের বর্ষবরণে আমাদের মধ্যে এই স্বাজাত্যবোধ এবং বাঙালিয়ানা নতুন করে প্রাণ পায়, উজ্জীবিত হয়।
শেখ হাসিনা বলেন, পয়লা বৈশাখের বর্ষবরণ বাঙালির সর্বজনীন উৎসব। আবহমানকাল ধরে বাংলার গ্রাম-গঞ্জে, আনাচে-কানাচে এই উৎসব পালিত হয়ে আসছে। গ্রামীণ মেলা, হালখাতা, বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলার আয়োজন ছিল বর্ষবরণের মূল অনুষঙ্গ।
‘ব্যবসায়ীরা আগের বছরের দেনা-পাওনা আদায়ের জন্য আয়োজন করতেন হালখাতা উৎসবের। গ্রামীণ পরিবারগুলো মেলা থেকে সারা বছরের জন্য প্রয়োজনীয় তৈজষপত্র কিনে রাখতেন। গৃহস্থ বাড়িতে রান্না হতো সাধ্যমতো উন্নতমানের খাবারের। ’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৬০’র দশকের শেষভাগে ঢাকায় নাগরিক পর্যায়ে ছায়ানটের উদ্যোগে সীমিত আকারে বর্ষবরণ শুরু হয়। আমাদের মহান স্বাধীনতার পর ধীরে ধীরে এই উৎসব নাগরিক জীবনে প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করে। ১৯৮০’র দশকে পয়লা বৈশাখের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বাঙালির অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক চেতনার বহিঃপ্রকাশ ঘটতে থাকে। মূলত আওয়ামী লীগসহ অন্য ধর্মনিরপেক্ষ রাজনৈতিক দল এবং সংগঠনের কর্মী-সমর্থকদের অব্যাহত প্রচেষ্টার ফলেই আজকের এই অবস্থান। কালক্রমে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান এখন শুধু আনন্দ-উল্লাসের উৎসব নয়, এটি বাঙালি সংস্কৃতির একটি শক্তিশালী ধারক-বাহক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, গত বছর করোনাভাইরাস আঘাত হানার পর আমাদের নানাবিধ বিরূপ পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হয়েছে। এই মহামারি প্রতিরোধে যেহেতু মানুষের সঙ্গনিরোধ অন্যতম উপায়, সে জন্য আমাদের এমন কিছু পদক্ষেপ করতে হয়েছে, যার ফলে মানুষের জীবন-জীবিকার ওপর প্রভাব পড়েছে। কিন্তু আমাদের সকলকেই মনে রাখতে হবে, মানুষের জীবন সর্বাগ্রে। বেঁচে থাকলে আবার সবকিছু গুছিয়ে নিতে পারবো।
গত সপ্তাহে দ্বিতীয় ঢেউ প্রবল আকার ধারণ করলে মানুষের চলাচলের ওপর আমাদের কিছু নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে হয়। আপনারা দেখেছেন, কোনোভাবেই সংক্রমণ ঠেকানো যাচ্ছে না। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে তাই আমাদের আরও কিছু কঠোর ব্যবস্থা নিতে হচ্ছে। আমি জানি, এর ফলে অনেকেরই জীবন-জীবিকায় অসুবিধা হবে। কিন্তু মনে রাখতে হবে, মানুষের জীবন সবার আগে। বেঁচে থাকলে আবার সবকিছু গুছিয়ে নিতে পারবো।
গত বছর একটানা ৬২ দিন সাধারণ ছুটির কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা এখনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দিতে পারিনি। বিদেশের সঙ্গে চলাচল স্বাভাবিক হয়নি। এই অবস্থা শুধু আমাদের দেশে নয়, বিশ্বের যেখানেই এই প্রাণঘাতী ভাইরাসের প্রকোপ বাড়ছে, সেখানেই এ ধরনের ব্যবস্থা নিতে হচ্ছে। মানুষের জীবন রক্ষার পাশাপাশি আমাদের অর্থনীতি, মানুষের জীবন-জীবিকা যাতে সম্পূর্ণরূপে ভেঙে না পড়ে সেদিকে আমরা কঠোর দৃষ্টি রাখছি। সবার সহযোগিতায় আমরা বেশ কিছু কার্যক্রম হাতে নিয়েছিলাম, যার ফলে গত বছর করোনাভাইরাস মহামারিজনিত প্রভাব আমরা সফলভাবে মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়েছি।
কালের আলো/ডিএসকে/এমএম