চালের দাম যেন না বাড়ে, কঠোর নজরদারি চলছে: খাদ্য উপদেষ্টা

প্রকাশিতঃ 5:53 pm | July 07, 2025

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক, কালের আলো:

ভরা মৌসুমেও চালের দাম বৃদ্ধি বিষয়ে সব অভিযোগ পুরোপুরি সঠিক নয় বলে দাবি করেছেন খাদ্য উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার। তিনি বলেছেন, দাম কিছুটা বেড়েছে বটে, তবে খুব বেশি নয়। বাজারে চালের দাম যেন আর না বাড়ে, সে বিষয়ে সরকারের কঠোর নজরদারি আছে।

সোমবার (৭ জুলাই) রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে খাদ্য নিরাপত্তাবিষয়ক সেমিনার শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে জবাবে এ কথা বলেন।

আগামী মাসে ওএমএস (উন্মুক্ত বাজারে বিক্রি) ও খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি চালু হলে বাজারে চালের দাম আবারও স্থিতিশীল হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন খাদ্য উপদেষ্টা।

সরকারি পর্যবেক্ষণের বাইরে দেশের খুচরা বাজারে চালের দাম হঠাৎ করেই বাড়তে শুরু করেছে। ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জুন মাসে মোটা চালের দাম কেজিতে ৭ থেকে ৮ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এখন প্রতি কেজি মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৬ থেকে ৬০ টাকায় এবং মিনিকেট বিক্রি হচ্ছে ৮২ থেকে ৮৫ টাকায়।

বিক্রেতারা জানিয়েছেন, বাজারে সরবরাহের ঘাটতি নেই। চাহিদাও বাড়েনি। পরিবহন ব্যয় বা শ্রমিক মজুরিও বাড়েনি।

ডেমরার চাল ব্যবসায়ী রাকিব বলেছেন, ঈদের পর হঠাৎ দাম বাড়তে শুরু করেছে। অথচ, গুদামে যথেষ্ট সরবরাহ আছে।

আলী ইমাম মজুমদার বলেছেন, নাগরিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। আমাদের লক্ষ্য, আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে খাদ্য উৎপাদন ও রপ্তানিতে সক্ষমতা অর্জন। আমরা যদি খাদ্যের গুণগত মান ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারি, তাহলে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশের সুযোগ বাড়বে এবং রপ্তানি আয় বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে।

তিনি জানান, জাপান সরকারের সহায়তায় একটি ঋণচুক্তির আওতায় ঢাকায় একটি আধুনিক নিরাপদ খাদ্য পরীক্ষাগার নির্মিত হচ্ছে। এটি হবে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের (বিএফএসএ) ‘জাতীয় রেফারেন্স পরীক্ষাগার’। একইসঙ্গে ঢাকায় গড়ে তোলা হবে একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও কার্যালয় ভবন। চট্টগ্রাম ও খুলনায় বিভাগীয় পর্যায়ে আরো দুটি পরীক্ষাগার ও কার্যালয় ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

সেমিনারে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত শিনইচি সাইদা এবং জাইকা (জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা) বাংলাদেশের প্রধান প্রতিনিধি তোমোহিদে ইচিগুচি।

জাপানের রাষ্ট্রদূত বলেছেন, জ্বালানি, সড়ক, সেতু, মেট্রোরেল, কৃষিসহ বিভিন্ন খাতে জাপান অনেক বছর ধরে বাংলাদেশকে সহযোগিতা করে আসছে। এখন নিরাপদ খাদ্য একটি নতুন ক্ষেত্র হিসেবে আমাদের সহযোগিতার পরিধিকে আরো বিস্তৃত করেছে। এটি অত্যন্ত আনন্দের বিষয়।

তিনি আরো বলেন, নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতকরণ কোনো একক সংস্থার কাজ নয়। এটি সমন্বিত প্রচেষ্টা, যেখানে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থার মধ্যে দায়িত্ব বিভাজন ও সমন্বয় প্রয়োজন। একক অনুমোদন ব্যবস্থা চালু হলে এ খাতে কার্যকর অগ্রগতি সম্ভব হবে।

রাষ্ট্রদূত আশা প্রকাশ করেন, বাংলাদেশ সরকার পর্যাপ্তসংখ্যক নিরাপদ খাদ্য পরিদর্শক ও পরীক্ষাগারে দক্ষ জনবল নিয়োগে দ্রুত পদক্ষেপ নেবে।

সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন খাদ্য সচিব মো. মাসুদুল হাসান। তিনি বলেন, স্বল্পমেয়াদী ও আংশিক সমাধান যথেষ্ট না। আমাদের যা প্রয়োজন, তা হলো—একটি সম্পূর্ণ আধুনিক নিরাপদ খাদ্য ব্যবস্থা। বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ (বিএফএসএ) এবং জাইকার ‘এস্টার্ক’ প্রকল্প সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সহযোগিতায় আধুনিক নিরাপদ খাদ্য ব্যবস্থা বিনির্মাণে নিরলসভাবে কাজ করছে।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের খাদ্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের পরিচালক মঞ্জুর মোর্শেদ আহমেদ।

স্বাগত বক্তব্যে বিএফএসএ চেয়ারম্যান জাকারিয়া বলেন, জাইকা আমাদের পাশে থেকে নিরাপদ খাদ্য খাতে যে নিরলস সহযোগিতা করছে, তার জন্য আমরা কৃতজ্ঞ। তাদের সহযোগিতা আমাদের সক্ষমতা বৃদ্ধির পথকে মসৃণ করেছে।

কালের আলো/এমডিএইচ