বিএনপি রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া নয়!
প্রকাশিতঃ 9:27 am | July 22, 2020

প্রভাষ আমিন :
শুক্রবার ঘুম ভেঙেছে একটি শোক সংবাদ দিয়ে। পরে নিউজটি আমি ফেসবুকে শেয়ার করে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় লিখেছিলাম, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক এমাজউদ্দিন আহমেদ আর নেই। আজ ভোরে তিনি ল্যাবএইড হাসপাতালে ইন্তেকাল করেছেন। অন্য অনেক বুদ্ধিজীবীর মতো তিনি নিরপেক্ষতার ভাণ ধরেননি। আপনি পছন্দ করতে পারেন, নাও পারেন; তিনি একটি সুস্পষ্ট রাজনৈতিক আদর্শের পক্ষে কথা বলেছেন।
তিনি বিএনপির রাজনৈতিক আদর্শের ধারক ছিলেন; কিন্তু বিএনপির জামায়াত সম্পৃক্ততা, গ্রেনেড মেরে প্রতিপক্ষকে নিশ্চিহ্ন করা বা জ্বালাও-পোড়াওয়ের বিপক্ষে ছিলেন। ড. এমাজউদ্দিনের মৃত্যু বিএনপিকে আরও দেউলিয়া করবে। রাজনীতিতে এখন আদর্শের কথা বলার লোক কমে যাচ্ছে। হয় সহমত, নয় চাপাতি। যুক্তি দিয়ে, তর্ক দিয়ে আদর্শের কথা বলার ধারণাটাই হারিয়ে যাচ্ছে। ড. এমাজউদ্দিনের বিদায় আদর্শহীনতার প্রবণতাকে আরও বেগবান করবে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে ড. এমাজউদ্দিন আহমেদের অভাব সহজে পূরণ হবে না। তাঁর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করছি এবং আত্মার চিরশান্তি কামনা করছি।’
এই স্ট্যাটাস দেয়ার পর দুই পক্ষই দেখি ক্ষিপ্ত। বাংলাদেশে দুই পক্ষ মানে আওয়ামী লীগ আর বিএনপি। আওয়ামী লীগ সমর্থকরা প্রমাণ করার চেষ্টা করলেন, ড. এমাজউদ্দিন কতটা খারাপ লোক ছিলেন। তিনি গণআদালতের বিপক্ষে ছিলেন, তিনি শহীদ পরিবারের সাথে নিষ্ঠুর আচরণ করেছেন, খালেদা জিয়ার ১৫ আগস্ট জন্মদিন উদযাপন করার পরামর্শক ছিলেন ইত্যাদি ইত্যাদি অনেক অভিযোগ। হয়তো সব অভিযোগই সত্যি। তিনি বিএনপির জাতীয়তাবাদী আদর্শে বিশ্বাসী মানুষ। মুক্তিযুদ্ধ, শহীদ পরিবারের বিরুদ্ধেই তার অবস্থান হওয়ার কথা। বরাবরই তার আদর্শিক অবস্থানের বিপক্ষে আমার অবস্থান। কিন্তু আদর্শে মিল না থাকলেই প্রবীণ কারও মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করা যাবে না, এমন কোনো কথা নেই। একজন অ্যাকাডেমিশিয়ান হিসেবেও তার অবদান স্মরণ করতে হবে।
তবে আওয়ামী লীগ সমর্থকরা তাদের দলীয় অবস্থান থেকে ড. এমাজউদ্দিনের মৃত্যুর বিষয়টি অন্যভাবে ভাবতেই পারে। একজন সাংবাদিক হিসেবে আমি নির্মোহভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. এমাজউদ্দিনকে সংক্ষিপ্তভাবে মূল্যায়নের চেষ্টা করেছি। আমি বলেছিও আপনার পছন্দ হতে পারে, নাও পারে; কিন্তু ড. এমাজউদ্দিন একটা আদর্শের কথা বলতেন।
তবে ড. এমাজউদ্দিনের মৃত্যুতে শোক জানিয়ে দেয়া আমার স্ট্যাটাসে বিএনপি সমর্থকরা রীতিমতো ঝাঁপিয়ে পড়া দেখে আমি চমকে গেছি। ড. এমাজউদ্দিনের মৃত্যুতে শোক জানিয়ে যেন আমি বিশাল অন্যায় করেছি। শুধু বিএনপি সমর্থকদেরই যেন ড. এমাজউদ্দিনের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর অধিকার আছে। স্বভাবসুলভ গালাগাল, হুমকি তো আছেই; সাথে বরাবরের মতো সরকারের দালাল, পা-চাটা, মানসিকভাবে অসুস্থ ইত্যাদি অভিযোগও শুনতে হয়েছে। কোনোপক্ষের অভিযোগ নিয়েই আমার কোনো আপত্তি নেই। তারা বিষয়টি দেখছেন দলীয় দৃষ্টিভঙ্গি থেকে। বিএনপি সমর্থকদের আপত্তির মূল পয়েন্ট হলো তাদের প্রিয় দলকে ‘দেউলিয়া’ হিসেবে অভিহিত করা। কট্টর দলীয় সমর্থকরা অনেকটাই অন্ধের মতো। নিজের দলের মন্দটা তারা দেখতেই পায় না। তাদের আবদার হলো, বিএনপির সমালোচনা করতে হলে আমি যেন সাংবাদিকতা ছেড়ে আওয়ামী লীগে যোগ দেই। আবদারটা একটু অদ্ভুতই।
কোনো দলের সমালোচনা করতে হলে অন্য দলে যোগ দিতে হবে কেন। কোনো রাজনৈতিক দলের মূল্যায়ন তো সাংবাদিকরাই সবচেয়ে ভালোভাবে করতে পারবে। দলে যোগ দিলে তো তিনি শুধু একপাশ দেখতে পাবেন। আওয়ামী লীগ সমর্থকের চোখে তো আওয়ামী লীগের সব ভালো, বিএনপির সব খারাপ। আবার বিএনপি সমর্থকের চোখে বিএনপির সব ভালো, আওয়ামী লীগের সব খারাপ। কিন্তু ব্যাপারটি তো কোনোভাবেই সম্ভব নয়। সব দলেই ভালো-মন্দ আছে। একজন পেশাদার সাংবাদিকের পক্ষেই সম্ভব, সব দলের ভালো-মন্দ দুইটাই তুলে আনা।
একজন রেগে গিয়ে প্রশ্ন করেছেন, বিএনপি দেউলিয়া হলে আওয়ামী লীগ কি আউলিয়া? প্রথম কথা হলো, অবশ্যই আওয়ামী লীগ আউলিয়া নয়। দুর্নীতি, অনিয়ম, ব্যাংক-শেয়ারবাজারে লুটপাট তো আছেই; আওয়ামী লীগের মত গণতান্ত্রিক দল গত এক যুগ ধরে বিরোধী দলের প্রতি যে অগণতান্ত্রিক আচরণ করে আসছে, তাও নিন্দনীয়। আওয়ামী লীগ বিরোধী দলের জন্য রাজপথে কোনো স্পেস রাখেনি। গুম-খুনে রীতিমত আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করেছে। নির্বাচনী ব্যবস্থাকে প্রায় প্রহসনে পরিণত করেছে। ধর্মনিরপেক্ষ আওয়ামী লীগ আঁতাত করেছে হেফাজতের সাথে। সরকারের সমালোচনার শেষ নেই। কিন্তু অধ্যাপক এমাজউদ্দিন আহমদের মৃত্যুর সংবাদের সাথে বিএনপিই প্রাসঙ্গিক, আওয়ামী লীগ নয়।
সমস্যা হলো, আপনি যখনই বিএনপিকে নিয়ে কিছু লিখবেন, তখনই বিএনপি সমর্থকরা বলতে থাকবে, আপনি কি আওয়ামী লীগের এটা নিয়ে লিখেছেন, ওটা নিয়ে লিখেছেন? যেন বিএনপির একটা সমালোচনা করতে হলে নিরপেক্ষতার স্বার্থে আওয়ামী লীগেরও একটা সমালোচনা করে নিতে হবে। কিন্তু ভাই, নিরপেক্ষতা কখনো নিক্তি মেপে হয় না। আর নিরপেক্ষতা আসলে একটা ভণ্ডামি। রোবটকে প্রোগ্রাম করে দিলে সে নিরপেক্ষ হতে পারে, মানুষ কখনো নিরপেক্ষ হতে পারে না। মানুষের বিবেক আছে, বিবেচনা বোধ আছে; সে প্রত্যেক ঘটনা বিচার করে তার অবস্থান ঠিক করবে। বিবেকবান মানুষ সত্য, ন্যায় ও ন্যায্যতার পক্ষে অবস্থান নেবে। যারা দলীয় কর্মী বা সমর্থক তাদের কথা আলাদা। একজন সাধারণ বিবেকবান মানুষ ঘটনার ন্যায্যতা বিচার করে তার অবস্থান ঠিক করবে। সেটা কখনো আওয়ামী লীগের পক্ষে যেতে পারে, কখনো বিএনপির পক্ষেও যেতে পারে।
বিএনপি সমর্থকরা সবচেয়ে বেশি ক্ষেপেছেন তাদের প্রিয় দলকে দেউলিয়া বলেছি বলে। তাদের দাবি সরকারকে বলুন একটা নিরপেক্ষ নির্বাচন দিতে। তাহলেই বোঝা যাবে কে দেউলিয়া। আমি তাদের বলেছি, এই মুহূর্তে একটা ভালো নির্বাচন হলে বিএনপির জিতে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। কিন্তু রাজনৈতিক দেউলিয়াত্ব তো নির্বাচনের জয়-পরাজয়, ভোট পাওয়া না পাওয়া বা ক্ষমতায় থাকা না থাকার ওপর নির্ভর করে না। এমনকি বিএনপি যদি আড়াইশ আসন নিয়েও সরকার গঠন করে, তাও তো তাদের দেউলিয়াত্ব যাবে না। আর বিএনপির দেউলিয়াত্ব তো শুরুই হয়েছিল ক্ষমতায় থাকার সময়।
স্বৈরাচার পতনের পর দুই দফায় ক্ষমতায় ছিল বিএনপি। দুই দফার মধ্যে তুলনামূলকভাবে প্রথম দফা ভালো ছিল। তারপরও প্রথম দফা ক্ষমতায় থাকার সময়ই ১৫ আগস্ট বেগম খালেদা জিয়ার জন্মদিন আবিষ্কার ও উদযাপন শুরু হয়েছিল। আবিষ্কার বলছি, কারণ এর আগে কখনো খালেদা জিয়ার জন্মদিন ১৫ আগস্ট, এমনটা শোনা যায়নি। ১৫ আগস্ট কেউ জন্মাতে পারবে না, এটা তো হতে পারে না। কিন্তু দেশের অন্যতম রাজনৈতিক প্রধান এবং সরকারের প্রধান নির্বাহী যখন জাতির জনকের হত্যার দিনে ঘটা করে কেক কেটে জন্মদিন পালন করেন, তখন সেটা দেউলিয়াত্ব ছাড়া আর কিছুই নয়। কেউ বলতে পারেন, বিএনপি তো শেখ মুজিবুর রহমানকে জাতির জনক মানে না। কিন্তু তারপরও শেখ মুজিবুর রহমান একজন সাবেক রাষ্ট্রপতি। আর কিছু না হোক, সাবেক রাষ্ট্রপতির হত্যার দিনে প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিন উদযাপন কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়, এমনকি সত্যি সত্যি জন্মদিন হলেও।
আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি রাজনীতির দুই ধারার দল। সব রাজনৈদিক দলের মধ্যেই আদর্শিক ভিন্নতা খাকে। তারপরও কথাবার্তা, যোগাযোগ থাকে। আজকে যে আওয়ামী লীগ-বিএনপির অবস্থান দুই মেরুতে তার প্রধান কারণ দুটি। তার একটি হলো, এই ১৫ আগস্ট জন্মদিন উদযাপন। অপরটি ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা চালিয়ে শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টা। শুধু বাংলাদেশ নয়, গোটা বিশ্বেই এমন চেষ্টার উদাহরণ খুব বেশি নেই। ক্ষমতায় থেকে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে যারা বিরোধী দলকে নিশ্চিহ্ন করতে গ্রেনেড হামলা করে তারা অবশ্যই দেউলিয়া। আজ আওয়ামী লীগ যখন টানা এক যুগ ধরে বিএনপিকে কোণঠাসা করে রাজপথ ছাড়া করে, মামলা-হামলা করে ব্যতিব্যস্ত রাখে, বিরোধী দলকে ন্যূনতম গণতান্ত্রিক স্পেস দেয় না; তখন আমরা তাদের সমালোচনা করি। কিন্তু জবাবে যখন আওয়ামী লীগ বলে, কেউ যদি আপনাকে গ্রেনেড মেরে হত্যা করতে চায়, জবাবে আপনি কী করবেন? তখন আমরা কোনো জবাব দিতে পারি না।
বিএনপি আওয়ামী লীগকে গ্রেনেড মেরে আক্ষরিক অর্থেই নিশ্চিহ্ন করতে চেয়েছিল, আর আওয়ামী লীগ বিএনপিকে রাজনৈতিকভাবে নিশ্চিহ্ন করতে চাইছে। দুটিই খারাপ। তবে তুলনা করলে আওয়ামী লীগ মন্দের ভালো। তারা অন্তত বিএনপিকে গ্রেনেড দিয়ে মারতে যায়নি। তাই বলে কেউ ভাববেন না, আমি আওয়ামী লীগের অগণতান্ত্রিক আচরণের পক্ষে যুক্তি দিচ্ছি। কোনোটাই গ্রহণযোগ্য নয়। আওয়ামী লীগ যদি ‘তুমি অধম, তাই বলিয়া আমি উত্তম হইবো না কেন’ এই তত্ত্বে বিশ্বাস করে বিএনপির সাথে আচরণ করতো, আমি খুশি হতাম। কিন্তু সুযোগ পেয়ে আওয়ামী লীগও প্রতিশোধ নিয়েছে। তবে আজ আওয়ামী লীগ-বিএনপির মাঝখানে যে অলঙ্ঘনীয় দেয়াল, তা দূর করে একটা স্বাভাবিক রাজনৈতিক সম্পর্ক ফিরিয়ে আনতে হলে বিএনপিকে তাদের অতীত কৃতকর্মের জন্য অনুশোচনা করতে হবে। অপরাধ স্বীকার করে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। আমরা দেখেছি গত কয়েক বছর ধরে ১৫ আগস্ট জন্মদিন পালন করছেন না খালেদা জিয়া। ২১ আগস্টের ব্যাপারেও এমন স্পষ্ট অবস্থান নিতে হবে। আত্মশুদ্ধি একটা কষ্টকর কিন্তু জরুরি প্রক্রিয়া।
সরকারে থাকতে তো নানা অপকর্ম করেছেই, বিরোধী দল হিসেবেও বিএনপি চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। আর এই ব্যর্থতায় বিএনপির তো ক্ষতি হয়েছেই, তারচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে আওয়ামী লীগের, তারচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে দেশের। একটা শক্তিশালী বিরোধী দল না থাকলে সরকার দুর্বল হয়। ভুল ধরার কেউ না থাকলে, সরকার বারবার ভুল করে। আমরা এখন সেই বিরোধী দলহীনতার চক্করে আছি। কেউ বলতে পারেন, তাও আপনারা বিএনপিরই দোষ দেখবেন। না, আমি সেটা বলছি না। আওয়ামী লীগ বারবার ভুল করছে বলেই, বিরোধী দলের অভাবটা আরও বেশি করে চোখে পড়ছে। বাংলাদেশে গত দুটি নির্বাচন ভালো হয়নি। জনমনে এই ধারণা প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু বিএনপি এই ধারণাকে বেশি দূর টেনে নিতে পারেনি।
বিএনপি নিয়ে কিছু লিখলেই এই দলের সমর্থকরা বলেন, ৩০ ডিসেম্বরের রাতের নির্বাচন নিয়ে আগে বলুন। আমি তাদের বলি, আপনারা আপনাদের প্রিয় দলের নেতাদের জিজ্ঞাসা করুন, দিনের ভোট রাতে হওয়ার পরও বিষয়টি নিয়ে তারা আদালত পর্যন্ত গেল না কেন। কেন তারা রাজপথে তীব্র আন্দোলন গড়ে তুললো না। কেন তারা রাতের ভোটের সংসদে যোগ দিয়ে সেই সংসদকে বৈধতা দিল। ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতার পরিবর্তনের সুযোগ না থাকলে গণআন্দোলনের মাধ্যমে তা করার সুযোগ আছে। এই ভূখণ্ডে ৬৯ এবং ৯০ সালে এই ঘটনা ঘটেছেও।
তাহলে বিএনপি তাই করুক। যদি বিএনপির জনসমর্থন বেশি থাকে, তারা সেই জনগণকে নিয় মাঠে নামুক, গণঅভ্যুত্থান করুক। মাঠে নামার কথা বললেই বিএনপি নেতারা বলেন, সরকার আমাদের মাঠে নামতে দেয় না। এরচেয়ে অসহায় এবং হাস্যকর অভিযোগ আমি জীবনে খুব বেশি শুনিনি। আওয়ামী লীগ সরকার তাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করার জন্য বিএনপিকে মাঠে নামতে দিচ্ছে না, এ কারণেই তো আন্দোলন করতে হবে। কখনোই কোনো সরকারবিরোধী দলকে আন্দোলন করার জন্য মাঠ ছেড়ে দেয় না। বিএনপি কি সরকারে থাকার সময় আওয়ামী লীগকে আন্দোলন করার অবাধ সুযোগ দিয়েছিল। ৬৯ বা ৯০ সালে কি সরকারের সমর্থন নিয়ে আন্দোলন বা অভ্যুত্থান হয়েছিল। কেউ কেউ বলতে পারেন, আওয়ামী লীগ অনেক বেশি স্বৈরাচার এবং অনেক বেশি দমন-পীড়ন করছে। তাহলে তো আন্দোলনটাও অনেক বড় হওয়ার কথা। সেটা তো হচ্ছে না। বিএনপিকে রাজপথে নামতে না দেয়া যতটা আওয়ামী লীগের সাফল্য, ততটাই বিএনপির ব্যর্থতা।
সরকারে থাকতেও বিএনপি দেউলিয়া ছিল। গত ১৪ বছর ক্ষমতার বাইরে তাদের এই দেউলিয়াত্বের ষোলকলা পূর্ণ হয়েছে। বিএনপির যে কাউকে বলেন, জনগণ কেন আপনাদের ভোট দেবে? তারা একশটা কারণ বলতে পারবে। কিন্তু সেগুলো সবগুলোই সরকারের ব্যর্থতা। বিএনপির নিজেদের কোনো অর্জন নেই। বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিএনপি এখন এতটাই অপ্রাসঙ্গিক, সাম্প্রতিক সময়ে খালেদা জিয়ার মুক্তি ছাড়া আর কোনো কারণেই দলটি সংবাদ শিরোনাম হতে পারেনি। দলটির ভাগ্য ভালো, এত ঝড়-ঝাপ্টার পরও কিছু ত্যাগী নেতাকর্মী এখনও দলটি আঁকড়ে ধরে আছেন।
বিএনপির এখন উচিত, নিয়মিত কাজ ফেলে আত্ম-অনুসন্ধানে নামা। গত তিন দশকে বিএনপি কী কী ভুল করেছে, কী কী ঠিক করেছে; তার একটা তালিকা করা। ভুলগুলো যাতে পুনরাবৃত্তি না হয়, তা নিশ্চিত করা। প্রয়োজনে ভুল স্বীকার করে অনুশোচনা করা। ভালো কাজগুলো বেশি বেশি করে করা। নেতাকর্মীদের উচিত বেপথু দলকে পথে ফিরিয়ে আনা। নেতাকর্মীদের অনুপ্রাণিত করা, চাঙা করা। কিন্তু ফেসবুক বিপ্লবীরা যদি মনে করেন, বিএনপি দেউলিয়া নয়, ঠিক পথেই আছে। তাহলে আমার কিছুই বলার নেই। বিএনপিকে দেউলিয়া বলায়, যারা ক্ষিপ্ত হয়েছেন, বিএনপি দেউলিয়া নয়, এটা বললে যদি তারা খুশি হন; আমার আপত্তি নেই। ঠিক আছে আমি বড় করে লিখে দিচ্ছি, বিএনপি রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া নয়। আপনারা খুশি তো? তাহলে এবার নাকে তেল দিয়ে ঘুমান। ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্নে আন্দোলন দেখুন, নির্বাচন দেখুন; আর ফেসবুকে বিপ্লব করুন।
লেখক: হেড অব নিউজ, এটিএননিউজ