দু’দেশের সম্পর্ক গভীর হোক এটাই প্রত্যাশিত
প্রকাশিতঃ 10:19 am | December 18, 2020

মো. তৌহিদ হোসেন :
বাংলাদেশ ও ভারতের শীর্ষ পর্যায়ের ভার্চুয়াল শীর্ষ বৈঠকটি অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। গত মার্চে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকায় আসার কথা ছিল। কভিড-১৯ এর কারণে তিনি আসতে পারেননি। এরপর দু’দেশের শীর্ষ পর্যায়ে এ ধরনের বৈঠক হয়নি। এই বৈঠকের মাধ্যমে শীর্ষ পর্যায়ে কথা হলো। দু’দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় নানা ইস্যুতে আলোচনা হওয়া প্রয়োজন।
প্রতিবেশী দু’দেশের মধ্যে সম্পর্কের ভিত্তি মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে। মুক্তিযুদ্ধে ভারত বাংলাদেশকে সহায়তা দিয়েছিল এবং বাংলাদেশ সব সময়ই সেটাকে যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে দেখে। তখন থেকেই দু’দেশের মধ্যে বন্ধুত্বের সম্পর্ক নিবিড়। এ সম্পর্ক উত্তরোত্তর আরও গভীর হবে, এটাই প্রত্যাশিত।
যে সময়ে এই ভার্চুয়াল শীর্ষ সম্মেলন হলো, তখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে কভিড-১৯ মোকাবিলা। বিশেষ করে ভারত বাংলাদেশকে টিকা দেওয়ার যে কথা বলেছে, তা খুবই ইতিবাচক। কারণ এক্ষেত্রে ভারতের সক্ষমতা অনেক বেশি। কভিডের টিকার জন্য ভারতের সহযোগিতা পেলে বাংলাদেশ লাভবান হবে।
দু’দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের কথা আগেই বলেছি। কিন্তু দুটি বন্ধু দেশের সীমান্তে লিথ্যাল উইপন বা প্রাণঘাতী অস্ত্রের ব্যবহার কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। এবারও যেমন বলা হয়েছে, আগেও বলা হয়েছে সীমান্তে হত্যা বন্ধে কিংবা লিথ্যাল উইপেনের ব্যবহার বন্ধে নির্দেশনা দেওয়া হবে।
এর আগেও যখন উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে এ ধরনের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে, আমরা আশান্বিত হয়েছি। কিন্তু বাস্তবে সেটা প্রতিফলিত হয়নি, সীমান্ত হত্যা চলছে। আসলে নির্দেশনা হতে হবে সুনির্দিষ্ট। ‘পারতপক্ষে ব্যবহার করা হবে না’- এ ধরনের নির্দেশনা এলে সেটি সীমান্তে হত্যা বন্ধ করবে না। এ কারণেই সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা প্রয়োজন যে, আর লিথ্যাল উইপন ব্যবহার করা হবে না।
তিস্তার পানি বণ্টনের আলোচনার ক্ষেত্রেও বারবার প্রতিশ্রুতি আসে, কিন্তু ফল আসে না। আসলে এটা ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এবং কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের ভেতরে রাজনৈতিক সমঝোতারও বিষয়। এক্ষেত্রে যে জটিলতা সেটা সহসা নিরসনের কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। ফলে তিস্তা চুক্তি নিয়ে আশাবাদী হওয়ারও আশা দেখছি না।
রোহিঙ্গা সংকট নিয়েও ভারতের বক্তব্য এবং আন্তর্জাতিক ফোরামে অবস্থান কৌশলগত। ভারত রাখাইনে যে বিনিয়োগ করছে, তা স্থানীয়দের উপকারে এলেও এটা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে ভূমিকা রাখবে না। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য ভারতের সুনির্দিষ্ট অবস্থান ও পদক্ষেপ প্রত্যাশিত।
বৈঠকে দুই দেশের বাণিজ্যের ক্ষেত্রে শুল্ক্ক ও অশুল্ক্ক বাধা দূর করার বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এ নিয়ে দু’দেশের ব্যবসায়ীদের মধ্যেও আরও আলোচনা হবে। আশা করি এক্ষেত্রে সত্যিকার অর্থে আরও ভালো খবর পাওয়া যাবে।
লেখক : সাবেক পররাষ্ট্র সচিব